বর্ষা আসন্ন। ইতোমধ্যে রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি। কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি স্থায়িত্ব হওয়ায় রাঙামাটিতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে সতর্কবার্তা।
জেলা প্রশাসন জানায়, আসন্ন বর্ষায় রাঙামাটিতে পাহাড় ধসসহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় শহরসহ রাঙামাটির পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতা জারি করে সচেতনতামূলক সতর্কবার্তা প্রচার করছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে তাৎক্ষণিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে।
এদিকে রাঙামাটির স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেন জেলা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এরপর ২২ মে থেকে স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) নাবিল নওরোজ বৈশাখ বলেন, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ায় রাঙামাটিতে প্রাণহানি এবং জানমালের ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরতদের মাঝে প্রশাসন আগাম সতর্কতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এ ধরনের সতর্কতামূলক কার্যক্রম চলবে। তবে বৃষ্টি দীর্ঘ মেয়াদী স্থায়ী হলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসসহ যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে তাতে যেন একটি প্রাণও ক্ষতি না হয় সেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই রাঙামাটিতে সম্ভাব্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রাক-প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, জেলায় ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তী ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড়ধসে ২ শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এদিকে জেলা শহরে পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ৩১টি স্থানের মধ্যে ভেদভেদী, শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা অন্যতম। তবু বিস্ময়কর হলো ওইসব এলাকায় জনবসতি বেড়েই চলেছে। অথচ ২০১৭ সালের পাহাড় ধসের ক্ষতচিহ্ন এখনো দৃশ্যমান রয়ে গেছে। এরপরও পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে মানুষ। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বেড়েছে পাহাড়ের ঢালে বসবাস। গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাঁচ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। শুধু শহরে ৩১টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শহরের আনাচে-কানাচে এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বহু পরিবারের মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে। জেলায় পাহাড় ধসসহ সম্ভাব্য দুর্যোগের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া আছে। জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বলে দেওয়া হয়েছে।