ফুটবলে সর্বকালের সেরা কে—এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই। এ নিয়ে বিতর্কও চলে আসছে যুগের পর যুগ। পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি নাকি রোনালদো? যুক্তি, তর্ক ও বিশ্লেষণের পর বিশ্লেষণ করেও শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তরে সর্বসম্মতিক্রমে কাউকে বেছে নেওয়ার উপায় নেই। পাল্টা যুক্তি ওঠেই।
যেমন ধরুন, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস) তাদের ওয়েবসাইটে সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে, লিওনেল মেসি যেখানে সবার ওপরে। এই তালিকা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক। পেলে–ডিয়েগো ম্যারাডোনার ভক্তরা তো চুপ করে থাকবেন না। প্রতিবাদ জানাতে পারেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সমর্থকেরাও।
সেই যুক্তি-তর্কে যাওয়ার আগে আইএফএফএইচএস সমন্ধে একটু জানাশোনারও দরকার আছে। জার্মানির কেমিস্ট ও খেলাধুলার ইতিহাসবিদ আলফ্রেড পোগে ১৯৮৪ সালে লাইপজিগে আইএফএফএইচএস প্রতিষ্ঠা করেন। অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলের পরিসংখ্যান, রেকর্ড ও ইতিহাস সংরক্ষণ করে এই সংস্থা। ফিফার সঙ্গে এই সংস্থার কোনো অধিভুক্তি নেই, তবে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ওয়েবসাইটে আইএফএফএইচএসের দেওয়া বিভিন্ন পুরস্কার ও রেকর্ডের স্বীকৃতি আছে। ২১১টির বেশি ফুটবল খেলা দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে আইএফএফএইচএসে। বার্ষিকভাবে বিভিন্ন পুরস্কারও দেয় এই সংস্থা—বিশ্বের সেরা রেফারি, ক্লাব কোচ, জাতীয় দল কোচ, গোলকিপার, প্লে–মেকার, টিম অব দ্য ইয়ার…।
আইএফএফএইচএস কীভাবে সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার বেছে নিয়েছে, সেটা অবশ্য ব্যাখ্যা করেনি। তবে যেহেতু পরিসংখ্যান নিয়েই মূলত তাদের কাজকারবার, ধারণা করা যায়, পরিসংখ্যানই এখানে প্রধান বিবেচ্য ছিল। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাও জানিয়েছে, আইএফএফএইচএস সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের এই তালিকা প্রস্তুত করেছে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ও দলীয় পরিসংখ্যান ও অর্জনের নিরিখে।
শীর্ষে থাকা মেসির দলগত শিরোপা ৪৬টি। বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন ৩৫টি, পিএসজির হয়ে তিনটি, ইন্টার মায়ামির হয়ে দুটি ও ছয়টি শিরোপা জিতেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে। এর বাইরে আছে আটটি ব্যালন ডি’অর, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু, ফিফা বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল, কোপা আমেরিকা গোল্ডেন বল…। দলীয় ও ব্যক্তিগত ট্রফি বিচারে মেসিই ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল।
দ্বিতীয় পেলের শিরোপাসংখ্যা মেসির তুলনায় বেশ কম। মার্কা ২০২২ সালে পেলের মৃত্যুর পর প্রকাশ করা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ক্যারিয়ারে ২৯টি শিরোপা জিতেছেন পেলে। তবে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ (তিনটি) কেউ জিততে পারেনি। পেলে যখন খেলতেন তখন ব্যালন ডি’অর শুধু ইউরোপিয়ানদের দেওয়া হতো। তবে ব্যালন ডি’অর যারা দেয়, সেই ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী ২০১৫ তাদের এক বিশেষ সংস্করনে জানিয়েছিল, পেলে তাঁর ক্যারিয়ারে সাতবার ব্যালন ডি’অর পেতে পারতেন।
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ও ’৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা তালিকায় তৃতীয়। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ১১টি শিরোপা জিতেছেন কিংবদন্তি। শিরোপাসংখ্যায় পিছিয়ে থেকেও তৃতীয় স্থানে ম্যারাডোনাকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্ভবত খেলাটিতে তাঁর প্রভাব। প্রায় একাই দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো, একাই নাপোলির মতো ক্লাবকে বিশ্বসেরাদের কাতারে তুলে আনা—এসব অবদানের জন্যও ম্যারাডোনা অবিস্মরণীয়।