রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে বিএনপির ২৭ দফা রুপরেখা ঘোষণা

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি ।

আজ বিকাল ৩টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ রুপরেখা ঘোষণা দেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা:

১. একটি “সংবিধান সংস্কার কমিশন” গঠন করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত সকল অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত/সংশোধন করা হবে।

২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক “Rainbow Nation” প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য একটি “National Reconciliation Commission” গঠন করা হবে।

৩. একটি “নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার” ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।

৪. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে।

৫. পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

৬. বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে “উচ্চ কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা” (Upper House of the Legislature) প্রবর্তন করা হবে। সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে

৭. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

৮. বর্তমান “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২” সংশোধন করা হবে।

৯. সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনঃগঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ডেটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি “জুডিশিয়াল কমিশন” গঠন করা হবে।

১১. একটি “প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন” গঠন করে প্রশাসন পুনঃগঠন করা হবে। ১২. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি “মিডিয়া কমিশন” গঠন করা হবে।

১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা হবে না। অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী “ন্যায়পাল (Ombudsman)” নিয়োগ করা হবে।

১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। Universal Human Rights Charter অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে।

১৫. বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি “অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন” গঠন করা হবে।

১৬. “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার” এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন।

১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। ১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে।

১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে। না এবং কোন সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে।

২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে।

২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে।

২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাঁদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।

২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে।

২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হবে।

২৫. চাহিদা-ভিত্তিক (Need-based) ও জ্ঞানভিত্তিক (Knowledge-based) শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

২৬. “সবার জন্য স্বাস্থ্য” এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘NHS” এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।

২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে।

পরবর্তীতে যথাসময়ে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব ও উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দীন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাহবুবে রহমান শামীম, বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আসাদুজ্জামান, জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।




মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হবেন শেখ হাসিনা

আগামী ২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হলেও সাধারণ যাত্রীরা এতে চলাচলের সুযোগ পাবেন উদ্বোধনের পরদিন থেকে। ‘বাঁচবে সময় বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’ এই বিশেষ উদ্যোগের সফল যাত্রায় উদ্বোধনের দিনে টিকেট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে চড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টিকেট কেটে মেট্রোরেলে চড়বেন।

এদিকে উদ্বোধনের পর থেকে প্রথমে কিছুদিন দিনে চার ঘণ্টা করে চলবে মেট্রোরেল। রোববার জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকার প্রতিনিধি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও পরামর্শকদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে এসব বিষয় আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

মেট্রোরেল প্রতিদিন সকাল ৮টায় চলাচল শুরু করলেও প্রথম দিকে চার ঘণ্টা সকাল-বিকেল না একটানা চলবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে যাত্রীর চাহিদা মাথায় রেখে এটি ঠিক করা হবে।

বৈঠকে চালু হওয়ার পর থেকে শুরুর দিকে মেট্রোরেল কীভাবে এবং কত সময় পরিচালনা করা হবে; যাত্রীদের কীভাবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।




যে কারণে আর্জেন্টিনার জয়ে কাঁদছিলেন পরীমণি

গতকাল ১৮ ডিসেম্বর রাতে টানা ১২০ মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ট্রাইবেকারে জ্বলে ওঠে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে পরাস্ত করে দখল করে নেয় বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি।

রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে এমন জয়ে আবেগী হয়ে পড়েছিলেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। অনেকেই অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। ঢালিউড অভিনেত্রী পরীমণিও তাদের একজন। মেসিদের জয়ের আনন্দে বোকার মতো কাঁদছিলেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন পরীমণি নিজেই।

বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি জেতার পর পরীমণি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি কেমন বোকার মতো এখনও কানতেছি (কাঁদছি)!’ এ সময় তিনি স্বামী শরিফুল রাজকে মেনশন করে লেখেন, ‘রাজ তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে আর্জেন্টিনা চলো।’

দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার এই জয় পরীমণির হৃদয়ে মেখে দিয়েছে প্রশান্তির ছাপ। তা বোঝা গেছে এ নায়িকার আরও একটি পোস্টে। মেসিদের জয়ের কিছুক্ষণ পরই তিনি লিখেছেন, ‘শান্তি, শান্তি, শান্তি।’

আর্জেন্টিনা দলের কঠিন সমর্থক পরীমণি। বিশেষ করে লিওনেল মেসির জন্য পাগল এ তারকা। বিশ্বকাপ শুরুর দিন থেকেই উন্মাদনায় মেতে আছেন তিনি। প্রিয় দলের খেলার সময় নেট মাধ্যমে আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে জড়িয়ে তোলা ছবি প্রকাশ করেছেন। আবার কখনও কখনও মেসিকে পাঠিয়েছেন উড়ন্ত চুমু। এবার প্রিয় ফুটবল দলের চূড়ান্ত জয়ে অশ্রুসিক্ত হলেন এ নায়িকা।




ভক্তদের যে সুখবর দিলেন মেসি

কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল পা ফেলার আগ থেকেই জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিল ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসি ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছে ২২তম আসর খেলেই। এই তারকা কিছু কিছু গণমাধ্যমে তার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে সব খবর উড়িয়ে দিয়ে জানালেন, এখনই অবসর নিচ্ছেন না তিনি। তিনি জানান, আরো কয়েকবছর আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলবেন।

মেসির বয়স সবে ৩৫ চলে। কিন্তু তার দুর্দান্ত ফর্ম আর খেলা দেখে বলার উপায় নেই তার বয়সের ছাপ পড়েছে। এই সাবেক বার্সা তারকা বিশ্বকাপে করেছেন ৭ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ৩ গোল। জিতেছেন গোল্ডেন বল। বিশ্বকাপের ফাইনালে জয় পেয়ে গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, আমি চেয়েছিলাম বিশ্বকাপ শেষেই অবসর নিতে। বিশ্বকাপ থেকে যা পেয়েছে, এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতেও পারি না। ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে আমার যে অর্জন তা যথেষ্ট।

তিনি আরও বলেন, আমি ফুটবলকে ভালবাসি। আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলা উপভোগ করি। আমার ইচ্ছা, আমি চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা চালিয়ে যাব।




একনজরে স্বপ্নযাত্রায় মেসির যত রেকর্ড

অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ৩৬ বছরের আক্ষেপ মিটিয়ে অবশেষে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। গোটা ফুটবল বিশ্বকে উল্লাসে মাতিয়ে চির অধরা সোনালি ট্রফিটা শেষ পর্যন্ত নিজেদের করে নিয়েছে আলবিসেলেস্তারা।

বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা। তবে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে সেই আশা ফিকে হতে শুরু করেছিল। তবে দারুণ প্রত্যাবর্তনে এক লিওনেল মেসির হাত ধরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফাইনালে উঠে আসে লাতিন আমেরিকার দলটি।

আর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে রোববারের সেই ফাইনালে রোমাঞ্চকর এক লড়াই দেখে গোটা ফুটবল বিশ্ব। যে লড়াইয়ে নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ সমতার পর ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা।

দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জাদুকরী এক পারফরম্যান্সে এবারের বিশ্বকাপে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দ্যুতি ছড়িয়েছেন মেসি। নিজেকে বসিয়েছেন রেকর্ডবুকেও। দেখে নেওয়া যাক, কাতার বিশ্বকাপে মেসির ঝুলিতে কি কি রেকর্ড ও অর্জন এসে ধরা দিল।

১. ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করেছেন মেসি।

২. বিশ্বকাপের মঞ্চে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়ে মেসি খেলেছেন রেকর্ড ১৯টি ম্যাচ। এই তালিকায় পরের দুইটি স্থানে আছেন মেক্সিকোর রাফা মার্কেস (১৭) ও আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা (১৬)।

৩. লুসাইলের ফাইনাল দিয়ে বিশ্বকাপে মোট ২৬টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি। যার মধ্য দিয়ে ভেঙেছেন জার্মানির লুথার ম্যাথেউসের ২৫টি ম্যাচ খেলার রেকর্ড।

৪. এবারের বিশ্বকাপে ৭ গোল করে আকাশী-সাদা জার্সিতে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোল স্কোরার এখন মেসি। যে তালিকায় পরের অবস্থানে আছেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (১০), ম্যারাডোনা (৮), গিয়ের্মো স্তাবিল (৮), মারিও কেম্পেস (৬) ও গনজালো হিগুয়েন (৫)।

৫. একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ভিন্ন পাঁচটি আসরে অ্যাসিস্টের রেকর্ড গড়েছেন মেসি। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে, পোল্যান্ডের জেগোস লাতো, আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ও ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যামের অ্যাসিস্ট আছে মোটে তিনটি আসরে।

৬. বিশ্বকাপের মঞ্চে মেসির প্রথম ও সবশেষ গোলের মাঝে ব্যবধানটা ১৬ বছর ১৮৪ দিনের। যা ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ। পরের অবস্থানে আছেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। যে সময়টা ১৬ বছর ১৬০ দিনের।

৭. বিশ্বকাপে ২ হাজার ৩১৪ মিনিট মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মেসি। ভেঙেছেন ইতালির পাওলো মালদিনির আগের ২ হাজার ২১৭ মিনিট খেলার রেকর্ড।

৮. বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১১ বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মেসি। কাতারে সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই পান এই স্বীকৃতি। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে এই পুরস্কারটি দেওয়া শুরু করে ফিফা।

৯. ১৯৬৬ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে নিয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ভিন্ন তিনটি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টের ডাবল মেসির। প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভিন্ন চারটি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টের অনন্য অর্জনও লা পুলগা’র।

১০. বিশ্বকাপে মেসির জয় ১৬টি ম্যাচে। অবশ্য এলএমটেন এর চেয়ে বেশি জয় আছে কেবল জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার। যার জয় ১৭টি ম্যাচে।




খোলা ট্রাকে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উল্লাস : আটক ৯০ শিশু-কিশোর

দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। চুয়াডাঙ্গার অলি-গলিতে গ্রামগঞ্জে-শহরে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা আনন্দ মিছিল ও মোটরসাইকেলের শো ডাউন বের করে। এ সময় আলমডাঙ্গা কয়রা বাজার থেকে একাটি খোলা ট্রাকে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে প্রায় ৯০ শিশু-কিশোর আর্জেন্টিনা সমর্থক। পরে পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শহর এলাকায় মাথাভাঙ্গা ব্রিজের ওপর থেকে এই ৯০ শিশু-কিশোর আর্জেন্টিনা সমর্থককে আটক করে পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহবুবুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গত রাতে আর্জেন্টিনার জয়ে ৯০ শিশু-কিশোর এক খোলা ট্রাকে করে আলমডাঙ্গা কয়রা বাজার থেকে আনন্দ মিছিল বের করে।

এসময় তাদের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। ওই ট্রাকের চালকও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ওই ট্রাকের চালকসহ ট্রাকে থাকা ৯০ শিশু ‍কিশোরকে আটক করে থানায় আনা হয়। এরপর রাতেই ফোন দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় ওই শিশু-কিশোরদের দেওয়া হয়েছে।

তবে ট্রাকটি জব্দসহ চালককে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। ট্রাকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবরতী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।




আর্জেন্টিনার শেষের নায়ক মার্টিনেজ

থ্রিলার ম্যাচ বলতে যা বোঝায়, তার সব কিছুই ছিল কাতার বিশ্বকাপে লুসাইলের ফাইনাল ম্যাচে। ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থাকায় অনেকেই আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় দেখে ফেলেছিলেন।

কিন্তু এক মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। ফলে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলের সমতায় শেষ হয়।

অতিরিক্ত সময়ে এসে ১০৮তম মিনিটে মেসির দুর্দান্ত এক গোলে আবারও এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট দুয়েক আগে আরেকবার গোল করে নিজের হ্যাট্টিক পূরণ করে আবারও সমতায় ফেরে ফ্রান্স। কিন্তু টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ানোর পর জয়ের দেখা পেল লে আলবিসেলেস্তেরা।

কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতে নেয় আকাশি নীল শিবির। সেখানেই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর নায়কে পরিণত হলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পেনাল্টি শুটআউটে কিংসলে কোম্যানের পেনাল্টির শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসেন মার্তিনেজ। এরপর অরিলিয়েন চুয়ামেনি যে শটটি নিয়েছিলেন মার্টিনেজকে ঠেকানোর জন্য সেটি হয়ে গেলো মিস। তাতেই আর্জেন্টিনার জয়ের শেষ মুহূর্তের নায়কে পরিণত হলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।




ম্যাচ হারলেও গোল্ডেন বুট এমবাপ্পের

কাতার বিশ্বকাপের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। দল হারলেও কিলিয়ান এমবাপ্পে ফাইনালে হ্যাট্রিকসহ টুর্নামেন্টে মোট ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছেন। ম্যাচে মেসি ৭ গোল করেও এমবাপ্পের কাছে গোল্ডেন বুট হারাতে হয়েছে।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসি ও এমবাপ্পে দু’জনই ৫ গোল নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন। ২৩ মিনিটে ফ্রান্সের জালে বল জড়ানোর মধ্য দিয়ে মেসির গোল ৬ এ দাঁড়ায়।

দ্বিতীয়ার্ধে কম সময়ের মধ্যে জোড়া গোল করেন এমবাপ্পে।

তার গোল সংখ্যা দাঁড়ায় ৭টিতে। খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে সেই সময়ে মেসি আরো একটি গোল করেন। এর মধ্য দিয়ে তার গোল সংখ্যা ৭ হয়। এরপর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অংশে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন এমবাপ্পে। তার গোল দাঁড়ায় ৮টিতে। এর মধ্য দিয়েই তার গোল্ডেন বুট নিশ্চিত হয়ে যায়।




বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল লিওনেল মেসির

১৯৮৬ থেকে ২০২২। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে পেরিয়ে গেছে ৩৬টি বছর। এর মাঝে স্বাদ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা। এমন হিসেব-নিকেশ পুঁজি করেই আয়োজক দেশ কাতারে এবার পা রেখেছিল লিওনেল মেসির দল।

তবে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে অঘটনের জন্ম দেয় লাতিন আমেরিকার দেশটি। পরক্ষনেই সেই প্রেক্ষাপট পাল্টে বিশ্বকাপে নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করে লিওনেল স্ক্যালোনির দল। যার মূল কারিগর দলটির প্রাণভ্রোমরা লিওনেল মেসি। তার হাত ধরেই এবারের বিশ্বকাপ মঞ্চের ফাইনালে জিতেছে আলবিসেলেস্তারা।

চলতি কাতার বিশ্বকাপে মাঠ ও মাঠের বাইরে এক অন্য রকম মেসিকে দেখেছে বিশ্ব। এবারের বিশ্বকাপে মেসির পা থেকে এসেছে ৭টি গোল, করিয়েছেন তিনটি। আর্জেন্টিনা দলের যখনই তাকে প্রয়োজন হয়েছে, তখনই জ্বলে উঠেছেন এই তারকা। নকআউট পর্বের তিনটি ম্যাচেই পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। সব মিলিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন চার ম্যাচে। অপরদিকে এই তারকা বিশ্বকাপের ফাইনালেও করেছেন ২টি গোল।




তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

ফুটবল বিশ্বের সকল ট্রফিতে নিজের নাম লিখিয়েছেন রোজারিও থেকে উঠে আসা ৩৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার। শুধুই অধরা ছিল সোনালি সেই বিশ্বকাপ শিরোপাটি। আজ কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে নাটকীয় লড়াইয়ে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা।

বিস্তারিত আসছে…