থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সরকারি সফর শেষে ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোমবার সকালে (স্থানীয় সময়) ব্যাংকক ত্যাগ করেন।

শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উভয় সফরের অংশ হিসেবে ২৪ এপ্রিল বিকেলে ব্যাংকক পৌঁছেন।

শেখ হাসিনা ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তাকে ১৯ বার তোপধ্বনি ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।




প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের টেন্ডার জালিয়াতি, ২ আসামি রিমান্ডে

প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের টেন্ডার জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষতিসাধনের মামলায় মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি: এর দুই কর্মচারীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন- মো. রবিউল করিম (৪৫) ও শান্তনু কুমার দাশ (৪৬)।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে গত ২৪ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) বিলাল আল আজাদের করা আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ্ দিবা ছন্দার আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৪ এপ্রিল আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামি পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসাথে রিমান্ড শুনানির জন্য ২৯ এপ্রিল ধার্য করেন।

আদালতে গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির (মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি:) চাকরির বিধি অনুযায়ী চাকরি করাকালীন কোন কর্মচারী সমজাতীয় পণ্যের ব্যবসা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটি জাপানি কোম্পানি Fuji Film এবং Shimadzu এর একক পরিবেশক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছে। ১ নং আসামি তথা মো. রবিউল করিমকে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয়, মহাদপ্তরে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। গত ১ এপ্রিল প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে কোম্পানি জানতে পারে যে, ১ নং আসামি কোম্পানিতে কর্মরত থাকাবস্থায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধভাবে এবং সরকারি সংস্থার নিকট তথ্য গোপন করে প্রতারণা ও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য অপর একটি প্রতিষ্ঠান দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। এবং সেই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং ব্যবস্থাপনার অংশীদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও তিনি প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনাল নামীয় অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে কোম্পানি জানতে পারে যে ২নং আসামি তথা শান্তনু কুমার দাশ আসামি রবিউলের ব্যবসায়ী অংশীদার হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে এমন বেআইনি কাজ করছে। আসামি রবিউল কোম্পানির লেটার হেড জাল করে জাল স্বাক্ষর করে প্রতারণামূলকভাবে গত ১৩ এপ্রিল প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর পত্র ইস্যু করে এবং উল্লেখ করেন তিনি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে আছেন।

তথ্য গোপন করে ১ নং আসামি তার ব্যক্তিগত এবং দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামীয় কোম্পানি মেডি গ্রাফিক কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং আসামিরা বিভিন্ন নামে বেনামে অনেক সম্পত্তি অর্জন করেন। যদিও তারা সামান্য বেতনে কোম্পানিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অবৈধ অর্জনের মাধ্যমে আসামি রবিউল ঢাকার মধ্যে বিলাসবহুল ৪ টি ফ্ল্যাট, রংপুরে বাগান বাড়ি, নাটোর ৫০ বিঘা জমির মালিক হন। আসামিদের কাছে মালামাল বিক্রয়ের হিসাব চাইলে তারা হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়। আসামি শান্তনু বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ ও বেআইনিভাবে কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ২টি প্লট, গাড়ি ও ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা নামে-বেনামে জমা রাখে।

আসামিরা দি ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল এর নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. থেকে সম্পূর্ণ খরচ দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করত। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তথ্য গোপন করে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. এর প্রায় বিশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এবং ব্যবসায়িক প্রায় ত্রিশ কোটি ক্ষতিসাধন করে।

এ ঘটনায় মেডি গ্রাফিকের এডমিন অফিসার শেখ জাকির হোসেন বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার উদ্দেশ্য জালজালিয়াতি, নকল দলিল ব্যবহার, কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।




মঙ্গলবার ২৫ জেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) খুলনা, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলা, ঢাকা বিভাগের ৬ জেলা, রংপুরে ২ জেলা এবং বরিশালের এক জেলাসহ মোট ২৫ জেলার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের এ তথ্য জানিয়েছেন।

আবুল খায়ের জানান, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলার, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলার এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামীকাল (৩০ এপ্রিল) বন্ধ থাকবে।

খুলনা বিভাগের জেলাগুলো হলো— যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, খুলনা জেলা। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো হলো— রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট।

এদিকে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদ্রাসার ক্লাস আগামী ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে যেসব স্কুলে এসির ব্যবস্থা আছে বা পরীক্ষা চলমান আছে সেসব স্কুলের জন্য এবং ও লেভেল, এ লেভেল পরীক্ষা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না বলে আদেশে বলা হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করলেও মাধ্যমিক, কারগরি, মাদ্রসা ও কলেজ পর্যায়ে শুধু মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের এটা নিয়ে মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অতিরিক্ত সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা বলছে, কিন্তু বুধবার ১ মে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সরকারি ছুটি। মঙ্গলবার বন্ধ তার সঙ্গে বুধবার সরকারি ছুটি। দুই দিলে আবহাওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। এজন্য টানা বৃহস্পতিবার বন্ধ ঘোষণা না করে কৌশলে একদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে আবহওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি হলে বৃহস্পতিবার থেকে স্কুল খুলে দেওয়া হবে। আর টানা বন্ধ ঘোষণা করলে বা ছুটি বাতিল করলে এটা নিয়ে সমালোচনা বেশি হবে।

গতকাল (রোববার) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক বার্তায় জানানো হয়েছিল, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে সেসব প্রতিষ্ঠান চাইলে খোলা রাখতে পারবে।

এর আগে রমজান, ঈদুল ফিতর ও তীব্র তাপদাহের কারণে সাতদিনসহ মোট ১ মাস ৩ দিনের ছুটি শেষে রোববার খুলে দেশের সব স্তুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেশের অনেক জায়গায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক আহত হওয়ায় রোববার মাধ্যমিক স্কূল, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।




বিএনপির ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নজির নেই: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন মানেনি।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সকালে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?

তিনি আরও বলেন, তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে। ৫০১ জনের জাম্বুজেট মার্কা কমিটি তাদের। কাজেই যাদের নিজেদের দলের ভেতরেই গণতন্ত্র নেই, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে- এ আশা আমরা করি না।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদ খোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।




আ’লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক কাল

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সন্ধ্যা ৭টায় বৈঠক শুরু হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-কোন্দল বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বিশেষ করে দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের স্বজনকে প্রার্থী করা এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়টিও থাকবে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের কৌশল নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে বৈঠকে।

এ ছাড়া দলের অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের পাশাপাশি সর্বশেষ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় ও দলীয় বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচিও চূড়ান্ত করা হবে বৈঠকে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

 




‘কথা না শোনা’ মন্ত্রী-এমপির কপাল পুড়ছে

নির্দেশনা আমলে না নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে স্বজন প্রার্থী হওয়ায় কপাল পুড়তে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ও মন্ত্রীর। সাংগঠনিক শাস্তির খড়্গ নেমে আসছে তাদের ওপর। কেড়ে নেওয়া হতে পারে দলীয় পদ-পদবি। এমনকি আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা দলের মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যে কোনো সময় মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন দলের কড়া বার্তা কানে না তোলা মন্ত্রীরা।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন এমপির স্বজন দলের নির্দেশ না মেনে উপজেলা নির্বাচনে লড়ছেন। তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে সে কথায় চিড়ে ভেজেনি! এক এমপিও তাদের স্বজনকে ভোটের মাঠ থেকে তুলে নেননি। এ নিয়ে দলের ভেতরেই দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।

এ পরিস্থিতিতে স্বজনকে প্রার্থী করানো মন্ত্রী ও দলীয় এমপির তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী ও এমপির স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করেন দলের আট সাংগঠনিক সম্পাদক।

এ তালিকায় থাকা মন্ত্রী ও এমপির বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনার কথা রয়েছে বলে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা সমকালকে জানিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। অভিযুক্ত এমপির কয়েকজন, যারা দলের কার্যনির্বাহী সংসদে আছেন, তারাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। তাদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবু মন্ত্রীসহ দলের কয়েকজন এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। দলের নির্দেশে শুধু ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক এবং নাটোরের সিংড়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী, সফিকুল ইসলাম ও ভাতিজা আলী আফসার রানা, নীলফামারীর ডিমলায় আফতাব উদ্দিন সরকার এমপির চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক সরকার ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল, সোনাতলায় এমপির ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন, পাবনার বেড়ায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাই আবদুল বাতেন ও ভাতিজা আবুল কালাম সবুজ, কুষ্টিয়া সদরে মাহবুবউল-আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আলী আজগর টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর বাবু, পিরোজপুরের নাজিরপুরে শ ম রেজাউল করিম এমপির ভাই এস এম নুর ই আলম সিদ্দিকী, মাদারীপুর সদরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান ও চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান, নরসিংদীর পলাশে ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপির ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী, কক্সবাজারের মহেশখালীতে আশেক উল্লাহ রফিক এমপির চাচাতো ভাইয়ের ছেলে হাবিব উল্লাহ।

এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলাম, লাকসামে মন্ত্রীর শ্যালক মহব্বত আলী এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক এমপির ভাই সালাম মল্লিক।

অবশ্য এ প্রার্থীদের কেউ কেউ মন্ত্রী ও দলের এমপির স্বজন হয়েও ছাড় পাবেন। দলের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সমকালকে জানান, মন্ত্রী ও দলের এমপির স্বজনের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। আর স্বজন বলতে মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সহোদর ভাইবোন, ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকেই বোঝানো হয়েছে। অন্য সম্পর্কের স্বজনের বেলায় দলের নির্দেশ কার্যকর হবে না। আর গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা মন্ত্রী এবং দলের এমপির স্বজন হলেও তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সাংগঠনিক বিধান প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

তবে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যেসব মন্ত্রী ও এমপির স্বজন নির্বাচনে রয়ে গেছেন, তাদের নিয়ে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের। এতে কেউ সাড়া দেননি। এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, সময়মতো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও এমপির বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেন, দলের নির্দেশ না মানায় বহিষ্কারের নিয়ম রয়েছে। তবে সংসদের সদস্যপদ হারাতে পারেন বলে এমপিদের দল থেকে বহিষ্কার করতে দল চাইবে না। তবে নানাভাবেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দলের সংশ্লিষ্ট এমপি ও মন্ত্রীকে তিরষ্কার করার পাশাপাশি দলীয় পদ-পদবি কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে জোর আলোচনা রয়েছে। এমনকি সাংগঠনিক যোগ্যতা থাকার পরও তারা নতুন করে দলের পদ-পদবি নাও পেতে পারেন। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়াটা তাদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আর অভিযুক্ত মন্ত্রী যে কোনো সময়েই মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন। সেই সঙ্গে তিনবার বিজয়ী এমপির মধ্যে যাদের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কমে আসতে পারে। অবশ্য এসব বিষয়ে এখনই দলের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে না।

এদিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, অভিযুক্ত মন্ত্রী এবং দলীয় এমপিকে শোকজ করা হতে পারে।




সিম্প্যাথি কার্ড’ খেলার অপচেষ্টা করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাসী দল বিএনপি নেতারা নিজেদের অত্যাচারিত-নির্যাতিত দেখিয়ে ‘সিম্প্যাথি কার্ড’ খেলার অপচেষ্টা করছেন। জনকল্যাণের রাজনীতি বাদ দিয়ে এ ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করায় বিএনপি দিনে দিনে সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বিবৃতিকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে গণরাজনীতিতে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করতে পারছে না। তাই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমে একই গীত গেয়ে চলেছেন; প্রতিনিয়ত অত্যাচার-নির্যাতনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন গ্রেপ্তার অবতারণা করছেন। জনগণের জন্য রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি দেওয়ার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এই অপকৌশল অবলম্বন করছেন তারা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট একটি রাজনৈতিক দল। দলটির নেতারা টিকে থাকার জন্য সর্বদা মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে রাজনীতিতে কৃত্রিম সংকট তৈরির অপচেষ্টা চালান। তাদের বোঝা উচিত, বিরোধী দল নয়; বরং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কাজ করতে হয়। সুতরাং নিজেদের নেতাকর্মীর রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত রাখাটাই বিএনপির জন্য শ্রেয় হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূলনীতি। আওয়ামী লীগ সবসময় শাসন-শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগের হাতেই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত।

 




হ্যাকিং যখন পেশা

হ্যাকিং মানেই যেন খারাপ কিছু। তবে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভালো কাজও হয়ে থাকে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান হ্যাকারদের কাজেও লাগিয়ে থাকে। চাইলে হ্যাকিংকে পেশা হিসেবেও নেওয়া যায়। জানাচ্ছেন তামজীদ রহমান লিও
হ্যাকার। শব্দটি শুনলে একটি নেতিবাচক ভাব উঠে আসে অনেকের মনে। ইন্টারনেট জগতের ত্রাস যেন এই হ্যাকার। সেই ১৯৬০ সালের দিকে হ্যাকিং শব্দটি ব্যবহৃত হতো শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের মধ্যে। ‘হ্যাকিং’ বলতে সে সময় বোঝানো হতো কোনো সিস্টেম বা মেশিনকে কোনো উপায়ে বেশি কার্যকর করে তোলাকে। তবে এখন বেশির ভাগ মানুষই হ্যাকিং বলতে বোঝে ইন্টারনেট জগতে কোনো কিছুর ক্ষতিসাধনকে। আসলে সাইবার ওয়ার্ল্ডের শুধু খারাপ কাজগুলোকেই হ্যাকিং বলে না, এটির যেমন নেতিবাচক দিক আছে, তেমনি আছে ইতিবাচক দিকও। যাঁরা ভালো উদ্দেশ্যে হ্যাকিং করেন, তাঁদের বলা হয় ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’, আর যাঁরা ক্ষতি করার জন্য হ্যাকিং করে থাকেন, তাঁদের বলা হয় ‘আনইথিক্যাল হ্যাকার’। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিশ্বে ইথিক্যাল হ্যাকারের চেয়ে আনইথিক্যাল হ্যাকারের সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ শখের বশে হ্যাকিং চর্চা করতে গিয়ে অনেক তরুণই সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবছর শুধু এই অপরাধের শিকার হয়ে বহু প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় সব নথি। অপরাধের মাত্রা বেশি হওয়ায় একবার ধরা পড়লে বাকি জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এসব তরুণ হ্যাকারের।

কিন্তু বৈধ হ্যাকিং বা ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যে ভালো অঙ্কের অর্থ উপার্জন করাও সম্ভব তা অনেকেরই অজানা।

ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে চাকরি

প্রযুক্তি বিশ্বে এখন সাইবার আক্রমণের পরিমাণ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ছোট প্রতিষ্ঠান তো বটেই, নামকরা বড় প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও বাদ যাচ্ছে না সাইবার আক্রমণ থেকে। নাসা, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, এইচবিও, এনএসএ, উবার, ইকুয়াফ্যাক্স, অ্যাকসেঞ্চারের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া একাধিক র‌্যানসমওয়ারও ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দেশে। এসব থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখতে বিশ্বের বড় বড় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইথিক্যাল হ্যাকার বা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিচ্ছে। গ্লোবাল নলেজের রিপোর্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বে আইটি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতনধারী হলো ইথিক্যাল হ্যাকার বা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশেও ইথিক্যাল হ্যাকার বা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে।

বাগ বাউন্টি

বাগ বাউন্টি এমন একটি প্রগ্রাম, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুর্বলতা খুঁজে দেওয়ার বিনিময়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা বিশ্বের স্বাধীন সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের পুরস্কার প্রদান করে থাকে। বিভিন্ন ছোট প্রতিষ্ঠান তো আছেই; পাশাপাশি ফেসবুক, মাইক্রোসফট, গুগল, নাসা, ইনটেল, উবার, নেটফ্লিক্স, এইচপির মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যন্ত তাদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য বাগ বাউন্টি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভরশীল। নিরাপত্তা ত্রুটি বা বাগের ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানগুলো উপহারের পাশাপাশি প্রতি রিপোর্টে ন্যূনতম ৫০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাউন্টি দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাগ রিপোর্টারকে কিছু পদ্ধতি বা নিয়ম-কানুন মেনে বাগ রিপোর্ট জমা দিতে হয় এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর এসব নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করলে বা অনৈতিক কিছু করলে তা বাউন্টির জন্য উপযুক্ত হয় না।

বাউন্টি প্রদানের কারণ
হ্যাকিং শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শেখা যায় না, এটি একটি শিল্পের মতো। সম্পূর্ণ দক্ষতা, চিন্তাশক্তি এবং সৃজনশীলতার ওপর একজন হ্যাকার কতটা শক্তিশালী তা নির্ভর করে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান বেতনধারী ইথিক্যাল হ্যাকার রাখলেও সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতে পারে না। বিশ্বের সব স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব সাইবার নিরাপত্তা এবং ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম থাকে। এর পরও সাইবার দুনিয়ায় একটি বিষয় প্রচলিত আছে যে কোনো সিস্টেমই শতভাগ নিরাপদ নয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু তাদের নিজস্ব দলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের আমন্ত্রণ জানায় তাদের সাইবার নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

বাগ বাউন্টির প্ল্যাটফর্ম

বাউন্টি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ওয়েবসাইট ছাড়াও বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হ্যাকারদের বাউন্টি দিয়ে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে তারা তাদের চাহিদাগুলো জানিয়ে দেয়, পাশাপাশি কোন ধরনের বাগের জন্য বাউন্টি হিসেবে কত ডলার দেবে, তারও একটি তালিকা দিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, কোন ধরনের বাগগুলো বাউন্টির আওতায় পড়বে না, সে ব্যাপারেও পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া থাকে। হ্যাকারদের কাছে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো হলো :
HackerOne, Bugcrowd, Synack, Detectify, Cobalt, Open Bug Bounty, Zerocopter, YesWeHack, HackenProof, Vulnerability Lab, FireBounty, BugBounty Japan, Antihack, Intigriti, SafeHats, RedStorm, Cyber Army, Yogosha|
এ বছরের সেরা বাগ বাউন্টি প্রগ্রাম

মাইক্রোসফট

মাইক্রোসফট তাদের বাগ বাউন্টি প্রগ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। তারা শুধু জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বাগগুলোর জন্য বাউন্টি প্রদান করে থাকে। এই প্রগ্রামে তারা সর্বনিম্ন ১৫ হাজার ডলার থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত বাউন্টি দিয়ে থাকে। বাগ বাউন্টি প্রগ্রামগুলোতে মাইক্রোসফটই অন্য সবার চেয়ে বেশি বাউন্টি দিয়ে থাকে।

অ্যাপল

অ্যাপল যখন প্রথম তাদের বাগ বাউন্টি প্রগ্রাম চালু করল, তখন তারা মাত্র ২৪ জন সিকিউরিটি রিসার্চারকে এই প্রগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল। পরে অবশ্য সবার জন্য নিজেদের বাউন্টি প্রগ্রাম উন্মুক্ত করে দেয় অ্যাপল। বাউন্টি প্রদানের ক্ষেত্রে অ্যাপলের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্ক না থাকলেও তারা দুই লাখ ডলার পর্যন্ত বাউন্টি প্রদান করেছে।

ফেসবুক

ফেসবুকের বাগ বাউন্টি প্রগ্রামের মাধ্যমে সিকিউরিটি রিসার্চাররা ইনস্টাগ্রাম, অ্যাটলাস এবং হোয়াটস অ্যাপের নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতাগুলো রিপোর্ট করতে পারবেন। তাঁদের ন্যূনতম বাউন্টি ৫০০ ডলার হলেও আকর্ষণীয় বিষয় হলো, তাঁদের কোনো সর্বোচ্চ বাউন্টি সীমাবদ্ধতা নেই। বাগের ধরনের ওপর ভিত্তি করে তারা যেকোনো অঙ্কের বাউন্টি দিতে রাজি।

গুগল

গুগলের বাউন্টি প্রগ্রামের আওতায় ব্লগার এবং ইউটিউবও রয়েছে। এরা শুধু পাঁচ ধরনের বাগের ওপর বাউন্টি দিয়ে থাকে। গুগল সর্বনিম্ন ৩০০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ডলার পর্যন্ত বাউন্টি দিয়ে থাকে।

ইয়াহু
ইয়াহু বারবার হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার কারণে তাদের বাগ বাউন্টি প্রগ্রাম পরিচালনা করার জন্য আলাদা একটি দলই রেখে দিয়েছে। সিকিউরিটি রিসার্চারদের পাঠানো বাগ রিপোর্টগুলো ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং এই বাগগুলো সর্বোচ্চ কতটুকু ক্ষতি সাধন করতে পারে, তা অনুধাবন করাই এই দলের মূল কাজ। ইয়াহুর বাউন্টি প্রগ্রামের ক্ষেত্রে ন্যূনতম কোনো পরিমাণ নেই, তবে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত তারা বাউন্টি দিয়ে থাকে। আনন্দের বিষয় এই যে বাংলাদেশের একজন সিকিউরিটি রিসার্চারও ইয়াহুর খুব গুরুত্বপূর্ণ বাগ ধরে দেওয়ার জন্য তাদের সর্বোচ্চ বাউন্টি পেয়েছেন।

উবার

জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবার তাদের ব্যবহারকারী এবং চাকরিজীবীদের তথ্যের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বাউন্টি প্রগ্রাম চালু করেছে। তাদের সর্বনিম্ন বাউন্টির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক না থাকলেও সর্বোচ্চ তারা ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাউন্টি প্রদান করে।

অ্যাভাস্ট
অ্যান্টি ভাইরাস কম্পানি অ্যাভাস্ট বিভিন্ন বিভাগে নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতার জন্য সিকিউরিটি রিসার্চারদের বাউন্টি দিয়ে থাকে। ন্যূনতম ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাউন্টি তাদের প্রগ্রামের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটেই তারা এই বাউন্টি প্রগ্রাম পরিচালনা করে।
টুইটার
টুইটার তাদের সাইবার নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সর্বনিম্ন ১৪০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত প্রদান করে থাকে। বাগ বাউন্টির জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হ্যাকারওয়ানের মাধ্যমে নিজেদের এই বাউন্টি প্রগ্রাম পরিচালনা করে থাকে।




লোভনীয় অফার, অনলাইনে সক্রিয় প্রতারক চক্র

ঘরে বসে বাড়তি আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডিজিটাল প্রতরণায় সক্রিয় হয়েছে বেশ কিছু চক্র। অনলাইনে আয়ের কথা বলে যারা মূলত গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এদের তৎপরতা বেড়েছে। অপরাধী সনাক্তে সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে শক্তিশালী করছে পুলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন প্রতরণার কবল থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

আপনি নির্বাচিত হয়েছেন, ঘরে বসে দৈনিক দেড় থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করুন! কিংবা কোনো বিদেশী ফোন করে লোভনীয় বেতনে কাজের অফার দেন। সম্প্রতি এমন ম্যাসেজ বা ফোন কল পাচ্ছেন অনেকে। অথচ এর পুরোটাই প্রতারক চক্রের কাজ।

ভোলার মনপুরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় বিভাগে কাজ করেন সাইফুল রহমান ইমন। গেল মাসে অনলাইনে আয়ের লোভনীয় অফারের ম্যাসেজ আসে তার ফোনে। প্রথমে সহজ কিছু কাজ করে পাঁচ/ছয়শো টাকা আয়ও করেন। তাদের বিশ্বাস করে প্রথমে দেড় হাজার ও পরে ধার করে আরও পনেরো হাজার টাকা জমা দেন তিনি। এরপর থেকেই তার টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ইমন। প্রায় ২৮ হাজার টাকা প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে বলেন জানান তিনি

চক্রটির ফাঁদে পা দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইমনের মতো অনেকেই।

সম্প্রতি সাইবার প্রতরণার এমন অভিযোগ বাড়লেও এখনও কাওকে শনাক্ত করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষকে শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার প্রলোভন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ পুলিশের।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের নতুন ডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম। ক্রাইমগুলো দেশের বাইরে থেকে সাধারণত হয়ে থাকে। সেই আসামিদের দেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আইনগত অনেক জটিলতা রয়েছে। এ কারণে আসলে ভুক্তভোগীকেই আগে সচেতন হতে হবে। নিজের লোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

প্রতারণা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা ও সাধারণের সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা ।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‌‘প্রতারণার বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে আইনের কাছে সোপর্দ করতে গেলে যে ধরনের মানব সম্পদ এবং ডিজিটাল যন্ত্রপাতি পুলিশের দরকার তা সংখ্যায় কম আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রযুক্তিগত অপরাধ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে।’




মলাইনার নিয়ে ‘সতর্কবার্তা’, বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ বিমানমন্ত্রীর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ড্রিমলাইনার-৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ নিয়ে নির্মাতা কোম্পানিটির সাবেক প্রকৌশলীর উত্থাপিত কারিগরি ত্রুটির বিষয়ে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে দ্রুত কথা বলতে বিমান বাংলাদেশকে নির্দেশ দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।

শনিবার রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়।

তবে বিমান বাংলাদেশের বহরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় উত্থাপিত কারিগরি সমস্যা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেন ফারুক খান।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সালেহপৌর ‘৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে সেগুলো না উড়িয়ে আবার নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ দেন। তার ব্ক্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজে খবর প্রকাশ হলে তা বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করে।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বোয়িং বলেছে, তারা নতুন করে ড্রিমলাইন পরীক্ষা করে উড়োজাহাজ ভেঙ্গে পড়ার মতো কোনো ক্রুটি পাননি।

বিমান বাংলাদেশের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ছয়টি প্রশস্ত বডির ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ রয়েছে।

শনিবার এ বিষয়ে বিমানের এমডিকে দেওয়া বিমানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করা হয়।

এতে বলা হয়, “আলাপকালে মন্ত্রী বলেছেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় আপাতত উত্থাপিত কারিগরি সমস্যা নিয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে উড়োজাহাজ তৈরিকারি কোম্পানি বোয়িং এর সাথে দ্রুত কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশ সরকার এবং বিমানের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তাই মুখ্য বিষয়।’

”এসময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কারিগরি ও মেইনটেনেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে বোয়িং এর সাথে বিমানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বিদ্যমান। দ্রুতই এ বিষয়ে অধিকতর তথ্য জেনে মন্ত্রীকে অবহিত করবেন।”

বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রসঙ্গে ওই প্রকৌশলীর সতর্কবার্তা বিশ্বজেুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফ বোয়িংয়ের সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সালেপোরের বরাতে বলেছে, উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিযোগিতা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে মারাত্মক কিছু সমস্যা তৈরি করেছে, যেটি হচ্ছে ফিউজিল্যাজের সেকশনগুলোর মধ্যে ছোট ছোট ফাঁক রয়ে গেছে। বিশ্বব্যপী চলাচলকারী এক হাজারের বেশি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজকে নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য উড্ডয়ন থেকে বিরত রাখার পরামর্শও দেন ওই প্রকৌশলী।

মাঝ আকাশে বিমানের ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ডে ফাটল

মার্কিন সিনেটে গত ১৭ এপ্রিল এক শুনানিতে প্রকৌশলী সালেপোর তার বিস্তারিত শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, ফিউজিল্যাজের সেকশনগুলোতে ছোট ফাঁকগুলো বন্ধে পাতলা ধাতব পাত (শিম) লাগানোর আগে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বোয়িং। ৭৮৭ উড়োজাহাজগুলো যে মিশ্র উপাদান (কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল) দিয়ে তৈরি, সেগুলো এ ধরনের বল প্রয়োগের ফলে দুর্বল হয়ে যায় এবং এগুলো দেখে শনাক্ত করা যায় না।

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বোয়িং বলেছে, ৭৮৭ উড়োজাহাজের কাঠামোগত ক্রুটি নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। বোয়িংয়ের একজন নির্বাহী বলেছেন, এর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের বেশি সময় ধরে মডেলটি এক লাখ ৬৫ হাজার ফ্লাইট সাইকেল স্ট্রেস টে

কথা বলার নির্দেশ মন্ত্রীর

বিমানের বহরে থাকা ছয়টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার হল-আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাংচিল, রাজহংস, সোনরতরী ও অচিনপাখি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নতুন কেনা এসব উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হয়। এগুলো দিয়ে ইউরোপ ও কানাডায় দূরপাল্লার ফ্লাইটগুলো চালাচ্ছে বিমান।

ফোর্বসের ২০২৩ সালের ১৯ মার্চের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী এক হাজার ছয়শটির বেশি ড্রিমলাইনার সরবরাহ অথবা তৈরির প্রক্রিয়ায় (অন অর্ডার) রয়েছে। একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজের মূল্য ২৩৯ মিলিয়ন ডলার।

ড্রিমলাইনারের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে শঙ্কা তৈরির পর বিমানমন্ত্রী ফারুক খান অসুস্থ অবস্থাতেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এ নিয়ে যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে দ্রুত কথা বলার নির্দেশ দেন।

বিমানের একজন কর্মকর্তা বলছেন, বহরে থাকা ড্রিমলাইনারগুলোতে এখন পর্যন্ত জটিল কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা যায়নি। তবে গত ২০ জানুয়ারি সৌদি আরবের পথে রওনা হওয়ার পর একটি ড্রিমলাইনারের ককপিটের কাচে (উইন্ডশিল্ড) ফাটল দেখা দেওয়ায় ২ ঘণ্টা বাদে ২৯৭ আরোহী নিয়ে তা শাহজালাল বিমানবন্দরে ফিরে আসে।

বিষয়টি নিয়ে পরদিন বিমানের প্রকৌশল ও উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এয়ারক্রাফটটি ওড়ার পর আকাশে উইনশিল্ডে ক্র্যাক দেখা দেয়। চার বছরের মাথায় সাধারণত এমন ঘটনা হওয়ার কথা না। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, এটা ম্যানুফাকচারিং ফল্ট, না অন্য কোনো কারণে হয়েছে- সেটাও আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা চলছে।”

উইন্ডশিল্ডে ফাটল কি এভিয়েশন খাতের সাধারণ ঘটনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “খুব যে কমন তা বলব না। এর আগেও আমাদের একটি বোয়িং ৭৮৭ এর উইন্ডশিল্ডে ক্র্যাক হয়েছিল। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।”