তরুণদের সমর্থন চাইলেন কমলা হ্যারিস

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় সোমবার নির্বাচনি প্রচারণার শেষ ভাষণটি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস।

জনসমক্ষে ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, এ প্রচারণা আমেরিকার সব কোণের সব শ্রেণির মানুষকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বড়- আমরা শক্তি, আশাবাদ ও আনন্দ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। ঠিক সেভাবেই শেখ করছি এখন।

তিনি তরুণ ও নতুন ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের আমি বিশেষভাবে বলছি, আমি তোমাদের শক্তি দেখি এবং আমি তোমাদেরকে নিয়ে গর্বিত।

আমেরিকার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জানেন যে এবারের নির্বাচনে জয়ী হতে হলে তাকে তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেতে হবে।

শেষ প্রচারণায় সংগীতশিল্পী ক্যাটি পেরি ও লেডি গাগা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হ্যারিসের আগমনের আগে উপস্থিত জনতাকে গান গেয়ে উজ্জীবিত করেন।

অন্যদিকে মিশিগানে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বনির্ধারিত ভাষণ। রিপাবলিকান দলের সমর্থকরা তার নির্বাচনী প্রচারণার এই সর্বশেষ ভাষণ শোনার জন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে জড়ো হন।

দুই প্রার্থীই তাদের সমাপ্তি টানেন দেশটির বড় রাজ্যগুলোতে। দেশটির প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নির্ধারণ করতে এই রাজ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।




ট্রাম্প-কমলা: কে জিতলে বাংলাদেশের কী হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। জাতীয় এ ভোট পরবর্তী প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি প্রতিনিধি সভা ও সিনেট গঠনও নির্ধারণ করবে।

এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

গত কয়েক সপ্তাহের জরিপে দুজনেরই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে। ভোটের ফল যা-ই হোক না কেন, তা আগামী চার বছরের জন্য মার্কিন রাজনীতি এবং পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করবে। আমেরিকার পূর্ব উপকূলে ভারমন্টে স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কানেকটিকাট, ইন্ডিয়ানা, কেনটাকি, মেইন, নিউজার্সি, নিউইয়র্ক এবং ভার্জিনিয়ার ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

ট্রাম্প বা কমলা, মার্কিন মসনদে যিনিই বসুন, বাংলাদেশের কী হবে? দক্ষিণ এশীয় দেশটির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটিও বড় প্রশ্ন। তাছাড়া ভারতই বা এখানে কতটা ফ্যাক্টর হতে পারে? কিংবা বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিদের সম্পর্ক কি কোনো ভূমিকা রাখবে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। বিশেষ করে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটকে ঘিরে সেই আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অতীতে মার্কিন রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের ভালো সম্পর্ক দেখা গেছে।

বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোয় জোর দেয় ডেমোক্র্যাট প্রশাসন। কমলা হ্যারিস বা ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে ব্যবসা-বাণিজ্য, সহযোগিতার জায়গাগুলো বাংলাদেশের জন্য সহজ থাকার সুযোগটা বেশি বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও লেখক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, কমলা হ্যারিস জয়ী হলে বর্তমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ও সামঞ্জস্য বজায় থাকবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, আমার মনে হয় না ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান সম্পর্কের কাঠামোকে সমর্থন করবেন। যেখানে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির উন্নয়ন, সংস্কার ও অন্যান্য সহায়তা বা সমর্থন করছে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রদানের ওপর জোর দেওয়ার মতো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বজুড়েই আমেরিকার মানবিক সহযোগিতার জায়গা কমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তার জায়গা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুও বড় বিষয়। কারণ জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য আসা সহায়তার বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথাগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে বৈদেশিক নীতির জায়গাগুলো বিবেচনা করেন, সেটি ঘিরে অনিশ্চয়তাও থাকে। সাধারণত প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা কাঠামোগুলোর একটা শক্তিশালী ভূমিকা থাকে।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পকে আমরা দেখেছি কিছু প্রচারণায় ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেওয়ার কথা বলছেন। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে। যদিও বিষয়টি আদৌ কতদূর সম্ভব হবে বা পররাষ্ট্র নীতির জায়গায় প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত একটি টুইট আলোচনা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে। তবে বিশ্লেষকেরা এটিকে ভবিষ্যৎ নীতির চেয়ে নির্বাচনে আমেরিকার হিন্দু ভোটার টানার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জায়গা থেকে তারা ধারণা করছেন, কিছু লবি গ্রুপ হয়তো বা এটাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেয়েছে এবং সেই আলোকেই তার এই স্টেটমেন্টটা এসেছে।

লবি গ্রুপ বলতে আওয়ামী লীগ অথবা ভারতকে বোঝানো হয়েছে, এমন আলোচনাও রয়েছে।

বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে শক্ত অবস্থানে থাকলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনই একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন যে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, দুই পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো সম্পর্ক থাকায় এবং দুই শিবিরেই তার বন্ধু থাকায় এই নির্বাচনের ফলাফলে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।

সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ-আমেরিকার সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলা হলেও, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে যখন ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছিলেন তার সমালোচনা করেছিলেন ইউনূস। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ বা মতাদর্শের জায়গাও ভিন্ন।

ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে বক্তব্য দেওয়ার সময় ড. ইউনূস ট্র্যাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’ বা অন্ধকার সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন বলে হেকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সেসময় আরেকটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে তিনি কী বলতে চাইবেন জিজ্ঞেস করা হলে, তখন ‘দেয়াল’ তৈরি না করে ‘সেতু’ নির্মাণ করে দৃষ্টিভঙ্গি উদার করার কথা এনবিসি নিউজকে বলেছিলেন ড. ইউনূস।

মি. কুগেলম্যানের মতে, কমলা হ্যারিস জিতলে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্কের জন্য একটা সম্পদ হবেন। কারণ, বাইডেন প্রশাসনের মতো কমলার ক্ষেত্রেও একটা স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা থাকবে। তবে ট্রাম্প জয়ী হলে সে সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, কমলা বা ট্রাম্প, যেই প্রেসিডেন্ট হোক না কেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে একটা নির্ভরযোগ্যতার জায়গা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সামনের নির্বাচন দেরিতে হলেও কবে হবে, কীভাবে হবে, ধাপগুলো কী হবে, অর্থাৎ একটা রোডম্যাপ তুলে ধরতে হবে। এটা বর্তমান সরকারের বৈধতার ইমেজ এবং সমর্থনের জায়গা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

অবশ্য বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর সুযোগ হবে বলেও মনে করেন হুমায়ুন কবির ও মেহনাজ মোমেন।

ব্যবসা বাণিজ্য, কৌশলগত, ভূরাজনৈতিক, এমন নানা দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সম্পর্কে আগ্রহের জায়গা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে এই অঞ্চলে মনোযোগটা বাড়াচ্ছে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু একটা বড় জনগোষ্ঠীর দেশ যারা বেশ সক্রিয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এশিয়ার সংযোগস্থল এবং বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে থাকায় সেখানে ভূরাজনৈতিক একটা আগ্রহ থাকে। সম্প্রতি সামরিক দিক থেকেও কিন্তু ডাইভার্সিফিকেশনের চিন্তা আমরা করছি। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র-শস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী হবে।

বাংলাদেশকে ‘উঠতি বাজার’ বিবেচনায় ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের জায়গা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম, বোয়িং বিমান, গ্যাস বা এলএনজির কথা উল্লেখ করেন এম হুমায়ুন কবির।

এছাড়া বাংলাদেশের বহু মানুষ আমেরিকায় বসবাস করেন, পড়াশোনা করতে যান। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বের জায়গা রয়েছে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও ক্রেডিট কার্ড বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে গেলেও তাতে কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়।

বৈদেশিক নীতিতে সাধারণত বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্বার্থের সমীকরণ গুরুত্ব রাখে। তবে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এবার নতুন সমীকরণের জায়গা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্ক। এসব নানাবিধ ফ্যাক্টর মিলেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কটা নির্ধারণ হবে।




প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেছেন।

নেতানিয়াহু বলেছেন, তাদের মধ্যে ‘বিশ্বাসের সংকট’ দেখা দিয়েছিলো।

খবর বিবিসি

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটজকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের কথা জানিয়ে নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, গ্যালান্টের উপর তার আস্থা সাম্প্রতিক সময়ে ‘ক্ষয়’ হয়েছে।

বরখাস্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে গ্যালান্ট লিখেছেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল এবং থাকবে।

নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত বছর ধরে ইসরায়েলের যুদ্ধ কৌশল নিয়ে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের খবর পাওয়া যায়।

গ্যালান্ট গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে হামাসের সঙ্গে একটি জিম্মি মুক্তির চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিলেন,
যা নেতানিয়াহু  প্রত্যাখ্যান করেন। তাছাড়া গ্যালান্ট ইসরায়েলের আল্ট্রা অথ্রোডক্স নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরিকল্পনায়ও অসন্তুষ্ট ছিলেন।

গ্যালান্টকে বরখাস্ত করাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই তেল আবিবের রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং নেতানিয়াহু রাজনৈতিক বিরোধীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।




ট্রাম্প আসলে কতটা শান্তিবাদী

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বে শান্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আসলে শান্তিবাদী কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ জন্য প্রশ্ন উঠেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে ট্রাম্প কী শান্তি ফেরাতে পারবেন।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতায় এসে প্রথমেই ইয়েমেনে গণহত্যার জন্য সৌদি বহুজাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে সৌদি আরব ও আমিরাতে বোমা ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কয়েকবার পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তৈরি করেছিলেন। ইরানের সঙ্গে মার্কিন বিরোধ চরমে উঠেছিল। ভিনেজুয়েলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। বলকান ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে মার্কিন সামরিক ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল।

ট্রাম্প বিদেশে যুদ্ধ-সহিংসতায় সবসময় উৎসাহ দিতেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ তিনি উদযাপন করেছিলেন। তাছাড়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা ও লেবাননে হামলা করতে ইন্ধন যুগিয়েছিলেন। সেই ট্রাম্প গত শুক্রবার এক নির্বাচনী সমাবেশে ঘোষণা দেন, ‘আমরা পৃথিবীতে শান্তি চাই’।
ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, তার প্রতিপক্ষ নেতারা যুদ্ধবাজ। তিনি কমলা হ্যারিসের সমালোচনা করে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বে হত্যাকাণ্ড বাড়বে। এমনকি কমলা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি নিয়ে যাবেন।

অ্যাডভোকেসি গ্রুপ উইন উইদাউট ওয়ারের নির্বাহী পরিচালক সারা হাগদুস্তি মনে করেন, ট্রাম্প নিজেকে শান্তিবাদী প্রার্থী হিসেবে জাহির করেছেন, যা একেবারেই অযৌক্তিক। হাগদুস্তি বলেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি ছিন্ন করেন ও বেপরোয়াভাবে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়।

এদিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে রাশিয়া ইউরোপের দিকে আক্রমণাত্মক হাত প্রসারিত করতে পারে। এতে বিশ্বশান্তি চরম হুমকিতে পড়বে। খবর হাফপোস্টের।




ইরান কী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, ইসরায়েল সেগুলো মোকাবিলা করল কীভাবে

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের প্রায় ১৮০টি উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে তেহরান গত মঙ্গলবার রাতের হামলায় গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি করতে চেয়েছে। সেদিক দিয়ে গত এপ্রিলে চালানো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেয়ে এবারের হামলা ছিল ভিন্ন।

উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রাথমিক তথ্যমতে, হামলায় ইসরায়েলে কারও প্রাণহানি না হওয়া এবং পশ্চিম তীরে মাত্র একজনের প্রাণহানির বিষয়টি একে সামরিক ব্যর্থতার বিষয়টিও তুলে ধরে। যদিও ইরানের ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলোর অংশবিশেষ ভূমিতে আঘাত হেনেছে।

এ বছর এর আগে ব্যবহার করা ইরানের ইমাদ ও গদর ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির ছয় গুণ গতিসম্পন্ন। এগুলো ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে ১২ মিনিট সময় নেয়। এই গতি ঘণ্টায় ৪ হাজার ৬০০ মাইলের বেশি। সেখানে ইরান বলেছে, এবার তারা আরও দ্রুতগতির হাইপারসনিক ফাত্তে–২ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল। যেগুলোর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার মাইল।

আড়াই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের করা হিসাবে ইরানের হাতে আনুমানিক তিন হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। সংগত কারণেই বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। তেহরান এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বড় অংশই রেখে দিতে চেয়েছে, ইসরায়েল সংকট বাড়িয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করলে সে সময় ব্যবহার করার জন্য।

মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এত বেশিসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা খুবই অত্যাধুনিক। আকাশেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করতে সেখান থেকে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত কতটা, তা–ও নিশ্চিত নয়।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য সাধারণত দূরপাল্লার ইউএস–ইসরায়েলি অ্যারো ৩ ও অ্যারো ২ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রথম ব্যবহার করা হয় ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধে। এ ব্যবস্থার সঙ্গে মাঝারি পাল্লার ডেভিড স্লিং প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়। তুলনামূলক বেশি পরিচিত আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয় স্বল্পপাল্লার সমরাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে, প্রায়ই গাজা থেকে হামাস যেসব রকেট নিক্ষেপ করে, সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে।

গত এপ্রিলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফের অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, অ্যারো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা একবার সক্রিয় করলে ৩৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়। আর ডেভিডর স্লিংয়ের ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ ১০ লাখ ডলার। ১০০ বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়। যদিও ইরানের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ৮০ হাজার পাউন্ড বা তার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়।

এবার ইরানের কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত এপ্রিলে ইরানের নিক্ষেপ করা ১২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্য মাত্র ৯টি আঘাত হেনেছিল। তাতে দুটি বিমানঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সামরিক পরিভাষার ক্ষেত্রে, ওই হামলাও কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল।

এপ্রিলে ইরান তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। তবে মঙ্গলবার তারা তুলনামূলক ধীরগতির ড্রোন ব্যবহার করে। এবার তারা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

5




কারখানায় যেতে ভয় লাগে, বললেন প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী

শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কষ্টে আছি। আজকে আমার কারখানায় যেতে ভয় লাগে। ভয় লাগে এই জন্য যে আমি কী নিজের জীবন নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব? এভাবে ব্যবসায়ীরা যদি নিজেদের কারখানায় যেতে শঙ্কিত হন, তাহলে তাঁরা আগামী দিনে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে যাঁরা শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ উসকে দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান আহসান খান চৌধুরী। বলেন, ‘বর্তমানে যাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতায় অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের দেশে কখনোই ‘‘দিতে হবে, দিতে হবে’’, ‘‘দাবি মানতে হবে’’—এমন সংস্কৃতি ছিল না। আমরা বিগত দিনে কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আমরা সেই সংস্কৃতি ফিরে পেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলার উন্নতি একটি মৌলিক বিষয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী দিনে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। এ সময় বক্তব্য দেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।

সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, বর্তমান সরকারকে ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বাড়াতে হবে।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘ঠিক জায়গায় ঠিক লোক বসালে ভালো ফল দেয়। এই সরকারের আমলে সে প্রমাণ পাচ্ছি। ইতিমধ্যে ব্যাংকমাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। বিনিময় হার অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে। বর্তমান গভর্নরের ওপর ব্যবসায়ীদের আস্থা আছে। তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় আছে। গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষের নামে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে থাকলে নতুন কর্মসংস্থান কীভাবে হবে।’

ব্যাংক ঋণের সুদহার নিয়ে মেট্রো চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ১৪-১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা করে বিশ্বের কোনো দেশে মুনাফা করা যায় না। ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা ছোট বা বড় কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। অর্থায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। তিনি আরও বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বন্ধ। এফডিআই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ডলারের জন্য নয়, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হওয়া যায়। রপ্তানি পণ্যের বাড়তি দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করলেই বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলবে।

প্রশাসন পুরোপুরি কাজ করছে না, এমন দাবিও করেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন পুরোপুরি কাজ করছে না। চাকরি থাকবে কি থাকবে না, নতুন করে আবার কী বের হয়ে আসে—এমন সব কারণে কাজ করতে চাচ্ছেন না অনেকে। ফলে সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে কর্মকর্তাদের বার্তা দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু প্রবাসী আয় এবং দাতাদের ঋণ ও সহায়তায় দেশ চলবে না। ব্যবসায়ীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাঁদের (ব্যবসায়ীদের) কথা বলার একটা জায়গা লাগবে। সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার এখনো ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে হবে। তাঁদের অবদান স্বীকার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব অব্যবস্থাপনা ছিল, সেগুলো সংস্কার করতে হবে। তবে সেখানে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’

4



হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের শত্রুতা কত বছরের, কতবার মুখোমুখি তারা

গত বছরের অক্টোবরে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। দুই পক্ষই আন্তসীমান্ত হামলা চালাতে থাকে। সম্প্রতি সে উত্তেজনা চরমে রূপ নেয়। হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে, বৈরুতে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরের ওপর চালানো হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়েহ এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডার আলী কারাকিসহ আরও কয়েকজন কমান্ডারও নিহত হয়েছেন।

এরপর গতকাল মঙ্গলবার থেকে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ বৈরিতা প্রায় অর্ধ শতকের পুরোনো। এ সময়ের মধ্যে দুই পক্ষ বেশ কয়েকবারই লড়াইয়ে জড়িয়েছে।

১৯৮২ সালে লেবাননের হামলা

১৯৮২ সালে লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েল। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের ওপর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) হামলার জবাবে ওই অভিযান শুরু হয়। তখন থেকে লেবাননে সাত বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে।

ইসরায়েল চেয়েছিল তাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ থাকবে, এমন একটি সরকার লেবাননের ক্ষমতায় আসুক। সে আশা নিয়ে ইসরায়েল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল দখল করে নেয় এবং তারা বৈরুতের পশ্চিমাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বৈরুতের পশ্চিমাঞ্চলে ছিল পিএলওর মূল ঘাঁটি। ইসরায়েলি বাহিনী এলাকাটি অবরুদ্ধ করে ফেলে।

একটি সমঝোতা চুক্তির পর পিএলও তিউনিসিয়াতে সরে যায়। তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী লেবাননে থেকে যায়। তারা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে গৃহযুদ্ধে সমর্থন জুগিয়ে যেতে থাকে। সাবরা ও শাতিলায় হত্যাকাণ্ডেও ইসরায়েলের ভূমিকা ছিল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে দুই দিনে দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী এবং লেবাননের বেসামরিকদের হত্যা করেছিল লেবাননের ডানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠী।

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ঠেকাতে লেবাননের কয়েকটি সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল শিয়া মুসলিমদের সংগঠন।

হিজবুল্লাহ গঠনের চিন্তাটি এসেছিল ইরান–সমর্থিত মুসলিম নেতাদের পরিকল্পনায়। মূলত লেবানন থেকে ইসরায়েলকে বিতাড়িত করার লক্ষ্য নিয়ে হিজবুল্লাহ নামক সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। বেকা উপত্যকা ও বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার তরুণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমর্থন নিয়ে হিজবুল্লাহ দ্রুতই লেবাননের একটি উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত হয়।

১৯৮৩ সালের হামলা

১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত লেবাননে বিদেশি সেনাদের কয়েকটি হামলা হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে অনেক হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করা হয়ে থাকে।

১৯৮৩ সালের ২৩ অক্টোবর বৈরুতের বেশ কয়েকটি ব্যারাক ভবনে বোমা হামলা হয়। ওই হামলায় তিন শতাধিক ফরাসি ও মার্কিন শান্তিরক্ষী নিহত হন।

ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করে। অনেকের বিশ্বাস, হিজবুল্লাহরই একটি অংশ এই ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী।

১৯৮৫ সালে হিজবুল্লাহর উত্থান

১৯৮৫ সালে হিজবুল্লাহর লড়াই করার ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে তারা মিত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একজোট হয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে লেবাননের লিতানি নদী–তীরবর্তী এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য করে।

লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ ঘোষণা করে ইসরায়েল। সে নিরাপত্তা অঞ্চলটির দায়িত্ব দেওয়া হয় খ্রিষ্টান আধিপত্যশীল মিলিশিয়া বাহিনী সাউথ লেবানন আর্মিকে (এসএলএ)। এটি ইসরায়েলের ছায়া বাহিনী হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সালে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের দখলদারকে সমর্থন জানিয়ে গেছে তারা।

১৯৯২ সালের রাজনীতি

১৯৯২ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধের (১৯৭৫-১৯৯২) অবসান হওয়ার পর হিজবুল্লাহ সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে। ১২৮ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্টে আটটি আসনে জয় লাভ করে তারা।

এরপর হিজবুল্লাহর আসনসংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে পার্লামেন্টে ৬২টি আসন হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্রদের দখলে।

নিজেদের অবস্থান শক্ত—এমন এলাকাগুলোতে বিভিন্ন রকমের সামাজিক কর্মসূচি পরিচালনা করে হিজবুল্লাহ। এতেও তাদের প্রভাব বাড়ছে।

১৯৯৩ সালে ৭ দিনের যুদ্ধ

১৯৯৩ সালের জুলাইয়ে লেবাননে হামলা করে ইসরায়েল। তারা এর নাম দেয় ‘অপারেশন অ্যাকাউন্টেবিলিটি।’ লেবাননে একটি শরণার্থীশিবির ও গ্রামে ইসরায়েলি হামলার জবাবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে পাল্টা হামলা চালানোর পর ওই অভিযান শুরু হয়েছিল। ওই সংঘাত সাত দিন স্থায়ী হয়েছিল।

ওই সংঘাতে লেবাননের ১১৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০০ জনের বেশি। সংঘাত চলাকালে হাজারো ভবন ধ্বংস হয়েছে।

১৯৯৬ সালের এপ্রিলে আগ্রাসন

তিন বছর পর ১৯৯৬ সালের ১১ এপ্রিল ইসরায়েল আবারও লেবাননে হামলা শুরু করে। এই অভিযান ১৭ দিন স্থায়ী হয়েছিল। অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর ওপারে হটানো। ইসরায়েল চেয়েছিল হিজবুল্লাহকে হটিয়ে এমন দূরবর্তী অবস্থানে নিয়ে যেতে, যেন হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে না পারে।

ইসরায়েলের ওই অভিযানকে লেবাননের নাগরিকেরা এপ্রিল অ্যাগ্রেসন (এপ্রিল হামলা) নাম দিয়েছিলেন। আর ইসরায়েলিরা একে ডাকতেন ‘অপারেশন গ্রেপস অব র‌্যাথ’ বলে। মার্কিন লেখক জন স্টেইনবেকের ১৯৩৯ সালের উপন্যাস দ্য গ্রেপস অব র‌্যাথ-এর নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়েছিল।

সামরিক ও বেসামরিকভাবে দুই পক্ষেরই উল্লেখজনক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং লেবাননের অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১৮ এপ্রিল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে কানা গ্রামের কাছে জাতিসংঘ চত্বরে গোলা হামলা চালায় ইসরায়েল। প্রায় ৮০০ বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হামলায় কমপক্ষে ৩৭ শিশুসহ ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১১৬ জন। ফিজির চার সেনাসদস্যও তখন গুরুতর আহত হন। তাঁরা জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিযুক্ত ছিলেন।

২০০৬ সালের জুলাই যুদ্ধ

২০০৬ সালে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হিজবুল্লাহর অভিযানে তিন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। আরও দুই ইসরায়েলি সেনাকে আটকে রাখে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি সেনাদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে সে দেশে কারাবন্দী থাকা লেবাননের নাগরিকদের মুক্তি দাবি করেছিল হিজবুল্লাহ।

পরে একই মাসে জুলাই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ওই যুদ্ধ ৩৪ দিন স্থায়ী হয়েছিল। লেবাননের প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ মারা যান এবং ৪ হাজার ৪০০ জন আহত হন। এর বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলও তাদের ১৫৮ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল। তাদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য।

২০০৯ সালের ইশতেহার হালনাগাদ

ইসরায়েলের প্রতি বিরোধিতা ও ইরানকে সমর্থন—এ নীতিতে চলতে থাকে হিজবুল্লাহ। এর মধ্যে ২০০৯ সালে হিজবুল্লাহ তাদের ইশতেহার হালনাগাদ করে। তারা নিজেদের এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় একীভূত করার প্রতিশ্রুতি দেয়, যেখানে সাম্প্রদায়িক স্বার্থ নয় বরং জাতীয় ঐক্য প্রতিফলিত হবে। ১৯৮৫ সালে লেখা খোলা চিঠির পর এটি ছিল হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র। ১৯৮৫ সালের খোলা চিঠিতে তারা সরাসরি দেশের লক্ষ্যগুলোর বিরোধিতা করেছিল।

২০০৯ সালের ইশতেহারে হিজবুল্লাহ তাদের ইসরায়েলবিরোধী প্রতিরোধকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। এতে হিজবুল্লাহ কীভাবে লেবাননের সব স্তরে পরিণত হচ্ছে, তা দেখিয়েছে তারা।

২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ

২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দেশটির সরকারকে সমর্থন জানায় হিজবুল্লাহ। তারা ওই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের এমন পদক্ষেপকে আরব সমর্থকদের অনেকে ভালোভাবে নেননি। এমনকি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সুভি আল তুফায়লিও এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছিলেন।

অবশ্য হিজবুল্লাহর সমর্থকেরা দাবি করেছিলেন, এই পদক্ষেপ লেবাননে সশস্ত্র গোষ্ঠী বিশেষ করে আইএসের মতো সংগঠনগুলোর আগ্রাসন রোধে ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি এই পদক্ষেপের কারণে যুদ্ধক্ষেত্র বিষয়ে বড় ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে হিজবুল্লাহ।

২০২৩ থেকে ২০২৪-গাজা

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজার মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। প্রায় আড়াই শ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

লেবানন ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে হিজবুল্লাহ ও হামাসের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হন।

২০২৪ সালের ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলার ভবনে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়। দুই সপ্তাহ পর ইরান যখন ইসরায়েলকে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে, তখন তেহরানকে ব্যাপকভাবে সমর্থন জুগিয়ে গেছে হিজবুল্লাহ।

গত ২৮ জুলাই ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে একটি ফুটবল মাঠে হামলায় ১২ সিরীয় শিশু ও তরুণ নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ—দুই পক্ষই দাবি করে এ ঘটনায় তারা জড়িত নয়। এর কয়েক দিন পর বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর কমান্ডার ফুয়াদ শোকর হত্যার শিকার হন। তখন এ হত্যাকাণ্ডকে গোলানে ফুটবল মাঠের ঘটনার পরিণতি বলে উল্লেখ করে ইসরায়েল।

ফুয়াদ শোকর নিহত হওয়ার পরপরই হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েও নিহত হন। এই দুই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়।

ফুয়াদ শোকরের হত্যার বদলা হিসেবে আগস্টের শেষের দিকে রকেট হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-পেজার বিস্ফোরণ

২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননে হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজার যোগাযোগযন্ত্রে বিস্ফোরণ হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি দেয় তারা। মূলত ১৭ সেপ্টেম্বর এই পেজার বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। গত সপ্তাহ থেকে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে জোরালো হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। লেবানন সরকারের হিসাব অনুসারে, গত কয়েক দিনের হামলায় দেশটিতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।




পা ভেঙে হাসপাতালে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রী গ্যান্টজ

ইসরাইলের যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেট মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ দক্ষিণ ইসরাইলের কিবুটজ ইয়াদ মোর্দেচাইয়ের কাছে ক্রস-কান্ট্রি বাইক রাইডের সময় দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

তার অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে হিব্রু মিডিয়া একটি বিবৃতিতে বলেছে, সোমবারের এ দূর্ঘটনায় গ্যান্টজের পা ভেঙেছে।

আশকেলনের বারজিলাই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর গ্যান্টজকে আরও পরীক্ষার জন্য তেল আবিবের শেবা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

ন্যাশনাল ইউনিটি দলের প্রধান ও চরমপন্থী এ নেতাকে আজকেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: টাইমস অব ইসরাইল।

 




স্কটল্যান্ডের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

স্কটল্যান্ডের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী হামজা হারুন ইউসাফ পদত্যাগ করেছেন। বিরোধীদের প্রস্তাবিত অনাস্থা ভোটে হারতে পারেন এমন একটি শঙ্কা থেকে সোমবার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

স্কটিশ গ্রিনস পার্টির সঙ্গে জোট করে স্কটল্যান্ডে সরকার গঠন করেছিল হামজার দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। তবে এই দলের সঙ্গে সম্প্রতি তার দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির জোট ভেঙে যায়। এরপর তাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে দুটি অনাস্থা ভোটের ডাক দেন বিরোধীরা। একটি ফার্স্ট মিনিস্টার ও আরেকটি স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে। এসব অনাস্থা ভোটে হামজা হেরে যেতে পারেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তাই অনাস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি।

সোমবার এক ভাষণে হামজা বলেছেন, আমি আমার মূল্যবোধ ও নীতি নিয়ে ব্যবসা করতে চাই না। অথবা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যার-তার সঙ্গে চুক্তি করতে চাই না। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে হামজা বলেছিলেন, বিরোধীদের ডাকা অনাস্থা ভোটে তিনি জিততে পারবেন বলে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তবে সোমবারের মধ্যেই নিজের সংখ্যালঘু সরকারকে শক্তিশালী করতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

গত বছর স্কটল্যান্ডের ক্ষমতাসীন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা নির্বাচিত হন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হামজা ইউসেফ। এরপর সাবেক ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম হিসেবে ফার্স্ট মিনিস্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন হামজা। হামজার জন্ম স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয়। তবে তার পূর্বপুরুষেরা উনিশ শতকের ষাটের দশকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব থেকে স্কটল্যান্ডে পাড়ি জমান। অবশ্য তার বাবা মুজাফফর ইউসুফের জন্ম পাকিস্তানে হলেও মা সায়িস্তার জন্ম কেনিয়ায়। সূত্র: ডন।




গাজায় যুদ্ধাপরাধ, আইসিসি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আতঙ্কে ইসরাইলি নেতারা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি রাজনৈতিক ও সামরিক নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের বিচার মন্ত্রণালয় এবং সেনার আইনজীবীরা এটি যাতে না ঘটে তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও পরোয়ানা জারি করতে বিলম্ব বা প্রতিরোধ করতে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খানকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট নয় যে, তারা কতটা সফল হয়েছে।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ হারজল হালেভির বিরুদ্ধে এ সপ্তাহের কোনো এক সময় পরোয়ানা দেয়া হবে। তাদের নিচের কর্মকর্তারা রেহাই পাবেন।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার শুনানিকারী আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বিপরীতে, আইসিসি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান এবং বেশিরভাগ আরব দেশের মতো, ইসরাইল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় তবে আইসিসি নয়।

যদি পরোয়ানা জারি করা হয়, তাহলে প্রতিটি আইসিসি সদস্য রাষ্ট্র (মোট ১২৩) যদি আসামীরা তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তবে আসামীদের গ্রেপ্তার করে হেগের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য। যদিও আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আপিল করার কোনো উপায় নেই, যে কোনো দেশ তাত্ত্বিকভাবে আদালতকে বলতে পারে যে, সে নিজেই মামলা পরিচালনা করছে।

 

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রয় শনডর্ফের মতে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ হতে পারে। ‘এই ওয়ারেন্টগুলো ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনকারী হিসাবে বিবেচিত দেশগুলির সাথে গোষ্ঠীভুক্ত করবে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে অন্যান্য সমস্ত মামলার শীর্ষে আসবে,’ শনডর্ফ বলেছেন।

ইসরাইলি কর্মর্তাদের বিরুদ্ধে কখনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি। কিন্তু ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, আইসিসি ইউক্রেনে সম্ভাব্য রাশিয়ান যুদ্ধাপরাধের তদন্তের অংশ হিসাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে একটি পরোয়ানা জারি করেছে। ফলস্বরূপ, পুতিন সেসব দেশে যেতে পারবেন না যেখানে তিনি মনে করেন যে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। সূত্র: হারেৎজ।