সংসারে শান্তি বজায় রাখার আমল

শয়তানের প্ররোচনাতেই মূলত সংসারের শান্তি দূর হয়। ঘরে লেগে থাকে অশান্তি ও কলহ-বিবাদ। শয়তানের কাছে পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করার চেয়ে বড় খুশির খবর নেই। তেমনই এক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শয়তান পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে, তারপর (পুরো বিশ্বে) তার বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। আর (ওই শয়তান সদস্য) তার সবচেয়ে বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত, যে (মানুষের মাঝে) সবচেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টি করে। শয়তান সিংহাসনে বসে সবার ঘটানো ফেতনার বর্ণনা শোনে। একজন এসে বলে আমি অমুক কাজ করেছি, শয়তান বলে তুমি তেমন কোনো কাজ করোনি। এভাবে শয়তান তার পাঠানো অন্যদের (শয়তান সদস্যদের) মন্দ কাজের বিবরণ শুনতে থাকে। অতঃপর একজন এসে বলে- ‘আমি অমুকের সঙ্গে ধোঁকার আচরণ করেছি, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছি। এ (ফেতনার) কথা শুনে শয়তান তাকে তার কাছাকাছি (বুকে) টেনে নেয়। আর বলে- তুমিই বড় কাজ করেছ। হাদিস বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়।’ (মুসলিম: ৭২৮৪; আহমদ: ১৪৩৭৭)

অতএব সংসারে শান্তি বজায় রাখতে হলে শয়তানের ধোঁকা-প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী আমল ও দোয়ার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে যেসব দোয়া ও আমল করা জরুরি তা হলো-

১) ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া: বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই সালামের পর সুন্নতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক এ দোয়া পড়া- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাউলিজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি; বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা; ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যাণ চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করি।’ (আবু দাউদ: ৫০৯৬)

২) পরিবারে সালামের প্রচলন করা: পরিবারের কোনো সদস্য বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই ঘরে অবস্থানরত পরিবারের অন্য লোকদের সালাম দেওয়ার প্রচলন চালু করা। এটি কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ। আর এতেই রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ-
فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সুরা নূর: ৬১)। রাসুলুল্লাহ (স.)আনাস (রা.)-কে বলেন, ‘হে বৎস, যখন তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরবে, তখন তাদের সালাম দেবে। এটা তোমার ও তোমার ঘরবাসীর জন্য বরকতের কারণ হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৮)

৩) খাবারগ্রহণের আগে-পরে দোয়া পড়া: খাবার গ্রহণের আগে পরে দোয়া পাঠ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম: ৫৩৭৬) তাই খাওয়া বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে শুরু করতে হবে। অতঃপর এই দোয়াটি পড়া- اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ اَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ ‘আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা- ফী-হি ওয়া আত্বইমনা খাইরাম্ মিনহু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন, ভবিষ্যতে আরো উত্তম খাদ্য দিন’। (তিরমিজি, আবু দাউদ, মেশকাত: ৪২৮৩)

খাবারগ্রহণ শেষে এই দোয়া পড়া—الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়া সাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।’ অর্থ: ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন।’ (আবু দাউদ: ৩৮৫০)

৪) সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সবকিছুরই একটি চুড়া থাকে আর কোরআনের চুড়া হল সুরা আল-বাকারা। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বাড়িতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে বাড়িতে শয়তান প্রবেশ করে না।’ (তিরমিজি: ২৮৭৭)

৫) অশ্লীল বিনোদন থেকে পরিবারকে মুক্ত রাখা: ঘর ও পরিবার-পরিজনকে গান-বাজনা এবং গান-বাজনার সরঞ্জাম থেকে মুক্ত রাখা শান্তির অন্যতম উৎস। কেননা গান-বাজনা হলো শয়তানের আওয়াজ। শয়তানের উদ্দেশে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ বলেন চলে যা, অতঃপর তাদের মধ্য থেকে যে তোর অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তাদের সবার শাস্তি-ভরপুর শাস্তি। তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ (বাদ্য-বাজনা) দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরিক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৬৩-৬৪)

আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

আল্লাহর জিকির যেমন শয়তানকে দূরে রাখে তেমনিভাবে গান এবং বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ রহমতের ফেরেশতাগণকে দূরে রাখে। আর ঘর থেকে যখন ফেরেশতা বের হয়ে যায়, তখন সেখানে শয়তান তার রাজত্ব কায়েম করে। এভাবে সংসার থেকে শান্তি দূর হয়ে যায়।

৬) ঘরে কুকুরের প্রবেশ থেকে সাবধান থাকা: ঘরকে কুকুরের প্রবেশ থেকে হেফাজত করা। হাদিসে এসেছে- ‘যে ঘরে ছবি এবং কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (নাসায়ি: ৫৩৪৭-সহিহ)

৭) ঘরে ছবি ও জীব-জন্তুর মূর্তি না থাকা: ছবি এবং বিভিন্ন জীব জন্তুর মূর্তি থেকে ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাদিসে এসেছে- ‘যে ঘরে মূর্তি বা ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (মুসলিম)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিনে ছবি বা মূর্তি নির্মাতাদের সর্বাধিক কঠিন শাস্তি হবে।’ (বুখারি: ৫৯৫০, মুসলিম: ২১০৯)

অতএব মুসলমানের উচিত হবে ঘরে অবস্থানকালীন সময়ে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলা। সুন্নতের পুরোপুরি অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তাতে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ঘরে ফিরে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।




আসুন আল্লাহকে ভালোবাসি   

কল্পনা করুন একজন মানুষের সাথে আপনার দেখা হলো।তাকে আপনি চেনেন না। দেখা হওয়া মাত্রই আপনি তাকে একটি মুচকি হাসি উপহার দিলেন। এরপর লোকটির কথা ভুলেই গেলেন। কিন্তু কিছু দিন পরে দেখলেন সেই ব্যক্তি আপনাকে একটি গাড়ি উপহার দিয়ে বলল, ‘আমি আপনার সে হাসির কথা কিছুতেই ভুলবো না। সে হাসিতে আমার প্রতি আপনার সত্যিকারের ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি।’

 এরপর আপনার সে হাসির কারণে ঐ লোক সবসময় আপনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে লাগল এবং আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। আপনি একটা বিপদে পড়েছেন, সে এসে আপনাকে সাহায্য করল। এমনিভাবে তার সময়-শ্রম দিয়ে সবক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করল। যখন আপনি অসুস্থ হলেন, সে এসে আপনাকে দেখে গেল এবং আপনার হাতে খাবার তুলে দিল।

তার এই অবস্থা দেখে আপনি বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন এবং তাকে বললেন যে, আমি তো এতকিছু পাওয়ার যোগ্য নই। সে উত্তর দিল, ‘না, না, আমি কখনোই আপনার সেই হাসির কথা ভুলতে পারব না। এভাবেই সে আপনার প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে যেতে থাকল। এর মধ্যে দুনিয়াবি কোন স্বার্থ নেই।

এই ধরনের মানুষকেই কিন্তু আপনি ‘ওয়াদুদ অর্থাৎ অতি দয়ালু বলে অভিহিত করবেন। এই ধরনের মানুষের দয়া দেখে আপনি প্রচন্ড লজ্জা অনুভব করবেন। বিশেষ করে যখন আপনি নিজে তার সাথে অনুরূপ কিছু করতে অক্ষম হবেন।

আল্লাহর ব্যাপারটিও এমনই। তিনি পরম দয়াময়। সামান্য আমলের বিনিময়ে তিনি তার বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন, তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তাদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র কাজেও অনেক বেশি সম্মান প্রদান করেন। হয়তো কাজটি বান্দার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, তবুও তিনি তাকে এর বিনিময়ে বিরাট প্রতিদান দিয়ে থাকেন।তবে এই সকল কথা এ কাজের প্রতিদান পাওয়ার জন্য একটাই শর্ত। কাজটি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হবে।

আপনি রাসূল সল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের দিকে লক্ষ্য করতে পারেন। তিনি বলেছেন,

ان احدكم ليتكلم بالكلمت من رضوان االله ما يظن ان تبلغ ما بلغت فيكتب الله له بها رضوانه الى يوم يلقاه

“তোমাদের মধ্যে কেউ যখন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কথা বলে, যার সম্পর্কে সে ধারণাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে। অথচ আল্লাহ তায়ালা তার এই কথার কারণে তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন।” তিরমিজিঃ ২৩১৯

একটি ছোট্ট কথা হয়তো সে বলার পর ভুলেও গিয়েছে। সে কখনও এটা কল্পনাও করতে পারেনি যে, আল্লাহর কাছে তা এত বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই কথার কারণেই তার ওপর অনেক বেশি সন্তুষ্ট হয়েছেন। কারণ তিনি পরম দয়াময়।

হাদিসে এসেছে,

لقد رايت رجلا يتقلب في الجنة، في شجرة قطعها من ظهر الطريق، كانت تؤذي الناس

“আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম জান্নাতে একটি গাছের নিচে স্বচ্ছন্দে হাঁটছে। কারণ সে এমন একটি গাছ রাস্তার মধ্য থেকে কেটে ফেলেছে যা মানুষ কে কষ্ট দিত।” মুসলিমঃ ১৯০৫

এটিও কত ছোট্র একটি কাজ! কিন্তু যেহেতু এটি করা হয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, তাই তিনি এর জন্য বিরাট বড় প্রতিদান দিলেন। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি ভালো কাজকে দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেন। কারণ তিনি পরম দয়াময়।

যদি আল্লাহর দয়া এবং তার সহিষ্ণুতা নিয়ে চিন্তা করার কারণে আপনার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে, তবে এই ক্ষুদ্র কাজের বিনিময়েও কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন এবং জাহান্নামকে আপনার জন্য হারাম করে দেবেন। কারণ তিনি পরম দয়াময়।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে আরশের ছায়া তলে আশ্রয় দেয়া হবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হলোঃ

رجل ذكرالله خاليا، ففاضت عيناه

“এমন ব্যক্তি, যে কি না নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে। আর এতে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়।” বুখারিঃ ১৪২৩

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

عينان لا تمسهما النار. عين بكت من خشية الله، وعين باتت تحرس في سبيل الله.

“দুটি চোখ জাহান্নামের সংস্পর্শে আসবেনা। এক. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। দুই. যে চোখ আল্লাহর পথে পাহারা দিতে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটায়।” তিরমিজিঃ ১৬৪৫

কাজগুলো কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র! কিন্তু আল্লাহতায়ালা এগুলোকে যথাযথ মূল্যায়ন করেন। কারণ তিনি বান্দার কাজের যথাযথ পুরস্কার দিয়ে থাকেন। বান্দা যখন তাঁর জন্য নেক কাজ করে, তখন তিনি তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। তিনি বলেছেন,

واستغفروا ربكم ثم توبوا اليه ان ربي رحيم ودود

“তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁর কাছে তাওবা করো। নিশ্চয়ই আমার রব দয়ালু এবং দয়াময়।” সূরা হুদঃ ৯০

তিনি আপনার পাহাড় পরিমাণ গুনাহকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন এবং এত বিশাল গুণাহ ক্ষমা করতে গিয়ে তিনি অন্যকিছুর ভ্রুক্ষেপও করছেন না। কারণ ছাড়া একবিন্দু নেকিও তিনি বিনষ্ট করেন না। তিনি বলেছেন,

ان الله لا يضيع اجر المحسنين

“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সৎ কর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” সূরা তাওবাঃ ১০২

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

من جاء بالحسنة فله عشز امثالها وازيد، و من خاء بالسيئة فجزاؤه سيءة مثلها او اغفر ومن تقزب مني شبرا تقربت منه ذراعا، ومن تقرب مني ذراعا تقربت منه باعا، ومن اتانى يمشي اتيته هرولة، ومن لقيني بقراب الارض خطيئة لا يشرك بي شيئاا لقيته بمثلها مغفرة.

“যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে, তার জন্য রয়েছে দশগুণ সাওয়াব; আর আমি তাকে আরও বাড়িয়ে দেব। আর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ (গুনাহ) করবে তার প্রতিফলন সেই কাজের অনুরুপ; কিংবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে একহাত এগিয়ে আসি। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে আসি। যে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে ছুটে আসি। যে ব্যক্তি পৃথিবী সমান গুনাহ করে এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করা থেকে বিরত থাকে, আমি তার জন্য পৃথিবী সমপরিমাণ মাগফিরাত নিয়ে উপস্থিত হই।” মুসলিমঃ ৬৫৮৯

যে ব্যাপারটা আপনাকে আল্লাহর ব্যাপারে আরও বেশি লজ্জায় ফেলে দেবে তা হলো, আপনি কিন্তু আল্লাহ তাআলার কোন উপকার করতে সক্ষম নন। আল্লাহর এসব দানের প্রতিদান দেওয়াও আপনার পক্ষে অসম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আল্লাহ তাআলাই আপনাকে নেককর্ম করার তাওফিক দিয়েছেন। নেককাজ করার ইচ্ছা যদিও আপনি করেছেন, ঠিক আছে। কিন্তু এই নেককাজ করার সক্ষমতা আল্লাহ তাআলাই আপনাকে দিয়েছেন। আবার সেই নেককাজ করার কারণে তিনিই আপনাকে প্রতিদান দিচ্ছেন। যখন আল্লাহ তাআলা আপনাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং সবর করার তাওফিক দান করেন, তখন সেই সবরের কারণে আবার তিনিই আপনাকে প্রতিদান দিয়ে থাকেন। চাই সেটা অন্তরের প্রশান্তির মাধ্যমে হোক বা অন্য কোন মাধ্যমে। এগুলোকে আপনি কি বলবেন? এগুলোই হচ্ছে আল্লাহর “আল-ওয়াদুদ” নামের হাকীকত।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, বিপদে-আপদে এবং খশি-আনন্দে তাঁকে ভুলে যাব না। পরিস্থিতি যতই মারাত্মক হোক না কেন আমরা তাঁর কাছেই ছুটে যাব।  চলুন আমরা আল্লহকে ভালোবাসি।

লেখক: মাওলানা মোঃ মাকছুদুর রহমান

প্রভাষক (আরবি)

হাজিরহাট হামিদিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসা




প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া

প্রকৃতি কখনো বিরূপ আকৃতি ধারণ করে। যেটাকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলি। যেমন- ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বর্ষণ, বন্যা, খরা, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প ও সুনামি প্রভৃতি।

প্রকৃতির যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আল্লাহর অধীনে। এসব কিছু কেবল তার হুকুমেই হয়। তার হুকুম ও আদেশের বাইরে গাছের একটি পাতাও নড়ে না।

পবিত্র কোরআনে দুর্যোগের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা,আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

দুর্যোগের আল্লাহর রাসুল (সা.) যা করতেন

দমকা হওয়া বইতে দেখলে রাসুল (সা.) আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যেতেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন। যখন বৃষ্টি হতো তখন তিনি খুশি হতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝোড়ো বাতাস বইত—তখন রাসুল (সা.) এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তেন—

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ




ইসলামে রাতে জলদি ঘুমানোর তাগাদা কেন?

সুস্থতার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নষ্ট হয়—এমন কাজ শরিয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যেমন নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম ঘোষণা আবার পরিমিত ও সময়ানুগ খাবারগ্রহণের প্রতি উৎসাহিতকরণ ইত্যাদি সবকিছুর পেছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করে সেটি হলো বান্দার সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা। একইভাবে জলদি ঘুমানো এবং ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠা সুস্থতা ও নানাবিধ বরকত লাভের উপায়। রাতে জলদি ঘুমাতে যাওয়া আর সকালে জলদি ঘুম থেকে উঠা সুস্বাস্থ্য, সম্পদ আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত। বিষয়টি কোরআন ও হাদিসে আরও চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘুমের উপযোগী সময় রাত। এজন্য মহান আল্লাহ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং শীতল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন ঘুম।’ (সুরা ফুরকান: ৪৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি: ৫৯৯) রাতে দেরি করে ঘুমানো নানা রোগ-ব্যাধির কারণ। যুক্তরাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পিরেঞ্জ লেভি বলেন, রাত জাগার বদ-অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছে, তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার। ৩০ শতাংশে থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

অথচ স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার এখতিয়ার ইসলাম কাউকে দেয়নি। ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।’ (বুখারি: ৫৭০৩; তিরমিজি: ২৩৫০) । তাছাড়া আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য আর ইবাদতের জন্য প্রয়োজন শারীরিক শক্তি ও সুস্থতা। একজন সুস্থ মানুষই পারে সঠিকভাবে ইবাদত করতে। এজন্য শারীরিক সুস্থতা হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামত। নবী করিম (স.) বলেন, ‘মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কিছু প্রদান করা হয়নি।’ (নাসায়ি: ১০৭২ )

সুতরাং শরীরের হক নষ্ট না করার স্বার্থে এবং সুস্থতা ধরে রাখার জন্য রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া উচিত। মুমিন বান্দার জন্য জলদি ঘুমানোর সবচেয়ে বড় উপকার হলো- ভোরে আল্লাহর ইবাদত ও জিকির করার সুযোগ। তাহাজ্জুদ, ফজরের নামাজ জামাতে পড়তে অসুবিধা হয় না রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে গেলে। হাদিস থেকে জানা যায়, দিনের প্রথমাংশকে আল্লাহ তাআলা বরকতপূর্ণ করেছেন। এই বরকত লুফে নেওয়া যায় রাতে দ্রুত ঘুমালে। ফজরের নামাজের পর সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার ফলে দিন সংকীর্ণ হয়ে যায়। কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। ব্রেইনের স্বাভাবিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে ফজরের নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত এবং ইশরাক নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু করলে মহান আল্লাহ সারা দিনের জন্য বান্দার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে দিনটি হয়ে ওঠে বরকতময়।

নবীজি (স.) আল্লাহর কাছে রকে বরকতময় করার জন্য দোয়া করেছেন। সাখর আল-গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ: ২৬০৮)

ভোরবেলাকে খুবই গুরুত্ব দিতেন পূর্ববর্তীরা। যারা ভোরের বরকত নিয়ে আলসেমি করত তাদের ব্যাপারা তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৫/২২২)
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১) । অতএব প্রমাণ হলো- সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা, বরকতলাভ, ভোরের ইবাদত সবকিছুর অন্যতম শর্ত রাতে জলদি ঘুমানো। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতে জলদি ঘুমানোর তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।




জ্বর থেকে মুক্তির জন্যে যে দোয়া শিখিয়েছেন নবীজি

শরীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে জ্বর বলা হয়। মানুষের জন্য এটি একটি স্বাভাবিক অসুস্থতা।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বর দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতীও হতে পারে। আর এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়। এ সময়গুলোতে শরীরে জ্বর, ঠাণ্ডা ইত্যাদি বিষয়ে সাবধানতার পাশাপাশি দোয়া পাঠ করার শিক্ষা দেয় ইসলাম।

হাদিসে বর্ণিত জ্বর থেকে মুক্তিলাভের দোয়াটি হচ্ছে- بِسْمِ اللَّهِ الْكَبِيرِ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ عِرْقٍ نَعَّارٍ وَمِنْ شَرِّ حَرِّ النَّارِ ‘বিসমিল্লাহিল কাবির, আউজুবিল্লাহিল আজিমি মিন শাররি ইরকিন না’আর, ওয়া মিন শাররি হাররিন নার।’ অর্থ: মহান আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি; প্রবল প্রবহমান রক্তচাপের আক্রমণ থেকে এবং জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের অনিষ্ট থেকে।’ (তিরমিজি: ২০৭৫; নাসায়ি; মকবুল দোয়া: ১৬৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জ্বর ও অন্যান্য ব্যথায় আল্লাহর রাসুল (স.) আমাদের এই দোয়াটি পড়ার শিক্ষা দেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সব ধরনের অসুস্থতা থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।




যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তাদের সম্পর্কে নবীজি যা বলেন

আল্লাহর ভয়ে নির্গত চোখের পানির মূল্য আল্লাহর নিকট অনেক বেশি। হাদিসে এসছে, ‘আল্লাহর নিকট দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কিছু নেই। এক. আল্লাহর ভয়ে নিঃসৃত অশ্রুফোঁটা। দুই. আল্লাহর রাস্তায় নির্গত রক্তের ফোঁটা।’ (তিরমিজি : ১৬৬৯)

যার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি নির্গত হয়, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এমন অসম্ভব, যেমন দোহনকৃত দুধ পুনরায় ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না।’ (তিরমিজি : ১৬৩৩)

অন্য হাদিসে , ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে। দুই. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটায়।’ (তিরমিজি : ১৬৩৯)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে মুমিন বান্দার দুচোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয়, এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ: ৪১৯৭) হাশরের কঠিন দিনেও আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জন্য বিশেষ ঘোষণা রয়েছে হাদিসে। সেদিনের কঠিন পরিস্থিতিতে সাত শ্রেণির মুমিন আরশের নিচে আশ্রয় পাবেন। তাদের এক শ্রেণি সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণের সময় তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।’ (বুখারি: ৬৬০; মুসলিম: ৭১১)

রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের বেশি বেশি কান্না করার উপদেশ দিতেন। কেননা মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ যেখানে গুনাহের শাস্তি হিসেবে বান্দাকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারেন, সেখানে রহমত করছেন, বান্দাকে দিয়ে যাচ্ছেন অবারিত সুযোগ-সুবিধা; ভাবতেই তো মুমিনের চোখ দিয়ে পানি চলে আসার কথা। তাই তো রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন— ‘..আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কম হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে যে- আল্লাহর শপথ! হায়, আমি যদি একটি গাছ হতাম এবং তা কেটে ফেলা হত!’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৯০; মেশকাত: ৫৩৪৭; সহিহাহ: ১৭২২)

অতএব আমাদের উচিত, মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে কৃত গুনাহর জন্য ইস্তেগফার করা, তওবা করা। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের সব পাপ সাফ করে দেবেন এবং জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর অন্তরে তাঁর ভয় জাগ্রত করে দিন। তাঁর আদেশ নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।