ভবন-রেস্টুরেন্ট মালিকের দোষ কর্মচারীর ওপর

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের পপাইস কফি অ্যান্ড ফাস্টফুডে আট কর্মচারী কাজ করেন নিয়মিত। যা বেতন পান তাতে সংসার খরচের পর কিছুই থাকে না। রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিন দিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। দোকানটি বেশি দিন বন্ধ থাকলে বেকার হয়ে যেতে পারেন– এমন আশঙ্কা তাদের।

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের মধ্যেই এ ভীতি ভর করেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তারও হতে হচ্ছে কর্মচারীদের। তাদের ভাষ্য, রাজধানীর প্রায় সব রেস্তোরাঁ ভবন মালিকের কাছ থেকে ফ্লোর ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে। সে পটভূমিতে নিয়ম-অনিয়মের জন্য দায়ী হওয়ার কথা ভবন মালিক ও রেস্তোরাঁ মালিকদের। তবে হয়রানির মুখে পড়ছেন কর্মচারীরা। পুলিশ কর্মচারীদেরই ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

বছরের পর বছর রাজধানীর রেস্তোরাঁর বিষয়ে নজরদারি ছিল না সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ হারানোর পর যেন চেতনা ফিরেছে তাদের। নড়েচড়ে বসে সেবা সংস্থাগুলো। বেইলি রোডের ওই ট্র্যাজেডির পর ৩ মার্চ থেকে রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ, রাজউক ও সিটি করপোরেশন। প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন ছিল কোথায় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা? গ্রিন কোজি কটেজে যখন আটটি রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল, তখন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এতে কি দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোনো দায় নেই? আর দুর্ঘটনার পর ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হচ্ছে। হয়রানি করা হচ্ছে নিরীহ কর্মচারীদের।

গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত তিন দিনে রাজধানীতে ১ হাজার ১৩২ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রাখায় ২০৭ দোকানে এবং আটটি রাসায়নিক গুদামে অভিযান চালায় পুলিশ। তিন দিনে ৮৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে আদালতে প্রসিকিউশন দেওয়া হয়। প্রসিকিউশন সংখ্যা ৮৮৭টি। প্রসিকিউশনে অভিযুক্তরা আদালতে অর্থদণ্ড দিয়ে ছাড়া পান। অবশ্য ২০ মামলা হয়েছে এই তিন দিনে।

এর মধ্যে মঙ্গলবার ৪০২ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২২৮ জনকে। আর আদালতে প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছে ১৯২টি। মামলা হয়েছে ১০টি। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রাখার অভিযোগে ১০৩ দোকান ও পাঁচটি রাসায়নিক গুদামে অভিযান চালানো হয়।

এ ছাড়া রাজউক ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২৩ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

গতকাল বিকেলে মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার লাল মিয়ার হোটেলের সামনে রাস্তার ওপর গ্যাসের চুলা লাগিয়ে রান্না চলছিল। এ সময় খিলগাঁও পুলিশ হোটেলের ব্যবস্থাপক আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রসিকিউশন দেওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল খিলগাঁওয়ের ২৫/বি ভবনে অভিযান চালিয়ে কেএফসি, ডোমিনোজ পিৎজা, সিক্রেট রেসিপিসহ চার প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। যখন ওই ভবনে অভিযান চালানো হয়, তখন আল কায়েদা পার্টি সেন্টার ও ক্রিমসন কাপ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ পাওয়া যায়।

রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম বলেন, কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজায় ফায়ার সেফটি ও বিকল্প সিঁড়ি পাওয়া যায়নি। আবাসিক ভবনে এই রেস্তোরাঁ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অনিয়মের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া সিক্রেট রেসিপিকে ২ লাখ ও চায়না ল্যান্ড রেস্টুরেন্টকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি বলেন, তাদের সব নিয়মকানুন মেনে প্রতিষ্ঠান চালাতে বলা হয়েছে। রেস্তোরাঁ মালিকের পাশাপাশি ভবন মালিককেও আইনের আওতায় আনা হবে।




নির্বাচনকালে নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইল যুক্তরাষ্ট্র

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সরকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করবে এবং কীভাবে নিরাপত্তা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে– তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের ভূমিকাও জানতে চায় তারা। ঢাকা-ওয়াশিংটন নবম নিরাপত্তা সংলাপে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ওই সংলাপ হয়। ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিকবিষয়ক আঞ্চলিক নিরাপত্তার ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা কে রেসনিক সংলাপে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। সংলাপ শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মিরা কে রেসনিক।

একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় যেন কোনো সহিংসতা না হয়। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার কী পরিকল্পনা নিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে ওয়াশিংটন।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। তবে কীভাবে তা করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

সংলাপ শেষে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবাধিকার বিষয়ে যেসব বাধ্যবাধকতা রয়েছে, বাংলাদেশ সেগুলো পূরণ করছে। সংলাপে বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তারা নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশ অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী এ কথা অনেকবার বলেছেন। তিনি বিদেশিদেরও বলেছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এটি নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি ইসি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানেও যদি সাহায্য লাগে, যুক্তরাষ্ট্র করতে চেয়েছে। তবে রাজনৈতিক দল কে কী ভাবছে তা তো আমরা বলতে পারব না।’ তবে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাদে, মানবাধিকার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরাসরি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, যেহেতু এটি প্রতিরক্ষা সংলাপের আলোচনার বিষয় ছিল। তবে আমরা বলেছি, বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশ থেকে এ বিষয়ে আমরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি।’

র্যা বের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘র্যা বের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু আলোচনা করেছে। আমরা জানিয়েছি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে সেগুলোর উত্তর আমরা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিই। আমাদের দেশে বিচারহীনতার কোনো সুযোগ রাখি না। র‌্যাব-পুলিশ প্রত্যেকেরই আচরণবিধি রয়েছে। একটা গুলি খরচ করলেও জবাবদিহি করতে হয়। সব অভিযোগ বা দুর্ঘটনায় যে সরকার জড়িত থাকে এমন নয়। যেমন, গাজীপুরে এক শ্রমিক নেতা মারা গেছেন। সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই। শেষ পর্যন্ত আমাদেরই জবাবদিহি করতে হয়।’ র্যা বের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিকে অনেক মিল রয়েছে। সেখানে যাতে মুক্তভাবে জাহাজ চলাচল করতে পারে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার যাতে পূর্ণ ব্যবহার হয়– এগুলোর বিষয়ে দুই দেশ একমত। তারাও চান না, কোনো সুনির্দিষ্ট দেশ আধিপত্য বিস্তার করুক বা মুক্ত চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক।’ যুক্তরাষ্ট্র একক আধিপত্য বলতে চীনের কথা বলেছে কিনা– জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি পররাষ্ট্র সচিব।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘র্যা বের ওপরে আপাতত তাদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আমাদের পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ অন্য বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে তাদের সহায়তা যেন অব্যাহত থাকে। আর্মি টু আর্মি জয়েন্ট এক্সারসাইজ আছে, সেগুলো অব্যাহত থাকবে এবং আগামীতে আরও জোরদার হবে।’

সংলাপে রোহিঙ্গা ইস্যুতে হালনাগাদ তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা হয়। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই সংকটের সমাধান চাই। মানবিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে কীভাবে ফেরত পাঠানো যায় সে বিষয়েও আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। তবে, রাখাইনে এই মুহূর্তে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আলাদা কোনো মনোভাব নেই, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হলে এবং স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে প্রত্যাবাসনে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই বৈঠক হবে। বৈঠকে তিস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু রয়েছে। সবগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। কানেকটিভিটি ও তিস্তার পানির বিষয়ে কথা হবে। জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যু নিয়েই আলাপ হবে। দুই দেশের মধ্যে অনেক প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি আলোচনা হবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। খাদ্য নিরাপত্তা, নিষেধাজ্ঞা, কাউন্টার স্যাংশন নিয়েও আলোচনা হবে।




জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আগামী বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে জানানো হয়, ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সকল নিয়মিত, অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ।




তিন শিশুকে মামলায় জড়িয়ে পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ

নদীতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মানিকগঞ্জ আদালতে মামলা করেন বাবা। এতে শিশুটির তিন বন্ধুকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের বয়স যথাক্রমে ১২, ১০ ও ৯ বছর।

এর প্রতিবাদে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি এলাকার বাসিন্দারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার তসভি ডাঙ্গা এলাকায় পালিত হয় এ কর্মসূচি।

আসামি করা শিশুদের স্বজন ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, ২০ আগস্ট ওই চার শিশু স্থানীয় কালিগঙ্গা নদীর সেতুর নিচে গোসলে যায়। সেখানে দাপাদাপির সময় নিখোঁজ হয় অপূর্ব (১১)। তিন বন্ধু বিষয়টি টের পেয়ে বড়দের ডেকে আনে। তাদের সহায়তায় নৌপুলিশের ডুবুরিদল উদ্ধার অভিযান চালিয়েও সেদিন অপূর্বর খোঁজ পায়নি। এর দু’দিন পর ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরে শিশুটির লাশ ভেসে ওঠে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাশ শনাক্তের জন্য অপূর্বর স্বজনদের সংবাদ পাঠানো হলেও তারা আসেননি। পরে তিন বন্ধু লাশটি অপূর্বর বলে শনাক্ত করে। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করে। পরিচয় নিশ্চিত হতে তারা ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্তও নেয়।

এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ আদালতে মামলা করেন অপূর্বর বাবা আব্দুল মালেক। তিনি ছেলেকে হত্যা ও গুমের অভিযোগ আনেন। এতে ৯ বছর বয়সী শিশুটিকে পাঁচ নম্বর, ১২ বছর বয়সী শিশুকে ৬ নম্বর ও ১০ বছর বয়সী শিশুটিকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়। ওই শিশুরা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পড়ে। তাদের বাবা-মাকেও আসামি করা হয় এ মামলায়।

সোমবারের বিক্ষোভে স্থানীয় বিশিষ্টজন অভিযোগ করেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ইশারায় মৃত শিশুটির বাবা মিথ্যা মামলা করেছেন। এর মাধ্যমে তিন শিশুর পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে। সেখানে বক্তব্য দেন তিল্লী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুরছালিন বাবুসহ অন্যরা।

বক্তব্য জানতে মামলার বাদী আব্দুল মালেকের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁকে বাড়িতেও পাওয়া যায়নি। স্বজনরাও কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, শিশু নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি। আদালতে মামলা হয়েছে বলে শুনেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত আদালত থেকে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র থানায় আসেনি।




কাস্টমস গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ উধাও

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউস থেকে অন্তত ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। যে কোনো মূল্যে চুরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা। চুরি হওয়া স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিঞা বলেন, কাস্টম হাউসের ভল্ট থেকে চুরির ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। পুলিশ জানায়, রোববার দুপুরের দিকে ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরির বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই এলাকাটি সংরক্ষিত। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে।

অবৈধ উপায়ে আনা যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ স্বর্ণের বার, অলংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র কাস্টম হাউসের গুদামে রাখা হয়। উধাও হওয়া স্বর্ণের মধ্যে অলংকার ও স্বর্ণের বার রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো চক্র সুকৌশলে কাস্টম হাউস থেকে জব্দ স্বর্ণ সরিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে সরানো হয়েছে, নাকি একবারেই গায়েব করা– তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জব্দ মালপত্র গুদামে ঠিকঠাক রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে কয়েক দিন ধরেই নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছিল কাস্টম হাউস। আলাদা একাধিক দল গুদামের মালপত্রের তালিকা প্রস্তুত করছিল। এ সময় তারা দেখতে পায়, গুদামের একটি তালা বাইরে থেকে অক্ষত থাকলেও ভেতরের লকার ভাঙা। এর পরই স্বর্ণ চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা চার শিফটে কাজ করেন। সব শিফটে জব্দ করা স্বর্ণ একটি গুদামে রাখা হয়েছিল। স্বচ্ছতার জন্য ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ সম্প্রতি জব্দ করা স্বর্ণ শিফটের ভিত্তিতে আলাদা লকারে রাখার নির্দেশ দেন। বিভিন্ন শিফটে জব্দ হওয়া স্বর্ণ ওই শিফটের নির্ধারিত লকারে রাখতে বলেন তিনি। পরে গুদামে থাকা স্বর্ণের হিসাব করার জন্য একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটি প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। কাস্টম হাউস ছাড়াও সিআইডি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি দল দোষীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।

বিমানবন্দরের ভেতরে হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই কাস্টমসের গুদাম।




বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আরও ২৩ ককটেল উদ্ধার

বেনাপোল স্থলবন্দরের ৩৫ নম্বর কেমিক্যাল শেডের পশ্চিম পাশে একটি মুদি দোকানের পেছনে ড্রেনের ভেতর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে এ ককটেলগুলো উদ্ধার করা হয়।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি বেনাপোল স্থলবন্দরের ৩৫ নম্বর কেমিক্যাল গোডাউনের পশ্চিম পাশে একটি মুদি দোকানের পেছনে ড্রেনের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২৩টি তাজা ককটেল রয়েছে। পরে বেনাপোল পোর্ট থানার একটি টিম নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করি। উদ্ধার করা ককটেলগুলো পানিতে ভিজিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। কে বা কারা এ ককটেল সেখানে রেখেছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।




সরকারি জমির দখল নিয়ে সংঘর্ষ, ২ মামলা

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে লিজ নেওয়া সরকারি জমির দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। শনিবার মাহমুদা আক্তার মীম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার দেলোয়ার হোসেন নামে আরেকজনের মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

উপজেলা ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপ্তারা সত্যভান্দি এলাকায় প্রায় ২ দশমিক ৫২ একর সরকারি জমি আবু তাহেরকে ১৯৮৫ সালে লিজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫২ শতাংশের লিজ বাতিল করে ২০১৭ সালে সরকারি আবাসিক বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। লিজ দেওয়ার সময় স্থানীয় আবু তাহের, ওহাব মিয়া, মো. মুসা, নুরুল হক, মকবুল হোসেন ও আবু হানিফ মিয়া যৌথ পরিবারে বসবাস করতেন।

পরে যৌথ পরিবার ভেঙে গেলে জমির ভাগ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। আবু তাহেরের নামে লিজ হওয়ায় অন্যদের দিতে রাজি হননি। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের বাবা মুসা জমি সমহারে বণ্টনের জন্য তিন মাস আগে ইউএনওর কাছে আবেদন করেন। গত ২৯ আগস্ট ইউএনও ইশতিয়াক আহম্মেদ সেখানে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন।

পরে আবু তাহেরের পরিবারের সঙ্গে অন্যদের বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। দু’দিন পর শুক্রবার আবু তাহেরের ছেলে দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে তাঁর চাচা ও চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। শনিবার তাঁর চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার পাল্টা মামলা করেছেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, জমিটি বাপ-চাচারা একত্রে থাকাকালীন লিজ নেওয়া হয়েছে। সবাই আলাদা হয়ে যাওয়ায় সমহারে বণ্টনের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু চাচা আবু তাহের ও তাঁর ছেলেমেয়েরা রাজি না হওয়ায় বিরোধ চলছে। গত ২৯ আগস্ট ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করলে তাদের হাতে মারও খেয়েছেন। তবে দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর বাবার নামে লিজ নেওয়া জমি দখলের জন্য প্রতিপক্ষ হামলা করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, কোন পরিস্থিতিতে সরকারি জমি লিজ দেওয়া হয়েছে এবং ভাইদের অবদান কতটুকু, সব বিষয় যাচাই-বাছাই করে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। আড়াইহাজার থানার ওসি ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব জানান, উভয়ের মামলা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।




বড় হওয়ার মতো নির্মমতা

স্কুলের ছোট্ট ক্লাসের জানালা দিয়ে যে বড় ক্লাস দেখা যায়, সেখানে যে বড়দের দল, গলাগলি ফিসফিস করে, মনে হতো জীবনের অপার রহস্য তাদের কাছেই। তাদের ক্রস ওড়নার আড়ালে যুবতী স্তন, হা হা হি হি হাসতে হাসতে ঢলে পড়া, কানাকানি ছোট্ট দৃষ্টিতে বোধ হতো সেটাই গন্তব্য জীবনের। মাঝের ঐ বিশাল সবুজ গালিচা মাঠ পেরিয়ে সেখানে পৌঁছে গেলেই বোধহয় জানা হবে জীবনের সবটুকু। কী অপার আকাঙ্ক্ষা, কী তৃষ্ণা… তৃষ্ণা আমার বক্ষজুড়ে। আমিও একদিন তাদের মতো বড় হব। বালিকা থেকে নারী। না দেখে ফেলে যাওয়া বড়দের দল যেদিন আবিষ্কার করবে আমি তাদেরই একজন, সেদিনই বোধহয় আমি আমি হব। আমি বড় হব। বড় হওয়াই একমাত্র সাধনা জীবনের। বড়দের জন্য স্কুল গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে মজনুরা। যেদিন আমার এমন মজনু হবে, সেদিন বুকের ভেতর সুগন্ধি রুমাল রাখার মতো বড় হব আমি, সেদিনই আর কিচ্ছু থাকবে না চাওয়ার, কিচ্ছু থাকবে না পাওয়ার বাকি।

না খুব দীর্ঘ সময় তো নয়। চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেই যখন পৌঁছে গেলাম ‘আমি তখন নবম শ্রেণি, আমি তখন ষোলো’র বেঞ্চে, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বিশাল সেই মাঠ, যাকে অতিক্রম করতে হাঁপিয়ে যেতাম একদা, সেই মাঠটি কবে ছোট্টটি হয়ে গেছে! দেখলাম ছোট্ট মাঠ পেরিয়ে ছোট্ট ক্লাসের জানালা গলে ঠিক একজোড়া অবাক দৃষ্টি। সেই দৃষ্টিতে আমি আবিষ্কার করি আমাকে। অবিকল আমি। আজকের আমার কাছে পৌঁছানোর সেই দিনের আমার যে আকুলতা, তার দৃষ্টিতেও একই আকুলতা। ‘বিস্ময়ে ভ্রমি’র অপেক্ষায় থাকা দৃষ্টিকে আমার মায়া হয় খুব। বড়দের সারিতে বসলে দায়িত্ব এসে কাঁধে চাপে, পরীক্ষার চাপ উদ্বিগ্ন করে। উদ্বিগ্ন করে, অশান্ত করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা। আহা ঐ অপ্রাপ্তবয়স্ক দৃষ্টি জানে না, জানে না যে এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। আহা এই চেয়ে থাকা জানে না পথ ফুরিয়ে গেলে যেখানে পৌঁছানো যায়, গন্তব্য যার নাম… সেখানেই সব কঠিনের শুরু, সেখানেই সব সহজের শেষ। সেখানেই শেষ অপাপবিদ্ধ আনন্দের, যে আনন্দের নাম জীবন। জীবন থেকে সব সহজ হারিয়ে গেলে সেই সহজের আক্ষেপে দিন কাটিয়ে দেওয়ার নামই জীবন। অথচ জীবন ছিল সেই সহজ দিনগুলোতেই, যখন সহজলভ্য সহজ কিংবা জীবন কিছুরই মানে ছিল না। ভোরবেলায় যে ভোর হতো চা-মুড়ির গন্ধে। তেরছা করে রোদ ঢোকে যেত পুবের দরজা দিয়ে রান্নাঘরের মাটিতে। আছড়ে পড়ে জানান দিত ধেয়ে আসছে প্রয়োজন, জীবনের প্রয়োজন। কিন্তু বালিকার তা বোঝার দায় ছিল না। পরিবার আগলে রাখা অভিভাবকের দল। মা পাখির ডানার নিচে বাচ্চা পাখির কিচিরমিচির করা অনর্থক দিনযাপনে ছায়া ফেলতে পারে না জীবনের কোনো জটিলতা। অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে জ্বাল দেওয়া চা কাপে ঢালতে ঢালতে মায়ের শাঁখা-পলায় ঝুলতে থাকা সেফটিপিনে বাঁধা থাকত সব সমাধান। ফ্রকের বোতাম যদি ছিঁড়ে যায় কিংবা পাজামার ফিতে পথ হারায়, মায়ের হাতে রয়েছে তো নির্ভরতা। কী যে জরুরি ছিল মায়ের সে হাত। যে জীবনে মা থাকে, সে জীবনে আর কিছুর দরকারই পড়ে না। মায়ের হাতে বেড়ে দেওয়া চা-মুড়ির চেয়ে প্রিয় কোনো ভোরের গন্ধ নেই এখনও আমার কাছে। সেই ভোরে কাঠ কয়লায় দাঁত মেজে বিছানায় বই মেলে বসলে মা এনে সামনে দিতেন সেই অমৃত। কারও কি এখন দিন শুরু হয় চা-মুড়ি দিয়ে, গ্রামে কিংবা শহরে? সন্ধান পেলে ছুটে যাব। চা-মুড়ির জন্য ছুটে যেতে হয় না। চাইলেই পাওয়া যায়। সরিষার তেল মাখা মুড়ি আর এক কাপ চা সহজলভ্যই খুব। কিন্তু সহজলভ্য নয় সময়ের অনুভূতি। অনেক চা অনেক মুড়ি… কিছুতেই ফিরে আসে না ফেলে আসা সময়ের ভালো লাগা। মায়ের মমতার ছোঁয়াহীন চা-মুড়ি কেবলই খাবার, উদরপূর্তির উপকরণ। টের পাই চা-মুড়ি হারাইনি। হারিয়েছি সময়ের সহজতা। সহজতার সারল্য, সারল্যের ভালো লাগা। এ এক মোহময় কর্পূর। ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়ে কোথায় মিশে যায়। বাকি জীবন তার সাথে জলের মতো ঘুরে ঘুরে কেবল কথা কওয়া। আর ধরা যায় না… ছোঁয়া যায় না…। জানি যা যায় আর ফেরে না কখনও। সুইমিং পুলের নীল জলে কখনোই ফেরে না পুকুরের শ্যাওলা সবুজ জলের উদ্দাম দুপুর। দল দল শৈশব কৈশোর। ঝাঁপিয়ে পড়া। অনতিদীর্ঘ দুপুরকে এই জলের গায়েই বিকেলে ঠেলে দেওয়া। মায়ের তাড়া। পথ চলতে চলতে আমি উন্মুখ হয়ে পুকুর খুঁজি এখন। ঝাঁক বাঁধা মাছের পোনাদের অভয়ারণ্য পুকুর, শ্যাওলার ঘ্রাণ মাখানো বাতাসের নীরব ঘুঙুর বাজানো পুকুর। বড় দুর্লভ এখন। পৃথিবীর সব পুকুর ডুবে গেছে উন্নয়নে কিংবা বিলাসের প্রাচুর্য্যে। সাথে নিয়ে গেছে বালক-বালিকার উদ্দাম শৈশব। মাটি ফুঁড়ে এখন সজল স্রোত নয়, গড়ে ওঠে ইমারত। কঠিন ইট-পাথরের ইমারত। যে ইমারতে কোনো ছিদ্র নেই মায়ার, আবেগের। কঠিন সেই ইমারতের জটিল ম্যাপে ম্যাপে মানুষের জীবনের জটিলতা। দক্ষ আর্কিটেক্টের গেঁথে দেওয়া। তবু এই নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে এখনও গ্রাম হয়ে পড়ে থাকা কোনো জনপদের অচেনা পথ ধরে হাঁটতে গেলে হঠাৎ দেখা মেলে এক শান্ত দীঘির অপ্রয়োজনীয় পড়ে থাকা, দীঘির জলে কার ছায়া! স্মর্তির! সেই শ্যাওলার ঘ্রাণ। নুয়ে পড়া গাছের ডালের জলের সাথে মাখামাখি। ব্যস্ততাকে প্রতারণা করে একটা দুরন্ত মুহূর্ত তখন টুপ করে ঢোকে পড়ে স্মৃতির কপাট খুলে। আমি সন্ধান পাই সমবয়সী হল্লার সেই জল ঝাপটানো দুপুর, একসাথে সাঁতার কাটা, মাছের গা থেকে নিজের গায়ে লেগে যাওয়া মৎস্যগন্ধ। যে মৎসগন্ধার অনিবার্য ডাকে যৌবন আসে, আসে মনোহরা যুবরাজ। সেই যুবরাজ এখন যে কোনো পুরুষ। একই চোখ কিন্তু দৃষ্টিতে সামাজিক শীতলতা। যে শীতলতায় যা কিছু থাকুক, কোনোকালে প্রেম ছিল কল্পনায়ও আসে না। কত দুপুরের গায়ে লেগে আছে একান্নবর্তী কাঁসার থালা, গ্লাস। মাটিতে সারি বেঁধে বসা। ঘি মাখা আলু ভাজি মুগ ডাল আর মেথি ফোড়ন দেওয়া ঝোলে কাতলা মাছের পেটি। মা দিয়ে যাচ্ছেন পাতে পাতে। কত সহজ ছিল মাছের টুকরো নিয়ে তুতো ভাইবোনদের ঝগড়াঝাঁটি। রাগ করে না খাওয়া দুপুর। রুই-কাতলার এ দিন ছিল বড় আনন্দের দিন। রাজকীয় খাবারের। আর বাকি দিনগুলো দিন এনে দিন খাওয়া ট্যাংরা, পুঁটি। রসুনমাখা কাঁচামরিচে জুঁই ফুল ভাত ফুটে থাকত লোভের জিহবা ছুঁয়ে। মনে হতো শেষ না হোক এই দুপুর, এই স্বাদ। একজনের রোজগার পনেরো জনের হাঁড়ি। শুধু ভাতের জোগানটুকু হয়ে গেলেই সবাই মনে মনে জানত, যাক আর চিন্তা নেই। শুধু ভাতের প্রয়োজনটাই শুধু প্রয়োজন ছিল যখন। আজ যে বুফে লাঞ্চ আর স্টারের কাচ্চি গ্রাস করেছে দুপুরের লোকমা, কোথায় যেন খুব ক্লান্তি। যেন চাওয়ার মতো কোনো গন্তব্য নেই। যাওয়ার মতোও। এই হইহই রেস্টুরেন্ট লাঞ্চ আর টেবিলে পঞ্চব্যঞ্জনের গন্ধে অরুচি ধেয়ে এসে গিলে খায় খাবারের ইচ্ছে। পেটের খিদে মেটানোর সহজ আনন্দ হারিয়ে গেছে হরেক রকম রেসিপির বাহুল্যে। ভাতের প্রয়োজনের চেয়ে কত বড় বড় প্রয়োজন গ্রাস করেছে দৈনন্দিনতাকে। ভাত হয়ে গেছে সবচেয়ে গৌণ প্রয়োজন। জীবনে যখন ভাতের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় জীবন তখন কঠিনের সমার্থক হয়ে যায়। অথচ কী ভুলেই না আমরা ভাবি জীবন বুঝি ভাতের অভাবই বোধহয় সবচেয়ে বড় সংকট জীবনের! মায়ের তন্দ্রার ঘোর ফাঁকি দিয়ে পাড়ার সমবয়সীদের খেলার হল্লায় আমাদের বিকেল নামত স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে। সাদাকালো বিটিভিও ঢোকেনি তখনও টিনের চালার বসতঘরে। আশ্চর্য বিকেলগুলো আনন্দে ঝলমল করত গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধার হারজিতের ঘামে। সার্থক হয়ে উঠত অর্থহীন ঝগড়াঝাঁটিতে। তারপর কখন যে টম অ্যান্ড জেরির অতিবুদ্ধির কৃত্রিম আনন্দ রঙেঢঙে ঢেকে দিল আমাদের নিষ্পাপ বিকেল। আমাদের কাছে বড় হয়ে উঠল বড় হওয়া। পাড়ায় পাড়ায় কোচিং সেন্টার, আমাদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার তাড়ায় ডুবে গেল সমবেত আনন্দের বিকেল। আমাদের পাড়ার পাড়ার মাঠগুলো চলে গেল হাইরাইজ উন্নয়নের দখলে। সন্ধ্যা নামত অপার্থিব আজানে। ঘড়ি এক বিলাসী দ্রব্য, আসন গাড়েনি ঘরের দেয়ালে দেয়ালে। মসজিদের মাইকে বাজত সন্ধ্যার আবাহন। পাড়াময় উলুধ্বনি আর ঝাঁঝ-কাসর। ধূপ-ধুনোর পবিত্র অন্ধকার। আজ এবেলায় ভাবি, মুসলমানের আজান কী অদ্ভুতভাবে হয়ে উঠত ত্রিসন্ধ্যায় হিন্দু বাড়ির সন্ধ্যা প্রদীপের নির্দেশক। পাড়ার মসজিদে মুয়াজ্জিন মাগরিবের আজান দিলে সন্ধ্যা হয়, তাড়া করে বাড়ি ফেরার তাড়া। ততক্ষণে মায়ের চিমনি মোছা শেষ। কেরোসিনের গন্ধে তীব্র ঘুম আর স্বপ্নরা হানা দিত বইয়ের পাতায় পাতায়। জানালার পাশে হাসনাহেনার ভেসে আসা গন্ধে রাত নিঝুম হতো। উত্তর পাড়ার সুলেখাদির রেওয়াজের সুর থেমে উচ্চকিত হতো একটানা পড়ার সুর। শব্দ বলতে তখন সেই শব্দই। রাস্তায় টুংটাং রিকশার আওয়াজ থেমে যেত দ্রুত, থেমে যেত মানুষের গতির প্রয়োজন। হঠাৎ কান পাতলে কোনো যুবকের ছয় ব্যান্ডের রেডিও থেকে মূর্ছনা তুলত সৈনিক ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান দুর্বার…সারেং-এর সুর… ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া। পাঠ্যবই বন্ধ করে তুমুল বড় হয়ে ওঠার সাধ জাগত। আহা বড় হওয়া। যতটা বড় হলে দুর্বারের গান শুনতে থাকলে কেউ বকতে আসে না। পরদিন স্কুলের পড়া করার তাড়া থাকে না। সেই বড় হওয়ার আকুল আকাঙ্ক্ষাতেই গড়াত দিন। আমাদের বাইরঘরে যে আড্ডা বসত প্রতিদিন সন্ধ্যায়, রাজা-উজির মরত দাবার বোর্ডে কিংবা কথার খৈয়ে, তাতে আমার জানা হতো সারাবিশ্বের খবর। কিছু তার বুঝি, কিছু বুঝি না। কোথাও তারকা যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে কিংবা জোট নিরপেক্ষ বলেও কোনো জোট আছে। বিস্কুট বলতে প্যাকেটের ছোট্ট নাবিস্কো আর গরুর দুধে জ্বাল দেওয়া চা। বাইরঘরের আড্ডার অপেক্ষায় পড়তে বসা এক টুকরো সন্ধ্যা যেন নড়ত না। টুংটাং সাইকেলের আওয়াজে যখন একজন-দু’জন এসে জমত একে একে, পাড়াতো কাকা কিংবা অফিসের কলিগ, মায়ের শাসন তখন ঢিলেঢালা হতে শুরু করত; মাও কান পেতে থাকত অচিন দেশের খবরের সন্ধানে। জীবনের অপরিমেয় আনন্দ তো এই ফসকে যাওয়া সন্ধ্যাটাই। টিমটিমে আলোর নিচে সারি বাঁধা পিঁড়িতে ভাতের লোকমা মুখে তুলতে তুলতে বালিশের নিচ থেকে ডাকত ডালিম কুমার, সুঁই রাজকন্যা। ডাইনি বুড়ির নিষ্ঠুরতার গল্প পড়ে চোখের জলে যখন ঘুম নামত, বাবা নিশ্চয়ই আলোটা নিভিয়ে দিতেন তখন। বাবাই তো হাতে তুলে দিয়েছিলেন বইয়ের মতো আনন্দের সন্ধান। আরেকটু বড়বেলায় দুর্গার মৃত্যুতে কান্না এসে গলায় আটকে থাকার অসহনীয় যাতনার সুখ কিংবা অধরা মাসুদ রানার প্রেমে পড়ার সুখ আর দেবদাসের কষ্টে নিজেকে পারুর জায়গায় প্রতিস্থাপিত করার বেদনার সুখ বড়বেলায় অধরা হয়ে গেলে উপলব্ধি করি সহজ কথা যখন সহজে বলা যেত, তখনই কেবল জীবন ছিল জীবনের মতো। কত সহজ কারণে হাসা আর কত সহজ কারণে কাঁদা। হাতে যেদিন প্রথম জ্যামিতিবক্স এলো, সেদিন নিজেকে বোধ হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কতবার যে লাল প্যাকেট থেকে খুলে খুলে দেখা স্কেল-কম্পাস। জীবনের বড় বড় অনেক প্রাপ্তিতে সেই ছোট্ট বাক্স হাতে পাওয়ার আনন্দ আর ফেরে না। ফেলে আসা জীবনের সহজ আনন্দের বাঁকে বাঁকে আমরা কেবল বড় হতে চেয়েছি। বাবার কাছে চেয়ে নতুন জুতাজোড়া পাইনি। পাইনি পছন্দের স্কুল ব্যাগটা। না পাওয়ার যত আফসোস বড় হয়ে ঘুচিয়ে দেব। জীবনের প্রয়োজনে আমরা বড় হই, না পাওয়াও হয়তো ঘুচে যায়। আর সব পেতে পেতে জানা হয়, জীবনের সুখ এই পাওয়ায় নয়। বরং চাওয়ার আকুলতায়। কোথায় হারিয়ে যায় এই সহজ চাওয়ার আকুলতা! আমরা বড় হই। যতটা চাই তার চেয়েও বেশি বড়। জীবন জটিল হয়। জটিল জীবনে সত্য রূঢ় হয়। জানা হয় সব চাওয়া কখনোই পাওয়া যায় না। কেন পাওয়া যায় না, সেই সত্যও উন্মুক্ত হয়ে যায় বড়বেলার বুদ্ধির কাছে। বড় নির্মম এই সব জেনে যাওয়ার নির্মমতা। যতদিন এই নির্মমতা না জেনে চাওয়ার আকুলতা ততদিনই জীবন জীবন থাকে। আর বাদবাকি দিন কেবল যুদ্ধের কৌশল নির্ণয়, শকুনির মতো ধূর্ততায়…।




জাকের পার্টির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

জাকের পার্টির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা শুক্রবার সকালে রাজধানীর বনানীর কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বিরাজমান জাতীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্য্যালোচনা, সদ্য সম্পন্ন জাকের পার্টির চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিলের গুরুত্ব ও সফলতা, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার অপরিহার্যতা ও জাকের পার্টির অবিরাম কর্ম প্রচেষ্টা, আসন্ন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও জাকের পার্টির ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয় আজকের সভায়।

মোস্তফা আমীর ফয়সল কাউন্সিলে পূনরায় জাকের পার্টি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন প্রস্তাব, দেশ জুড়ে শোকরানা মিলাদ মাহফিল এবং কাউন্সিল সফল করায় জাকের পার্টি, সহযোগী সংগঠন সমূহ, মহিলা ফ্রন্ট ও ছাত্রী ফ্রন্টের তৃণমূল পর্য্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা, নেত্রী এবং সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়।




ড. ইউনূসের পক্ষে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য হুমকি: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বের ১৬০ বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চিঠি দিয়ে যে আহ্বান জানিয়েছেন তা বেআইনি ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য এধরনের বিবৃতি হুমকি- উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের উপাচার্যরা বলেন, বিষয়টি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগের ওপর অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি, গাজীপুর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

এতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাম্প্রতিক একটি বিবৃতি বা চিঠি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের অভিমত হলো, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সবকিছু আইন অনুসারে পরিচালিত হয়। স্বাধীন বিচার বিভাগ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং এক্ষেত্রে কারো কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

‘বাংলাদেশ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা এবং স্বাধীন। অর্থাৎ, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে, নির্বাহী বিভাগ এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’

‘বাংলাদেশের সংবিধানে দেশের সব নাগরিকের যেমন আইনের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার রয়েছে, তেমনি আইনের প্রয়োগ সকল নাগরিকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য’—উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় মন্তব্য করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের উপাচার্যগণ) দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করছি যে, বাংলাদেশের আইন ও বিচার বিভাগকে না জেনে, যথাযথ পর্যালোচনা না করে অযাচিতভাবে বিচারাধীন মামলার বিষয়ে বিবৃতি বা চিঠি দেওয়া ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ও দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগের ওপর অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ, যা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বিশ্বাস করে যে, বিবৃতি বা চিঠি প্রদানকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁদের বিভ্রান্তিমূলক ও অজ্ঞতাপ্রসূত মতামত প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের মতো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন।