উপকূল থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দূরে ‘সিত্রাং’

সাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এছাড়াও এটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে আবহাওয়া অধিদফতরের ৯নং বিশেষ সতর্কবার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় (অক্ষাংশ: ১৯.২° উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৮৯.২° পূর্ব) অবস্থান করছে।

এটি আজ দুপুর ১২টায় (২৪ অক্টোবর, ২০২২) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মধ্যরাত/আগামীকাল ভোর নাগাদ খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।




সন্ধ্যায় আঘাত হানবে; ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় আঘাত হানবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক  ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপান্তরিত  হয়েছে। আবহাওয়াবিদের তথ্য অনুযায়ী, আজ সন্ধ্যায় এটি আঘাত হানবে। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম  করবে।

তিনি আরও বলেন, সিত্রাং  বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। সব থেকে বেশি আঘাত  হানবে বরগুনা এবং পটুয়াখালী।




নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চলছে মাইকিং, প্রস্তুত আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলো

বাগেরহাটের উপকূলে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ভারি বৃষ্টি, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। মোংলা বন্দরে জারি করা হয়েছে ৭ নম্বর সংকেত। নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং চলছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে গতরাত ভর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। সময় বাড়ার সাথে সোমবার সকাল থেকে ভারিবৃষ্টি ও ঝড়োবাতাস বইছে। সিত্রাং মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাগেরহাট প্রশাসন।গতকাল বিকেলে দূযোগ কমিটির সভায়

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ৩৪৪ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ২৯৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ চার লাখ ৮০ হাজার টাকা উপকূলীয় উপজেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলার স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার মো মহিউদ্দিন জামান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সাবধান করতে মাইকিং করা হচ্ছে।

তাদের নিরাপদে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এদিকে মাছ ধরার জন্য২৮ তারিখ পযন্ত  নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রগামি ট্রলার গুলো ও শত শত জেলে নিরাপদে রয়েছে। বাগেরহাটের প্রধান ম্যসৎ অবতরণ কেন্দ্র কেবি বাজার সংলগ্ন ভৈরব নদীতে অনেক ট্রলার নোঙর করে রয়েছে।

বৃষ্টি  ঝড়ো হাওয়ার জন্য জেলা শহরের রাস্তা ঘাট অনেকটাই ফাঁকা। জরুরী প্রয়োজন এর মধ্যেও কিছু মানুষকে ছাতা নিয়ে বের হতে দেখা গেছে।

তবে আমবশ্যার সাথে ঘুনিঝড় হওয়ায় বাগেরহাটের উপকুলের  মানুষের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির মধ্যে  আতংক বিরাজ করছে।




৭ বিভাগে ভারি বৃষ্টির সতর্কতা, পাহাড় ধসের আশঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে দেশের সাত বিভাগে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামে হতে পারে পাহাড়ধস। সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তায় এই তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে সোমবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও হতে পারে ভূমিধস।

‘সিত্রাং’ বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি আসায় এরইমধ্যে মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় বিক্ষুব্ধ রয়েছে সাগর।

দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।




গতি বাড়িয়ে এগোচ্ছে ‘সিত্রাং’ ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

সময় যত ঘনিয়ে আসছে আরও উত্তাল হচ্ছে সাগর। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতিও।

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে।

আগামীকাল মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বরিশাল উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে দেশের চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার কথা জানায় আবহাওয়া অধিদফতর।

 

 

আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের ৮ নম্বর বিশেষ সতর্কবার্তায় এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়।

সতর্কবার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এর ফলে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলসহ বেশিরভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আগামীকাল ভোরে এটি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।




প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া

প্রকৃতি কখনো বিরূপ আকৃতি ধারণ করে। যেটাকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলি। যেমন- ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বর্ষণ, বন্যা, খরা, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প ও সুনামি প্রভৃতি।

প্রকৃতির যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আল্লাহর অধীনে। এসব কিছু কেবল তার হুকুমেই হয়। তার হুকুম ও আদেশের বাইরে গাছের একটি পাতাও নড়ে না।

পবিত্র কোরআনে দুর্যোগের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা,আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

দুর্যোগের আল্লাহর রাসুল (সা.) যা করতেন

দমকা হওয়া বইতে দেখলে রাসুল (সা.) আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যেতেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন। যখন বৃষ্টি হতো তখন তিনি খুশি হতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝোড়ো বাতাস বইত—তখন রাসুল (সা.) এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তেন—

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ




১৫জেলায় ৭ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১৫ জেলায় ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পূর্ভাবাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সোমবার (২৪ অক্টোবর) আবহাওয়ার ৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকবে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।




মঙ্গলবার ভোরে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’

পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে সিত্রাং; থাই ভাষায়, যার মানে হল পাতা।

ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিত্রাং আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এটির কেন্দ্রে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ অনুযায়ী এটি বাঁক খেয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসবে। মঙ্গলবার বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হেনে স্থলভাগে উঠে আসবে। তবে এখনো প্রায় উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এটি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সোমবার (২৪ অক্টোবর) অমাবস্যা। এ সময়ে সমুদ্রে জোয়ারে পানির উচ্চতা এমনিতেই বেশি থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ো বাতাস। ফলে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, সিত্রাং উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে থাকার ফলে দেশের কোন কোন উপকূলে আঘাত হানতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। প্রায় সব উপকূলেই এর প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল ২৫ অক্টোবর ভোরে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।




১০ জেলায় তীব্র ঝড়ের সম্ভাবনা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১০ জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, আজ ভোর থেকে ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া দেশের অন্যত্র পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি এবং বজ্র বৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকবে।




লক্ষ্মীপুরে ১শ’ ৮৫ আশ্রয়ণ কেন্দ্র প্রস্তুত

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সাইক্লোন শেল্টারসহ ১শ’ ৮৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্র ও ৬৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে জরুরী সভা ডেকে জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নূর-এ আলমের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন আহম্মদ কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) পলাশ কান্তি নাথ, পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক আশফাকুর রহমান মামুনসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সভায় জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এর থেকে মানুষ ও গবাদি পশু রক্ষায় সকল ধরণের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

দুর্গম এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য নদী এলাকায় মাইকিং করা হবে। যারা নদীতে আছেন তাদেরকে দ্রুত লোকালয়ে আনার জন্য নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে বলা হয়। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন শেল্টারসহ ১৮৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে ৩ হাজার ২৮০ জন মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। ৬৬টি মেডিকেল টিম কাজ প্রস্তুত রয়েছে। জেলার সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রস্তুত রাখার জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া ২৬০ মেট্টিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ৬০০ কার্টুন বিস্কুট সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলার প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত কর্মস্থল এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাহায্য ডেস্ক চালু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মোবাইল নাম্বারগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে।

নদীর ঘাটে নৌকা প্রস্তুত রাখতে হবে। যেন আটকা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কাজ করতে সুবিধা হয়। ঘূর্ণিঝড়ে নদী তীরে ভাঙন বেড়ে যায়। ভাঙন থেকে উপকূল রক্ষায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।