নেত্রকোণায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ

আব্দুর রহমান ঈশান, নেত্রকোণা প্রতিনিধঃ

নেত্রকোণায় বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের সময় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ হয়েছে। এতে ১২ পুলিশসহ অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে পৌর শহরের ছোটবাজার এলাকায় বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে এই ঘটনাটি ঘটেছে। দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে শহরের ছোট বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হতে থাকে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে শহরের প্রধান সড়কটি বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ সড়কটি ছেড়ে দিতে বলে। পরে পুলিশের সাথে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা, এক পর্যায়ে প্রধান সড়ক ফাঁকা করতে গিয়ে পুলিশের সাথে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় পুলিশ টিয়ারসেলসহ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েলসহ ১২ পুলিশ সদস্য সহ অন্তত ৩২ জন আহত হয়। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্নসম্পাদক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী চলাকালে পুলিশ এসে লাটিচার্জ করে। আমাদের ওপর হামলা চালায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের অন্তত ২০ জন নেতা কর্মী আহত হয়েছেন।

এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ ফখরুজ্জামান জুয়েল বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কর্মীরা সড়ক বন্ধ করে রাখে। এতে যানবাহনসহ জনগণের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পুলিশ এসে সড়ক ফাঁকা করতে চাইলে পুলিশের উপর হামলা চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদিকে আহত পুলিশ সদস্যরা প্রথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে । বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।




সরকারি কর্মচারী গ্রেফতারে পূর্বানুমতি বাতিলের রায় আপিলে স্থগিত

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এর আগে, গত ২৫ আগস্ট সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। পরে এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।




আজ বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

ঢাকা: বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (১ সেপ্টেম্বর)। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নামে এই রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি: বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে বিএনপির সব কার্যালয়ে ভোর ৬ টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দুপুর ১২টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) শেরেবাংলা নগরস্থ মাজারে বিএনপির জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফাতেহা পাঠ ও পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন।

বিকেল ৩ টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হবে। র‌্যালিতে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। দিবসটি উপলক্ষে ইতোমধ্যে পোষ্টার প্রকাশিত হয়েছে এবং আজ বিভিন্ন সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।

এছাড়া ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলিস্থানস্থ মহানগর নাট্যমঞ্চে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারাসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।

অনুরূপভাবে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সব ইউনিট বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। স্থানীয় সুবিধানুযায়ী আলোচনা সভা , র‌্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালনে তারা উদ্যোগ নেবেন।

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,. রাজনীতিতে আসার আগেও জিয়াউর রহমানের একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সবত্রই তাঁর একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না।

জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগ সন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়।
১৯৮৩: ওই বছরের ১ এপ্রিল বিএনপির বর্ধিত সাধারণ সভা থেকে খালেদা জিয়াকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়।

আগস্ট ১৯৮৪: বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসেন। এরপর খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার। কিন্তু অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গণতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন: স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা এগিয়ে চলেন খালেদা জিয়া। এ সময় আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। খালেদা জিয়ার গণআন্দোলন সফল হয়, দেশে ফিরে আসে গণতন্ত্র। সে সময় খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয় এবং তিনি ‘দেশনেত্রী’ আখ্যায়িত হন।

১৯৯১ সাধারণ নির্বাচন: খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফলে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এককভাবে সরকার গঠন করে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।




মাধ্যমিকে ক্লাস চলবে যেভাবে

ঢাকা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে ২ দিন ছুটি কার্যকর হওয়ার প্রেক্ষিতে ৬ দিনের শ্রেণি কার্যক্রম সমন্বয় করে ৫ দিনের জন্য পরিমার্জিত সময়সূচি প্রণয়ন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

বুধবার (৩১ আগস্ট) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এ নতুন শ্রেণি কার্যক্রম ঘোষণা করেছে। পরিমার্জিত সময়সূচি অনুযায়ী রোববার থেকে বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ-দশম শ্রেণিতে প্রতিদিন ৭টি করে ক্লাস হবে।

এতে বলা হয়, ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার ও শনিবার ২ দিন সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর করা হয়েছে । শিক্ষার্থীদের যাতে শিখন ঘাটতি সৃষ্টি না হয় এবং শিক্ষাক্রমের বিষয় কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত সময়সূচি পরিমার্জন করা হলো।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি: রোববার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন ৭টি করে সপ্তাহে মোট ৩৫টি শ্রেণি কার্যক্রম (পিরিয়ড) পরিচালিত হবে।

এক শিফট বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রমের ব্যাপ্তি দৈনিক সমাবেশ ১৫ মিনিট ও বিরতি ৩০ মিনিটসহ মোট ৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি: প্রতিটি শ্রেণি কার্যক্রমের  ব্যাপ্তি হবে ৫০ মিনিট। বাংলা, ইংরেজি এবং শাখাভিত্তিক ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের জন্য সপ্তাহে প্রতি বিষয়ে ৫ টি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের জন্য ৩টি শ্রেণি কার্যক্রম (পিরিয়ড) পরিচালিত হবে । অর্থাৎ সপ্তাহে মোট ২ টি (২৫ +৩) শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ঐচ্ছিক বিষয়ের জন্য ৫টি শ্রেণি কার্যক্রম (পিরিয়ড) পরিচালিত হবে।




জাতিসংঘের সামনে একুশ উদযাপন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির পেছনে প্রবাসী বাঙালিদের অবদানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালিদের অহংকারের একটি বিষয়ও আজ সারাবিশ্বে সমাদৃত। তা হলো জাতিসংঘের সামনে একুশের অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিরা ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ১৯৯২ সাল থেকে।

১৯৯২ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়া। এর মধ্যে স্প্যানিশ কার্পেন্টার আনা হলো। হোম ডিপো থেকে কাঠ কেটে আনা হলো। শিল্পী সজল পাল, বাঙালির চেতনা মঞ্চের হারুন আলী, আবদুর রহমান বাদশা, ছাখাওয়াৎ আলী, দিলদার হোসেন দিলু, শামীম হোসেনসহ আমরা সবাই মিনারের পাঁচটি স্তম্ভ সাত দিনের মধ্যেই মোটামুটি দাঁড় করাতে সক্ষম হলাম। কিন্তু ৮ ফুট ও ১০ ফুটের দুটি করে চারটি এবং ১২ ফুটের একটি স্তম্ভ মোট পাঁচটি মিনার আমরা কোনোভাবেই দাঁড় করানোর উপায় বের করতে পারছিলাম না। এ রকম একটি সিদ্ধান্ত ভাবা এবং তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া খুবই কঠিন ছিল সে সময়।

১৯৯১ সালে আমেরিকায় এসে ক্ষুণ্ণিবৃত্তির সন্ধান করতে গিয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদপত্র সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ সম্পাদিত ‘প্রবাসী’তে কাজে যোগ দিই। সেই সুবাদেই পত্রিকার উপদেষ্টা কথাশিল্পী জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, কবি শহীদ কাদরী ও ড. জাফর ইকবালের সঙ্গে অতি অল্প সময়ের মধ্যে যোগাযোগ ঘটে।

‘প্রবাসী’তে কাজ করার পাশাপাশি ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’ শুরু করতে গিয়ে বাঙালির চেতনা মঞ্চের কয়েকজন তরুণের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও উত্তর আমেরিকা বাংলা বইমেলা আয়োজনের কথা ওদের জানাই। ওরা জানাল, ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ১৯৯২ সাল থেকেই এ কার্যক্রম শুরু করতে চায় মুক্তধারা নিউইয়র্কের সঙ্গে যৌথভাবে। তারপর শুরু হলো আলোচনা, কীভাবে এর বাস্তবায়ন হবে।

গত ২৯ বছর ধরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মুক্তধারা ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ অনুষ্ঠান করে আসছে।

১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নিউইয়র্কে প্রচণ্ড বরফ পড়া শুরু হয়। বাঙালির চেতনা মঞ্চের সদস্য ছাখাওয়াৎ আলীর বাড়ির বেজমেন্টেই শহীদ মিনারের কাজ শুরু করলাম। শিল্পী সজল পাল ১০ দিনের মধ্যে একটি শহীদ মিনার দাঁড় করালেন। সবাই মিলে সজলের বাসায় শহীদ মিনারটি দেখে সিদ্ধান্ত নিই, এ বছর কার্ডবোর্ডের মিনারেই একুশের ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হবে। সবাইকে একুশের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আমন্ত্রণ জানানো হলো। প্রচণ্ড বরফের মধ্যে রাত ১১টা থেকে কথাশিল্পী জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ফরিদা মজিদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা ফরাছত আলী, প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জাসদ নেতা আব্দুল মোসাব্বিরসহ নিউইয়র্ক প্রবাসী শত শত মানুষ সমবেত হন ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে।

ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন, একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী, কবি শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, সৈয়দ শামসুল হক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রাবেয়া খাতুনসহ জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ, কানাডা প্রবাসী রফিক আহমেদ, ইউনেস্কোর বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ অনেক গুণী ব্যক্তি এই মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বাঙালির সংখ্যা ও সংগঠকের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশে ঘরে ও বাইরে অনেক শহীদ মিনার হলেও জাতিসংঘের শহীদ মিনার উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের কাছে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো অমলিন।

১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবক মোহাম্মদ রফিক কানাডা থেকে আসেন জাতিসংঘের সামনে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। ১৯৯৯ সালে তারই প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনের পর ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সামনের এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ইউনেস্কো ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাবৃন্দ। ২০১০ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে পাস হয়- প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। ২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘের সামনের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিবিদদের যোগ দেওয়া শুরু হয়।

২০১৬ সাল ছিল জাতিসংঘের সামনে একুশ উদযাপনের ২৫ বছর। এ বছর জাতিসংঘের সামনে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে স্থাপিত হয় মাসব্যপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাস্কর্য প্রদর্শনী। এ বছরই আমার আবেদনে ইউনাইটেড পোস্টাল সার্ভিস থেকে প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর স্মারক ডাকচিহ্ন। ২৪ বছর পর্যন্ত রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতিসংঘের সামনে শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হতো। ২০১৬ সাল থেকে ব্যাপক সংখ্যক আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিবিদের অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে আমেরিকায় দুপুর ১টা ১ মিনিটে শ্রদ্ধা জানানোর প্রথা শুরু হয়।

নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার সব সংবাদমাধ্যমসহ লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বাংলা ভাষাপ্রেমী সব বাঙালি অভিবাসী সমাজের নিরবচ্ছিন্ন ভালোবাসা না থাকলে কখনোই এ দীর্ঘ যাত্রা সম্ভব হতো না। আমরা এই বিশেষ দিনে অভিবাসী বাঙালি সমাজের কাছে আবেদন রাখছি, আসুন, আগে নিজের ঘর থেকে শুরু করি নিজ সন্তানদের সঠিক বাংলা শিক্ষাচর্চা। তাহলেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্জনের সার্থকতা পাবে।




কোম্পানীগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকের মৃত্যু

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে গত শুক্রবারের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ স্থানীয় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মোজাক্কের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে মারা যান তিনি। নিহত সাংবাদিক মোজাক্কেরের বড় ভাই ফখরুদ্দিন সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সাংবাদিক বোরহান দৈনিক বাংলা সমাচার ও বার্তা বাজার অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি। তিনি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। মোজাক্কের কোম্পানীগঞ্জের চরপকিরায় ইউনিয়নের নোয়াব আলীর ছেলে।

গত শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জের চাপারাশির হাটের পূর্ব বাজারে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় নিউজ সংগ্রহের সময় সাংবাদিক মোজ্জাকেরসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হন। আহত সাংবাদিককে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসাপাতলে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি আইসিইউতে ছিলেন।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন সমকালকে জানান, গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকের মৃত্যুর সংবাদ তিনি শুনেছেন। নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মোজাক্কেরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এক শোকবার্তায় মন্ত্রী মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এছাড়া শোক জানিয়েছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুল আনম সেলিম চৌধুরী।




চবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানববন্ধনে বাধার অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানববন্ধনে প্রশাসন বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তবে ১৫-২০ মিনিট পর আয়োজকদের প্রক্টর অফিসে ডেকে মানববন্ধন না করে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়।

মানববন্ধন বন্ধের এই ‘আচমকা স্থগিতাদেশের’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমা সমকালকে বলেন, ‘চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো জনগোষ্ঠীর জায়গায় পাঁচতারকা হোটেল বানানোর প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিলাম। আগের দিন প্রক্টরের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। তবে ওইদিন রাত ১১টায় প্রক্টর ফোন দিয়ে মানববন্ধন না করার জন্য বলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্নিষ্ট ইস্যু নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের মানববন্ধন করা যাবে না। মানববন্ধন করতে হলে বাইরে করতে হবে। তবে আমরা আজ (বুধবার) সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে ২৫-৩০ শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। ১৫-২০ মিনিট পর প্রক্টর ডেকে পাঠান। আমরা প্রক্টর অফিসে গেলে শহীদ মিনার থেকে চলে যেতে বলেন। তারপর আমরা চলে আসি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি। বাধা দেওয়া বা দাঁড়াতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু এটি আমাদের অ্যাকাডেমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় রিলেটেড নয়, তাই তাদের ফোন করে অনুরোধ করেছিলাম না করার জন্য। তারা সকালে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল এবং আমি তাদের ধন্যবাদ দিয়েছি।’