ডায়াবেটিস রোগীরা সকালের নাশতায় যা খাবেন

ডায়াবেটিস রোগ হলে খাবার খেতে হয় হিসাব করে। কিছু কিছু খাবার খাওয়া বারণ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে সকাল-বিকালের নাস্তায় খেতে পারেন কিছু স্ন্যাকস। যা আপনার পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে শরীর রাখবে ফিট।

​১. ঘুঘনি

সকালের নাশতায় খেতে পারেন ঘুঘুনি। এর মাধ্যমে মিলতে পারে পর্যাপ্ত শক্তি। এছাড়া প্রচুর ফাইবার থাকে এই খাবারে। তাই ঘুঘনি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরতি থাকে। ফলে সুগার বাড়ার আশঙ্কা কমে। এছাড়া আপনি ঘুঘনির সঙ্গে সালাদও খেতে পারেন। টমেটো, শসা, পেঁয়াজ দিয়ে আপনি ঘুঘনি খান। দেখবেন সমস্যার সমাধান সহজেই করতে পারছেন। তাই ঘুঘনি অবশ্যই একটা বিকল্প হতে পারে।

২. অঙ্কুরিত ছোলা

ছোলা খাওয়া খুবই ভালো। আর সেই ছোলা অঙ্কুরিত হলে আরও উপকারী হয়। অঙ্কুরিত ছোলা আপনি রোজ খেতে পারেন। এই খাবারে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে প্রোটিন। এছাড়াও ফাইবার থাকে ভালো পরিমাণে এই খাবারে। তাই আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে অঙ্কুরিত ছোলা। তবে আচার বা অন্যান্য জিনিস দিয়ে ছোলা মাখলে তার গুণ নষ্ট হয়। এমননি লবণও এতে মেশানো উচিত নয়।

​৩. কাবুলি ছোলা

কাবুলি ছোলা আপনি অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। সাধারণ ছোলার থেকে এর দানার আকার বড়। এছাড়া পুষ্টিগুণ মোটামুটি তুল্যমূল্য। এবার অনেকে কাবুলি ছোলা খেতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য এর ঘুঘনি ভালো। এছাড়া কেউ চাইলে ভিজিয়ে রেখে গ্রিন সালাদের সঙ্গে অনায়াসে খেতে পারেন কাবুলি। তাহলেই পেট ভরে থাকবে অনেকক্ষণ। আসলে এই খাবারে ফাইবার রয়েছে। এই কারণে আপনি ভালো থাকবেন। তাই চিন্তার কোনও কারণ নেই।

​৪. ভেজিটেবল স্যুপ

ডায়াবেটিস রোগীরা সকাল কিংবা বিকালের নাশতায় নিয়মিত খান ভেজিটেবল স্যুপ। এই স্যুপ খেলে অনেক দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়। কারণ মৌসুমী সবজির মধ্যে থাকবে নানা ভিটামিন ও খনিজ। সেই ভিটামিন ও খনিজ শরীরের জন্য ভালো। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবারের কথা ভুলে গেলেও চলবে না। এর মাধ্যমেই শরীরে সুস্থ হবে। কমবে সুগার।

৫. চিকেন স্যুপ

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিকেন স্যুপ খুবই ভালো। এই খাবারে মেলে প্রয়োজনীয় প্রোটিন। এছাড়া নানা ধরনের সবজি মেশানো থাকে। ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেলে। প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজে ভরপুর এই খাবার আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তাই সকাল-বিকালের স্ন্যাকস হিসাবে মুখে তুলতেই পারেন এই স্যুপ। এছাড়া যারা বাইরে থাকেন তারা ড্রাই পপকর্ন ও বালিতে ভাজা ছোলা খান। ভালো থাকবেন।




শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর আগে পরামর্শ নিন চিকিৎসকের

শুরু হয়েছে শীতকাল। এ সময় শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সঙ্গে থাকে পেটের সমস্যাও। এসব রোগ থেকে শিশুকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন সেটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম

* শীতের শুরুতে ও শেষে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে যায় কেন?

** এ ঠান্ডা তাপমাত্রায় কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করে। শিশুর শরীরও তাপমাত্রার হঠাৎ এ পরিবর্তন অর্থাৎ ওঠা-নামা অ্যাডজাস্ট করতে পারে না। ফলে শিশুর দেহে পরিবেশগত কিছু পরিবর্তন হয় এবং জীবাণুগুলো রোগ বিস্তার করে। ধুলাবালি বেড়ে যাওয়ার কারণেও এ সময় শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা ছাড়াও ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিস রোগ ছড়ানোর সুযোগ বেশি থাকে। ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে ঢুকে এখানকার পাতলা পর্দা বা ঝিল্লি যাকে মিউকাস মেমব্রেন বলে, তা ঠান্ডা হয়ে গিয়ে রক্তনালির সংকোচন ঘটে, ফলে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও বাড়ে।

* এ লক্ষণ বা রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক করণীয় কী?

** সর্দি, কাশি, ঠান্ডা, গলা ব্যথার সঙ্গে শিশুর শ্বাসের গতি লক্ষ্য রাখতে হবে। বুকের পাজরের নিচে দেবে যাচ্ছে কি না তাও দেখতে হবে। শ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ২ মাসের নিচের বাচ্চাদের ৬০-এর বেশি হলে, ২-১২ মাসের বাচ্চার ৫০-এর বেশি এবং ১-৫ বছরের বাচ্চার ৪০-এর বেশি হলে শিশুর নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কিওলাইটিস হয়েছে ধরা যায়। এ অবস্থায় ঘরোয়া চিকিৎসা না দেওয়াই ভালো। শ্বাসের হার স্বাভাবিক ও ঠান্ডা-কাশি থাকলে ছোট বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, কুসুম গরম পানি, লেবু পানি, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, শরীর স্পঞ্জ করে মুছে দিতে হবে, ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করে এমন রুমে শিশুকে রাখতে হবে এবং জনসমাগম হয় এমন জায়গা যেমন মার্কেট, কোনো অনুষ্ঠান, বাস-ট্রেন স্টপেজে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। এন্টি হিস্টামিন ওষুধ খেতে পারে। এরপরও সংক্রমণ বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* এক্ষেত্রে কোনো ধরনের এন্টি অ্যালার্জিক ও কফ সিরাপ ব্যবহার করা যায়?

** কিছু কফ সিরাপ আছে যা কফ সাপ্রেসেন্ট বা কফ দমিয়ে রাখে। কিছু আছে কফ এক্সপেকটরেন্ট বা কফ বের করে দেয়, কিছু আছে কফ হওয়ার তীব্রতা কমিয়ে দেয়, কিছু আছে সিডেটিভ অর্থাৎ তন্দ্রালুতা সৃষ্টি করে কফ কমায়।

গভীর, তীব্র কফে এটি ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলো ডাক্তারের পরামর্শেই ব্যবহার করা ভালো। যদি নাক দিয়ে পানি পড়ে তাহলে ক্লোরোফেনারমিন ম্যালিয়েট, সেট্রিজিন ব্যবহার করা হয়। নাক পরিষ্কারের জন্য নাকের ড্রপ দেওয়া হয়। ছোট বাচ্চাদের কুসুম গরম পানি দিয়ে নরমাল স্যালাইন ড্রপ দেওয়া ভালো। বাচ্চার বুক পরীক্ষা করে এন্টি হিস্টামিন দেওয়া ভালো।

* অনেক শিশু দীর্ঘমেয়াদে খুসখুসে কাশিতে ভুগে। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

** এটি সাধারণত অ্যালার্জিক কফ। ডাস্ট ও কোল্ড অ্যালার্জি এবং ঘাম থেকে হয়। তাই ঘাম যেন না হয় এবং ধুলাবালি ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে হবে। যদি বুকে স্পাজম বা ঘরঘর শাঁই শাঁই আওয়াজ থাকে তাহলে নেবুলাইজেশন, ইনহেলার দেওয়া হয়। ছোট বাচ্চাদের স্পেসারের মাধ্যমে নেবুলাইজেশন দেওয়া হয়। বড় বাচ্চাদের ইনহেলার ব্যবহার করতে বলি। তবে দীর্ঘমেয়াদি কাশির কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন, ব্রঙ্কিয়েকটেসিস, যক্ষ্মা কিংবা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও এ সমস্যা হতে পারে।

* শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভুগে এমন শিশুদের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কেন?

** নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া ও হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দিলে শিশুর কিছু উপকার হয়। প্রতি বছর নভেম্বরে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দেওয়া হয়।

* শীতে শিশুদের ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথার সমস্যা হলে কী করবে?

** ২ বছরের নিচের বাচ্চারা রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ায় ভোগে। এডেনোভাইরাস বা অন্যান্য ভাইরাস দিয়েও শীতকালীন ডায়রিয়া হয়। এ জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন খেতে হয়। ১ বছরের নিচের বাচ্চাদের লো অসমোলার ওরস্যালাইন বা নিওস্যালাইন দেওয়া ভালো। ১ বছরের বেশি বাচ্চাদের রাইস স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। ডায়রিয়া হলেও বাচ্চারা বুকের দুধ খাবে। জিঙ্ক ওষুধ খেতে পারে। সঙ্গে ফলিক এসিডও দেওয়া হয়। এ ডায়রিয়া সাত দিনে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। ৭ দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে সে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে বলে ধরা হয়।

* শ্বাসতন্ত্রের ও পেটের এই সমস্যায় কখন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়?

** ঠান্ডার সঙ্গে যদি প্রচণ্ড জ্বর, শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বৃদ্ধি ও সঙ্গে নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো যদি দেখা যায় এবং সর্দি যদি ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয় ও সাদা রং পরিবর্তিত হয় তখন এন্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তিন দিনের বেশি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি বাড়লেও এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।

হঠাৎ করে পানির মতো পাতলা পায়খানা সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়। এছাড়াও পেট খারাপ জিয়ারডিয়াসিস ও কলেরার জন্য হয়। শীতে কলেরা কম হয়। এছাড়া ইয়ারসিনিয়া এন্টারেকোলিটিকায় পেট খারাপ হয়। ইনভেসিভ ডায়রিয়া অর্থাৎ পায়খানার সঙ্গে রক্ত ও আম যাওয়া, পেটে প্রচণ্ড মোচড় দিয়ে ব্যথা হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ মনে করে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

* এখন শিশুদের ডেঙ্গির ও কোভিডের সংক্রমণ কেমন হচ্ছে?

** কোভিড এখন বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। ডেঙ্গির তীব্রতা ও সংক্রমণও কমের দিকে। ডিসেম্বরে যেহেতু বৃষ্টি হয় না তাই ডেঙ্গির পরিমাণও কমে যাবে। বাচ্চা কিছুই খেতে পারছে না, প্রচুর বমি হচ্ছে, হঠাৎ বাচ্চা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, রক্তচাপ ও পালস প্রেসার কমে যাচ্ছে, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হলে, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, হার্টের গতি বেড়ে গেলে, খিঁচুনি হলেও অতি দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং ডেঙ্গিজ্বর হয়েছে কিনা দেখতে হবে। কোনো শিশুকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে কিন্তু তার পালস প্রেসার কমে যাচ্ছে তাহলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন।

* শিশুর ত্বকের যত্নে কী করা যায়?

** গোসল করানোর আগে হালকা রোদে কিছুক্ষণ রেখে ওয়েল ইমালশন লাগিয়ে গোসল করানোর পর লোশন দেওয়া যায়। যে শিশুর ত্বক অতি সংবেদনশীল ও অ্যালার্জিক তাদের এন্টি অ্যালার্জিক লোশন দেওয়া হয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে চুলকালে প্রচুর পানি, তরল, শাক-সবজি ও ফল খেলে ও মেডিকেটেড ময়েশ্চারাইজার লাগালে উপকার মেলে।

সাক্ষাৎকার নেন ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম




অফিসে মানসিক চাপ কমাবেন যেভাবে

কর্মক্ষেত্রে বন্ধুসুলভ পরিবেশ সবাই আশা করে। কিন্তু কখনো কখনো কাজের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে। নিজের কোনো দায় ছাড়াও কর্মপরিবেশ বিষয়ে উঠে। এতে করে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

শরীর ও মন এই দুই নিয়েই মানুষ। ব্রেইনের বিভিন্ন ধরনের সার্কিট, হরমোন, কেমিক্যালস, মেসেঞ্জার ও নিউরোনাল কার্যকলাপের বহিঃপ্রকাশকে মন বলা যায়। ২০২০ সালে আমেরিকায় অফিস কর্মীদের মাঝে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত কারণে তাদের কর্মক্ষমতা হারায় বছরে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির অফিস কর্মীদের ১০ ভাগ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ইউরোপে ২৫ ভাগ অফিস কর্মী উদ্বেগ ও ডিপ্রেশনে ভুগেন। আমাদের দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬.০১ ভাগ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

২০১৪ সালে ২০-২৯ বছর বয়সি গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা যায়, পোশাকর্মীদের মধ্যে ৪৩ ভাগ তাদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতার জন্য তাদের ওয়ার্কপ্লেসকে দায়ী করেছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহসান উদ্দিন আহমেদ।

চাপ বুঝবেন কীভাবে

কোনো অফিস কর্মীর আচরণ ও ব্যবহারে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন এলে তা মানসিক কোনো রোগের কারণে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে-

হঠাৎ কেউ চুপচাপ হয়ে গেলে বা কথা বলা কমিয়ে দিলে, অফিসে আসা ও যাওয়ার সময়সূচি মেনে না চললে, নিজের কাজ যথাসময়ে সম্পাদন করতে না পারলে, সহকর্মীদের সঙ্গে চেচামেচি বা উত্তেজিত আচরণ করলে, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারলে, হতাশা বা মৃত্যুর কথা সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করলে, পোশাক-পরিচ্ছেদ অগোছালো থাকলে-এগুলো কোনো ধরনের মানসিক সমস্যার জন্য হতে পারে। এ অবস্থায় অফিস ম্যানেজমেন্ট বা সহকর্মীরা এ কর্মীকে সহানুভূতি প্রকাশ করবে প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলবেন।

অফিসে মানসিক চাপ হওয়ার কারণ

* সহর্কমীদের কাছে যথাযথ বা সম্মানসূচক আচরণ না পেলে।

* অফিসে কাজের চাপ বেশি থাকলে।

* কাঙ্ক্ষিত মানে অর্থনৈতিক প্রণোদনা বা প্রমোশন না পেলে।

কিছু কিছু পেশার ধরন এমনিতেই মানসিক চাপের কারণ। যেমন-সার্জন, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, ট্রাফিক পুলিশিং, আর্মি, নাইট গার্ড ইত্যাদি। এ ব্যক্তিরা যদি স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারলে মেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট প্রসিডিউর বা কাউন্সেলিং-এর শরণাপন্ন হতে হবে। নতুবা পেশা পরিবর্তন করতে হবে।

অফিসে মানসিক চাপ মোকাবিলা করবেন যেভাবে-

* এক সঙ্গে অনেক কাজ না নিয়ে অল্প অল্প করে কাজ শেষ করুন।

* অফিসে আসা ও যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুন।

* সহকর্মীদের সঙ্গে যথাযথ ও সম্মানজনক আচরণ করুন।

* অফিসের দায়িত্ব বা কাজ অফিসেই শেষ করুন।

* পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

* প্রতিদিন নিজেকে একান্তে সময় দিন।

* অফিসে মোবাইল ও যে কোনো ডিভাইসের ন্যূনতম ব্যবহার করুন।

* একটানা কাজ না করে একটু বিরতি দিয়ে কাজ করুন।

* তৈলাক্ত, ভাজা-পোড়া খাবার না খেয়ে তাজা শাকসবজি ও ফল নিয়মিত খান।

* প্রতিদিন শরীর চর্চার অভ্যাস আপনাকে সামগ্রিকভাবে সুস্থ রাখবে।

* যে কোনো ধরনের নেশা আপনার মানসিক চাপ বাড়াবে।

* অফিসের কাজ টিম-ওয়ার্ক করে করুন।

* আপনার সম্পাদিত কাজের বিবরণ আপনার ম্যানেজারকে সরাসরি প্রকাশ করুন। প্রয়োজনে কাজের বিবরণ লিখে রাখতে লগ বই ব্যবহার করুন।




শীতে রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন

শীতকালে রোগ বালাই বেড়ে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর জড়োশড়ো হয়ে থাকে। রক্ত চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া শীতে সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপও বাড়ে। এ ব্যাধির সঙ্গে সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পুরোনো কিছু শ্বাসযন্ত্রের রোগও।

শীতকালীন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন গ্রীনলাইফ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক।

সাধারণ সর্দি-কাশি প্রায় সারা বছরই কম-বেশি হলেও এ সময় এর প্রকোপ একটু বেশিই থাকে। বিভিন্ন রকম ভাইরাস (প্রায় ২০০ রকম) দিয়ে এ রোগ হয়। আক্রান্ত রোগীদের নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, শরীর ব্যথা এবং হাঁচি-কাশি ও অল্প জ্বর থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ওষুধের সাহায্য ছাড়াই ২-৪ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পরিমিত পরিমাণে তরল খাবার, কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া, মধু খাওয়া এবং ঠান্ডা পানি ও খাবার পরিহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে শিশু, বৃদ্ধ এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিরোধের জন্য বারবার হাত ধোয়া, নাকে-মুখে হাত না দেওয়া, আক্রান্ত পরিবার সদস্যের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করা উচিত।

ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা

সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে তীব্রতর উপসর্গ নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে। সাধারণ সর্দি-কাশির অতিরিক্ত উপসর্গ হিসাবে বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে নিঃসরিত লালার মাধ্যমে ছড়ায় বলে বদ্ধ জায়গায় এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এ ভাইরাস বছরে বছরে তার ধরন বদলায় দেখে এর বিরুদ্ধে প্রচলিত টিকা প্রতি বছরই নিতে হয়। শিশু, বয়স্ক এবং বিভিন্ন জটিল রোগাক্রান্ত ব্যক্তির এ টিকা নেওয়া উচিত। সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ উপসর্গের উপশম হলেও কাশি ভালো হতে অনেক সময় দুসপ্তাহের বেশিও লেগে যেতে পারে। উপসর্গের তীব্রতা বেশি হলে অথবা আগে থেকেই জটিল রোগ আছে এমন ব্যক্তি, শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সব চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এক্ষেত্রে অনেক সময় এন্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।

ব্রংকাইটিস

সাধারণ সর্দি-কাশির মতো শুরু হয়। পরে শুকনো কাশির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ কফ তৈরি হয়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ ও চিঁ চিঁ আওয়াজ, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। ধূমপায়ীদের এ রোগ বেশি হতে পারে। এ ছাড়াও যাদের অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস, টনসিল বা এডেনয়েডের সমস্যা থাকে তারাও আক্রান্ত হতে পারে।

দুই সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে গেলেও কাশি কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ নিউমোনিয়ার উপসর্গ হিসাবে প্রকাশ করে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া উচিত।

নিউমোনিয়া

এক তৃতীয়াংশ নিউমোনিয়া ভাইরাস দিয়ে হলেও বেশিরভাগ নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে। এ রোগ হলে ঠান্ডা ও কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বরের সঙ্গে কফযুক্ত কাশি, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তি, দ্রুত পালস, প্রেসার কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা হতে পারে।

অনেক সময় নিউমোনিয়াতে জীবন সংশয়ও হতে পারে। নিউমোনিয়া সন্দেহ করলে অতি সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক নিউমোনিয়ার ধরন বুঝে বাসায় রেখে অথবা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করবেন। এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু টিকা আছে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখলে এর আক্রমণ থেকে কিছুটা নিস্তার পাওয়া যেতে পারে।

রাইনাইটিস ও সাইনোসাইটিস

এক্ষেত্রে নাক বন্ধ থাকা, অল্পবিস্তর শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো এন্টিবায়োটিক লাগে না। কিছু অ্যালার্জির ওষুধ, ন্যাজাল স্প্রে এবং গরম পানির ভাপেই আরাম পাওয়া যায়।

কানের ইনফেকশন

কান ব্যথা, নাক বন্ধ, মাথা ঘোরানো, কান দিয়ে পুঁজ পড়া ইত্যাদি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণযন্ত্রের স্থায়ী সমস্যা হয়ে যেতে পারে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা

এটা যদিও সারা বছরেরই রোগ, তবে শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া এবং ঠান্ডা বাতাস ও বিভিন্ন অ্যালার্জির জন্য এ সময় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যাদের আগে থেকেই অ্যাজমা আছে, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার ব্যবহার করা। মনে রাখতে হবে অ্যাজমায় ইনহেলার সবচেয়ে আধুনিক এবং শুরুর দিকের চিকিৎসা যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই বললেই চলে। যাদের শুধু ইনহেলারে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ হয় না, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মুখে খাবার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ এখানে অত্যাবশ্যক। সেই সঙ্গে পরিষ্কার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।

বাত ও ব্যথা

শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের বাত ও ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই যাদের আগে থেকেই সমস্যা আছে, তারা নিয়ম মেনে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ব্যায়াম করবেন। ব্যথার ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। চিকিৎসক আপনার ব্যথার প্রকৃতি, হার্ট, কিডনি, লিভার ও স্টোমাকের অবস্থা বুঝে ব্যথার ওষুধ দেবেন।




যেসব কারণে শীতের সবজি খাবেন

শীতকালে বাংলাদেশে সবজির ছড়াছড়ি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, শিম, মটরশুঁটি ইত্যাদি অনেক রকমের সবজিতে বাজার ছেয়ে থাকে।

:টমেটো এটি ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিনের চমৎকার উৎস। লাইকোপিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। লাইকোপিন হাড়ের সুস্থতায় সাহায্য করে। টমেটোতে আছে প্রচুর বায়োটিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাংগানিজ, ভিটামিন ই ইত্যাদি। এই সবজি হৃদরোগ প্রতিহত করে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়, ত্বক ও চুলের সুস্থতা বজায় রাখে। বেশি তাপে টমেটোর ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারেটিন অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা বা সালাদ করে খাওয়া ভালো।

গাজর: গাজর খেলে চোখ ভালো থাকে বলে যে ব্যাখ্যা চালু আছ, তা মিথ্যা নয়। গাজরে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ আছে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এই সবজিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফলেট, পটাশিয়াম আছে অনেক। পটাশিয়াম রক্তনালি সুস্থ রাখে, ফলেট গর্ভস্থ শিশুর জন্য ভালো। গাজরে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম, প্রতি ১০০ গ্রামে ৪১ ক্যালরি থাকে। তাই যারা শরীরের ওজন কমাতে চান, তারা বেশি করে গাজর খেতে পারেন।

ফুলকপি: ফুলকপিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৬ এবং নানা খনিজ উপাদান আছে। এতে কিছুটা প্রোটিনও আছে, আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। পরিপাকতন্ত্র ও রক্তসংবহনতন্ত্রের জন্য এটি খুবই উপকারী। হাড়ের সুস্থতায় ফুলকপি সাহায্য করে। তবে বেশি পরিমাণে ফুলকপি অনেক সময় হজমে সমস্যা করতে পারে, পেটে গ্যাস হতে পারে।

শিম: শিমে প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে, যা পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী। আছে প্রোটিন, ভিটামিন সি ও জিংক শিমের বিচিও প্রোটিনের চমৎকার উৎস। যারা মাছ-মাংস কম খেতে চান, তারা শিমের বিচির মাধ্যমে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।




বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ৮৪৮ , শনাক্ত ৪ লাখের বেশি

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়ছে বিশ্ব। এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছেন। কোটি কোটি মানুষ এখনও এ মহামারির কারণে বিপর্যস্ত।

বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে। যদিও মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে পৃথিবী। তবে অনেক দেশই এখনও করোনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চিন্তিত। বুধবার সকালে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস। ওই সকল তথ্যানুসারে, মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৪৮ জন এবং নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪ লাখ ২৯ হাজার ১৫৯ জন। আগের দিন মারা গেছেন ৯৯২ জন ও সংক্রমিত হন ২ লাখ ৪০ হাজার ১৭৩ জন।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৮ হাজার ৭১৩ জনে। আর বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮৭ জনে। এ সময়ে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ৬২ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ২৬২ জন।

বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে জাপানে। আক্রান্তের দিক থেকে তালিকার সাত নম্বরে থাকা দেশটিতে এ সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২২ জন এবং মারা গেছেন ১৫৩ জন। এ পর্যন্ত সেখানে মোট মারা গেছেন ৪৩৪ জন। দেশটিতে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৪ জন।

দৈনিক সংক্রমণের দিক দিয়ে জাপানের পরই ফান্সের অবস্থান। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হন ৯১ হাজার ৮১৪ জন এবং মারা গেছেন ৮৮ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৮ হাজার ৪১৭ জন, মারা গেছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৯ জন।

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। এখন পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন ১১ লাখ ৫ হাজার ৪৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৬৭। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৫ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯৯ জন। তালিকায় এর পরের স্থানগুলোতে রয়েছে— ভারত, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইতালি, তুরস্ক, স্পেন, আর্জেন্টিনা, ইরান ও কলম্বিয়া।

মহামারি শুরুর প্রায় এক বছর পর টিকা আবিষ্কার করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। তারপর থেকে করোনার ঢেউ অনেকটা কমে আসে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনা টিকার বুস্টার ডোজের ওপর জোর দিচ্ছে।

করোনার প্রকোপ থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে বিশ্ব। এখন পর্যন্ত বিশ্বের যেসব দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিলো সবই প্রায় তুলে নেওয়া হয়েছে।




স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন কমাবেন যেভাবে

ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন? স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে ওজন ঠিক থাকে। যারা জাঙ্কফুডে অভ্যস্ত তাদের ওজন বেশি হয়ে থাকে।

ক্যালরি হচ্ছে ওজন পরিমাপের উপায়। যদি ওজন কমাতে হয় তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয় তার থেকে কম পরিমাণ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার খেতে হবে অর্থাৎ কম ক্যালরি খেতে হবে বা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিমাণমতো খাওয়া যাবে।

সে ক্ষেত্রে কোন কোন খাবারে ক্যালরি কম থাকে তা জানতে হবে ও সে অনুযায়ী কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে ওজন কমাতে গেলে দেখা যায় কিছু দিন বা কয়েকদিন পরই প্রচণ্ড ক্ষুধার কারণে এই পদ্ধতি বাদ দেয় ও আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তাই ওজন কমাতে কিছু টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যা নিম্নরূপ-

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মেডিনোভা মেডিকেলের অধ্যাপক মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তৌফিকুর রহমান ফারুক।

প্রোটিন জাতীয় খাবারে ক্যালরি কম

খাবারে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খেয়ে ওজন কমানোর পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ, কার্যকরী, মুখরোচক, বৈজ্ঞানিক ও কম কষ্টের। প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অল্প খাবারে তাড়াতাড়ি তৃপ্তি আসে অর্থাৎ ক্ষুধার অনুভূতি তাড়াতাড়ি কমে এবং আমাদের শরীরের মেটাবলিক রেট বা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার হার বাড়ে, কারণ প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার হজম করতে ও মেটাবলিজম হতে বা খাবার ভেঙে শক্তি উৎপাদনে বা অন্যান্য কাজে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় হয়।

প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার হজম বা মেটাবলিজমে বেশি শক্তি অর্থাৎ ৮০-১২০ ক্যালরি শক্তি বেশি ব্যয় হয়। একজন ব্যক্তি যদি খাবারের ৩০ ভাগ প্রোটিন জাতীয় খাবার খায় তবে সে প্রতিদিন ৪৪১ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার কম গ্রহণ করল।

তাই খাবারে পরিমিত পরিমাণ প্রোটিন যোগ করে একদিকে যেমন শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশ করে তেমনি ক্যালরি খরচও বেশি হয়। প্রোটিন জাতীয় খাবার আমাদের ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয়।

যারা ডায়েট করেন ও না খেয়ে ওজন কমাতে চান তাদের মাঝেমাঝে তীব্র ক্ষুধার অনুভূতি হয়, ফলে তারা আর না খেয়ে থাকতে পারেন না, ফলে ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে ও আবার ওজন আগের মতোই বাড়তে থাকে। প্রোটিন জাতীয় খাবার এ ধরনের হঠাৎ ক্ষুধার তীব্র অনুভূতি কমিয়ে দেয়।

এক গবেষণায় দেখা যায়, খাবারে যদি ২৫ ভাগ প্রোটিন বা আমিষ থাকে তবে এই প্রোটিন বা আমিষ মস্তিষ্কে খাবারের চিন্তা ৬০ ভাগ কমিয়ে দেয় ও রাতের গভীরে বা ভোর রাতে ø্যাক্স বা নাস্তা খাবার ইচ্ছা বা প্রবণতা ৫০ ভাগ কমিয়ে দেয়।

তাই যদি কেউ ওজন কমোনোর কর্মসূচি কার্যকরী ও টেকসই বা স্থায়ী করতে হয় ও কম কষ্টে ওজন কমাতে চায় তবে খাবারে কমপক্ষে ৩০ ভাগ প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে, এটা ওজন কমানোর পাশাপাশি ওজন যাতে আবার না বাড়ে তা নিশ্চিত করবে।

সুগারযুক্ত কোমল পানীয় ও ফলের রস বর্জন করতে হবে

সোডা, ফলের রস, চকোলেট দুধ ও অন্যান্য কোমল পানীয় যেমন কোকাকোলা, ফান্টা, মিরিন্ডা, পেপসি যেখানে অতিরিক্ত চিনি বা সুগার যোগ করা হয় তা ক্ষতিকর ও বর্জনীয়, কারণ সুগার বা চিনির মাধ্যমে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি ঢোকে ও তা আমাদের ওজন বাড়ায়।

বাচ্চাদের ওজন বাড়াতে বা মোটা হওয়ার রিস্ক ৬০ ভাগ বেড়ে যায় যদি প্রতিদিন সুগারযুক্ত কোমল পানীয় পান করে। ওজন বাড়ার পাশাপাশি এ সুগারযুক্ত কোমল পানীয় নানাবিধ রোগ তৈরি করে।

প্রাকৃতিক জুস বা ফলের রস স্বাস্থ্যকর কিন্তু জুসের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয় তবে তা ক্ষতিকর। এসব সুগারযুক্ত পানীয়ের আসলে কোনো লাভজনক দিক তো নেয়ই বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর।

বেশি করে পানি পান করলে ওজন কমে

ওজন কমানোর জন্য অন্যতম ট্রিক হচ্ছে প্রতিদিন বেশি পরিমাণ পানি পান করা। বেশি পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়। প্রতিদিন ৪ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করলে ৯৬ ক্যালরি শক্তি অতিরিক্ত খরচ হয় কোনো কায়িক পরিশ্রম ছাড়াই।

তাছাড়া খাবার আগে খালি পেটে পানি পান করলে তাতে পেট আংশিক ভর্তি হবে এবং ক্ষুধা কমবে ও কম পরিমাণ খাবারে পেট ভরে যাবে, তাতে অটোমেটিক্যালি কম ক্যালরি শরীরে ঢুকবে।

১২ সপ্তাহব্যাপী এক গবেষণায় দেখা গেছে খাবার ১-২ ঘণ্টা আগে ১-২ লিটার পানি খেলে ৪৪ ভাগ বেশি ওজন কমে, তাই ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ও কম ক্যালরিযুক্ত খাবারের পাশাপশি বেশি পরিমাণে পানি পান করা কার্যকরী। যেসব পানীয় ক্যাফেইনযুক্ত যেমন গ্রিন টি, কফি স্বাস্থ্যক ও ওজন কমাতে সহায়ক কারণ এ পানীয়গুলো শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে সাহায্যকারী।

নিয়মিত ব্যায়াম করা

আমরা যখন কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই, তখন আমাদের শরীর শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে চায়, শক্তি কম খরচ করে শক্তি জমা রাখতে চায়। তাই দীর্ঘমেয়াদি ওজন কমান কর্মসূচি বা ডায়েটিং করলে বা কম খেলে আমাদের শরীরে মেটাবলিকজনিত বা শারীরবৃত্তীয়জনিত ক্যালরি খরচ কমে যায়।

তাছাড়া এতে আমাদের শরীরের মাংসপেশীগুলো শুকিয়ে যায়, তাই ওজন কমানোর জন্য বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পাশাপাশি মাংসপেশী ঠিকভাবে রাখার জন্য ভারোত্তোলন বা ওজন লিফটিংও করতে হবে, এতে মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ হবে ও মেটাবলিক কার্যক্রম ঠিক থাকবে।

তাই ওজন কমানোর জন্য আমরা শুধু শরীরের চর্বিই কমাতে চাইব না, আমাদের শারীরিক গঠনও যাতে ঠিক থাকে, আমাদের যাতে দেখতে অসুন্দর না লাগে, শুকনা শুকনা না লাগে, বরং দেখতে ভালো যাতে লাগে। ওয়েট লিফটিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত এরোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা ও জগিং করতে হবে।

রিফাইন্ড সুগার ও কার্বোহাইড্রেট কম খেতে হবে

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারে প্রচুর ক্যালরি থাকে, তাই খাবারে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু, চিনি, মিষ্টি, মধু, কোমল পানীয় কম খেতে হবে।

গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার অর্থাৎ কম কার্বোহাইড্রেট ও কম চর্বিযুক্ত খাবার ওজন কমাতে ২-৩ গুণ অধিক কার্যকর। তাছাড়া কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিন্ড্রোম রোগ প্রতিরোধ করে, তবে ফাইবারযুক্ত কমপ্লেক্সে বা জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী।




ছোট ফল স্বাস্থ্যের জন্য হিতকর

আলু বোখারা বা গবা। ইংরেজিতে প্রিউন্স। শুষ্ক প্লাম। স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। নারীদের হাড় ক্ষয় রোধে কার্যকর। হাড়কে সুস্থ আর মজবুত রাখে এ ফল। হাড় ক্ষয়কারী অস্টিওপোরোসিসের সাথে লড়াই করার অন্যতম হাতিয়ার। অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় ভঙ্গুর আর দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে বাড়ে হাড় ভাঙার ঝুঁকি।

প্রিউন্স হল নানা খনিজ, ভিটামিন কে, ফেনলিক যৌগ দ্বারা সমৃদ্ধ। এরা প্রদাহ আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ভোতা করে দেয়। হাড়ে খনিজের আদান প্রদান কম করে দেয়।

আর এমন হলে পুরানো হাড়ের খনিজ ক্ষয় হয় দ্রুত, একে ধীর করতে সহায়তা করে এই ফল। পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা মনে করেন, দিনে ১০ টি প্রিউন্স এক বছর খেলে উন্নত হয় শিরদাঁড়া আর বাহুর হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে। হাড়ে খনিজ বিনিময়ও কমে।

অস্টিওপোরোসিস হতে পারে যে কোনো বয়সে। তবে বেশি হয় ৫০ বছরের বেশি নারীদের। রজ নিবৃত্তির পর ইস্ট্রোজেন হরমোন কমলে তা হয় উদ্দীপিত। বিশ্ব জুড়ে ২০০ মিলিয়ন নারী  অস্টিওপোরোসিসের শিকার। ৯ মিলিয়ন ফ্র্যাকচার হয় সারা বছরে।

তাই উদ্ভিজ্জ খাদ্য অনেক হিতকর। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যারা প্রতিদিন মাংস খান তাদের চেয়ে নিরামিষ যারা খান তাদের ক্যান্সার ঝুঁকি ১৮% কম।




জেনে নিন সকালের নাস্তা খাওয়া কতটা জরুরী

সকালের নাস্তা নিয়ে অনেকেই অবহেলা করে থাকেন। কেউ কেউ একেবারেই সকালে কিছু খান না। আবার কেউ হাল্কা খাবার খান। দিনের পর দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি পড়ে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়।

অথচ প্রাতঃরাশই আমাদের সারা দিনের শক্তির জোগান দেয়। রাতের খাবার খাওয়ার পর দীর্ঘ ১০-১২ ঘণ্টা উপবাস ভাঙা হয় প্রাতঃরাশ দিয়ে।

স্বাভাবিকভাবেই এই খাবারটি গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় খরচ হয়ে যায়। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনো এটি খরচ হতে থাকে। এ জন্য ঘুম থেকে উঠার পরই এটা পূরণ করে ফেলা উচিত। সেই কারণে যারা সকালে কিছুই খান না, তারা ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করেন। সকালের নাস্তায় শর্করা কতটা শক্তির যোগান দেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বারডেমের অবসরপ্রাপ্ত চিফ নিউট্রিশন অফিসার আখতারুন নাহার আলো।

অনেকে মনে করেন সকালের নাস্তা না খেলে ওজন কমে যাবে। আসলে তা হয় না। পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যকর নাস্তা আপনার দৈহিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। দেহের বিপাক ক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয় এবং সারা দিন ধরে প্রচুর শক্তি খরচ করতে সহায়তা করে। যদি নাস্তা বাদ দেওয়া হয়, তাহলে কার্য প্রবণতা ও কর্মক্ষমতা কমে যাবে।

সকালের নাস্তা অবশ্যই সুষম হতে হবে। কারণ আমাদের দেহে প্রতিটি খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন আছে। এ সময় শর্করার দিকে জোর দিতে হবে। শর্করা আমাদের দেহে সেরোটোনিন নিঃসরণের মাধ্যমে মন, মেজাজ ও মানসিক অবস্থাকে উন্নত করে। ফলে মনকে সজীব ও সতেজ রাখে। অর্থাৎ শর্করা শুধু শক্তিই প্রদান করে না।

সকালের নাস্তায় পানীয় হিসাবে রাখা যেতে পারে গ্রিনটি, চা-কফি, লাচ্ছি, ঘোল, ফলের রস ইত্যাদি। খুব ভালো হয়, যদি ঘুম থেকে উঠার দু’এক ঘণ্টা পর সকালের নাস্তা খেয়ে ফেলা যায়।

যেহেতু এটা দিনের প্রথম খাবার এবং আগের রাতের পরিপূরক, সে কারণেই আগের রাতের খাওয়ার সময়ের সঙ্গে ভারসাম্য রেখেই নাস্তার সময় ঠিক করা ভালো। রাতের খাবার ও সকালের নাস্তার মধ্যে যেন বারো ঘণ্টার বেশি ব্যবধান না হয়। নাস্তা খাওয়া উচিত সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে।




শীতে ত্বকের যে সমস্যা গুলো দেখা দেয়, কী করবেন?

শরীরে নানাভাবে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করে। শীতের সময় ত্বক সংবেদনশীল থাকে। ত্বক মূলক রোগ জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয়।

শীতের সময় শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি দেখা দেয়।  সেই সঙ্গে ত্বকেরও বিভিন্ন রোগব্যাধি হওয়ার আশংকাও বাড়ে। শীতের শুরুতেই যদি এ সম্পর্কে জানা যায় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করা যায় তাহলে ত্বকের এসব রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

শীতের রোগবালাই নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ত্বক ও যৌনব্যাধি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রাশেদ মো. খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম।

* শীতে ত্বকের কী কী সমস্যা বা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে?

* শীতে যেহেতু পরিবেশে আর্দ্রতা ও জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়, এ কারণে প্রধান সমস্যাই হচ্ছে ত্বক শুষ্ক, খসখসে হয়ে যাওয়া। এর ফলে চুলকানি, ঠোঁট ও পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়া, হাতের চামড়া উঠে যাওয়াসহ খুশকির সমস্যা বাড়ে। যাদের ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, লিভার ও কিডনির সমস্যা বা জন্মগত চামড়ার কিছু রোগ থাকে তাদের এ ড্রাইনেসের তীব্রতা বেশি হয়। আরেকটি হচ্ছে ঠান্ডা পরে যাওয়ার কারণে হাত ও পায়ের আঙুল লাল হয়ে ফুলে যাওয়া, একে রেনড ফেনোমেনং বলে।

* ত্বকের এই শুষ্কভাব দূর করার উপায় কী?

*মেডিকেল গ্রেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাই হচ্ছে প্রধান চিকিৎসা। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা ক্রিম বা অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজার দেবেন, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা লোশন বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এটি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ত্বক যেন তার আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। ময়েশ্চারাইজার যে ত্বক তৈলাক্ত করে, তা কিন্তু নয়। শীতে খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ের জন্য গোসল করা যেতে পারে। প্রতিদিন গোসল না করলেও চলে, একদিন পরপর করা যায়। কারণ এ সময় আমরা ফুল হাতা জামা-কাপড় ব্যবহার করি তাই ত্বকে খুব বেশি ময়লা, ধুলাবালি পড়ে না।

গোসলের পর পর শুকনো সুতি কাপড়ের তোয়ালে দিয়ে ত্বক চাপ দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এ ময়েশ্চারাইজার ত্বকের শুষ্কতা বা সমস্যা বুঝে দিনে ৩-৪ বারও ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন খারযুক্ত সাবান ব্যবহার না করে সপ্তাহে ২-৩ দিন সুগন্ধিহীন ও বর্ণহীন সাবান, সিনথেটিক ডিটারজেন্ট বা বাথজেল ব্যবহার করতে পারেন। খুব বেশি ঘষা-মাজা করে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের তৈলাক্ত বা ন্যাচারাল ময়েশ্চার উঠে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয় ও ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস শরীরে প্রবেশের সুযোগ পায়।

* এ সময় ত্বকের কী কী রোগ হওয়ার বা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে?

* স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়া শীতে আমাদের দেশে প্রধান সমস্যা। একসঙ্গে বেশি মানুষ জড়ো হয়ে থাকলে যেমন মাদ্রাসা, হলে অবস্থানকারীদের একজন থেকে আরেকজনে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। কারণ এটি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে। হাতের আঙুলের ভাঁজে, নাভির চারপাশে, শরীরের ভাঁজযুক্ত স্থানে, মহিলাদের ব্রেস্টের নিচে এবং প্রজনন অঙ্গের আশপাশের গোটাযুক্ত বিচি বা ফোসকা, যাতে রাতে চুলকানি বাড়ে এবং তা দিয়ে খোস-পাঁচড়া শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসার প্রধান শর্ত হচ্ছে যাদের এ সমস্যা হয়েছে তাদের ও তার সঙ্গে থাকা সবার চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার পরও চুলকানি ভালো হতে দুই সপ্তাহ লেগে যায়। শিশুদের যদি এ রোগ শনাক্ত করা না যায় বা চিকিৎসা না করা হয় বা বারবার খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে এর জটিলতায় কিডনির সমস্যা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস হতে পারে।

প্রত্যেকের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, লেপ-তোশক, বালিশের কভার, চাদর সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বা ইস্ত্রি করে ব্যবহার করতে হবে। ইকথায়োসিস নামের জন্মগত ত্বকের রোগে হাঁটু থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত খোসার মতো ত্বকে উঠে যাওয়ার সমস্যায় বার বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এবং ডাক্তারের পরামর্শে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র মাত্রার স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। কোল্ড অ্যার্টিকেরিয়ায় ত্বকে চাকা চাকা হয়ে সারা শরীরে চুলকানি হতে পারে। যা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনে যাদের দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের রোগ সোরিয়াসিস, প্যারাসোরিয়াসিস বা লাইকেন প্ল্যানাস আছে তাদেরও রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।

* শিশুর ত্বকের যত্নের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?

*কিছু শিশু জন্মগতভাবে শুষ্ক ত্বক নিয়ে জন্মায়। এরা ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, সর্দি, শ্বাসকষ্টে ভুগে। এদের এটোপিক বেবি বলে। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। চুলকানি কমানোর জন্য ছোট-বড় সবাই নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

তবে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন না। এর ফলে অ্যালার্জি, ইরিটেশন বা ত্বকে প্রদাহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টক বা সাইট্রাস ফল অর্থাৎ ভিটামিন সি প্রতিদিন গ্রহণ করা ভালো। সুতির কাপড় ব্যবহার করবে, সিনথেটিক বা পশমী সোয়েটার, মাফলার, টুপি ব্যবহার করলে এদের অ্যালার্জির প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।
শীতের শাক-সবজি, ফলমূল প্রচুর গ্রহণ করতে হবে কারণ এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন থাকে যা এন্টি এজিং ও ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। কম্বলের পরিবর্তে লেপ ব্যবহার করবে।

* খুশকি এ সময় অন্যতম সমস্যা। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় জানাবেন?

** ডেনড্রাফ যাদের বেশি হয় তারা আসলে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামে একটি রোগে ভোগে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা কিটোকোনাজল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করবেন। শ্যাম্পু যেন সালফেটমুক্ত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্ক্যাল্প বা মাথার তালুতে কোনো তেল ব্যবহার করার দরকার নেই। এর ফলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ রোগটি আসলে নিয়ন্ত্রণযোগ্য, তবে পুরোপুরিভাবে ভালো হয় না।

* ঘরের বাইরে বের হওয়ার আগে বিশেষ কোনো প্রস্তুতির দরকার হয় কি?

** এ সময়ও কিন্তু সূর্যের রশ্মি আমাদের ত্বকে সরাসরি পরে। তাই সানস্ক্রিন এসপিএফ ৩০-৫০ এর মধ্যে ব্যবহার করে বের হবেন। অনেকে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আগুনে বা রোদে ত্বক পোড়ান। এর ফলে সান বার্ন বা সান ইনজুরি হতে পারে।