ক্লাব কাপ হকির সফলতার পর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রিমিয়ার হকি লিগ। কিন্তু এই সূচি প্রকাশ নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজই মাঠে গড়ানোর কথা ছিল এই লিগের। কিন্তু একটি ক্লাবকে (মেরিনার্স) সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে লিগ বয়কটের হুমকি দেয় ঊষা ক্রীড়া চক্র। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
এই তিন ক্লাবের দাবি ছিল, ৬ মার্চই লিগ শুরু করতে হবে। বিষয়টি সুরাহার জন্য ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে সোমবার রাতে জরুরি সভা ডাকে হকির কার্যনির্বাহী কমিটি। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া মিটিং শেষ হয় রাত সাড়ে ৯টায়। আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে ক্লাব কর্মকর্তাদের মধ্যে চলে তুমুল বাগ্বিতণ্ডা আর হট্টগোল। যেখানে একে অন্যকে ‘তুলে’ নেওয়া, এমনকি হত্যার হুমকিও দিয়েছেন কেউ কেউ। টেবিল চাপড়ে একে অপরকে গালাগাল করাসহ অপ্রীতিকর অনেক কিছু ঘটেছে বলে মঙ্গলবার সমকালকে জানান মিটিংয়ে উপস্থিত একাধিক সূত্র।
কয়েক দিন আগে শেষ হয়েছে ক্লাব কাপ হকি। দুই বছরেরও বেশি সময় পর নীল টার্ফে খেলা গড়ানোয় হকি অঙ্গনে উন্মাদনা বইছে। কিন্তু লিগ শুরুর আগে চিরাচরিত টেবিলের উত্তাপটা নতুন করে দেখা মিলল। কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি, হকির স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থই যেন বড় হয়ে উঠেছে সবার মধ্যে। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের বোর্ডরুমে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে লিগের সূচিকে কেন্দ্র করে মারপিটের পর্যায়ে চলে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, রুমের মধ্যেই চেয়ার ছেড়ে উঠে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ক্লাব কর্তাদের কেউ কেউ বারান্দায় গিয়েও হৈহুল্লোড় করতে থাকেন। পাশে গুলিস্তানের রাস্তায় পথচারিরা দাঁড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ গাড়ি থামিয়ে বোঝার চেষ্ট করেন, ঠিক কী হচ্ছিল সেখানে। বৈঠকে উপস্থিত এক ক্লাব কর্তা হতাশ হয়ে বলেন, ‘একটা সূচি নিয়ে এক কথা, দুই কথায় লেগে গেল। সে এক ভয়ানক অবস্থা। এ এরে খুন করতে চায়। সে তারে উঠায়ে নিতে চায়। এত বাজে ভাষা সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে, যা বলার মতো না।’
মূলত ঝামেলাটা হচ্ছে মেরিনার্সের সঙ্গে আবাহনী, মোহামেডান ও ঊষার। মেরিনার্সের দাবি ছিল, তাদের ম্যাচে যদি বিদেশি আম্পায়ার না থাকেন, তাহলে লিগের পুরো সময় দেশি আম্পায়ার দিয়েই খেলা চালাতে হবে। কিন্তু ফেডারেশনের কর্তাদের ভাষ্য হলো, লিগ শুরুর দু-এক দিন পর বিদেশি আম্পায়ার আসবেন। তাতে সায় ছিল ঊষা ক্রীড়া চক্রের। এই আম্পায়ার ইস্যুতেই মিটিং হয়ে ওঠে আরও উত্তপ্ত। আর মিটিংয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে মেরিনার্স ও আবাহনীর কর্তাদের মধ্যেই।
একে অপরকে তুলে নেওয়ার হুমকি এবং খুন করার হুমকি দেন। পুরো ঘটনার চিত্রটা ফোনে আবাহনীর ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের অবহিত করেন মিটিংয়ে উপস্থিত এক কর্মকর্তা। এই অবস্থায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাঈদ চুপ ছিলেন।
এমন ঘটনার জন্য ফেডারেশনের কিছু ভুল সিদ্ধান্তকে সামনে এনেছেন মিটিংয়ে উপস্থিত অন্য এক সদস্য, ‘আসলে এই মিটিংগুলো হয় এজেন্ডা ছাড়াই। কাগজপত্র ছাড়াই। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, একেক ক্লাব একেকটা দাবি তোলে। এত বড় একটা ফেডারেশন, তারা কথা বলবে এজেন্ডার ওপরে। আগের মিটিংয়ের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এর বাইরে তো কথা হতে পারে না। এখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ হয় বেশি। আমি দেখে অবাক হয়ে গেছি।
একেকজনের মুখ থেকে যে ভাষাগুলো বের হয়। কালকে একেকজনের আচরণ এবং শারীরিক ভাষা দেখে মনে হয়েছে, হকির কোনো ভবিষ্যৎই নেই। কেউ কাউকে মানছে না। কোনো প্রটোকল নেই। কেউ কাউকে দেখতে পারে না। এটা তো আসলে বোর্ড মিটিং। কোনো ক্লাবের মিটিং না। আর কোনো পাড়ার ক্লাবে এ রকম গালাগাল হতে পারে কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ। এটা সরকারি একটা প্রতিষ্ঠান। বোর্ড মিটিংয়ে ভদ্র পরিবেশ এবং অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা ছিল না।’