রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে ছাত্রলীগ নেতারা। ভর্তি পরীক্ষার সময় বিপুল জনসমাগমের সুবাদে দোকান বেড়ে যায়। এতে রমরমা চাঁদাবাজিও হয় ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর। দোকানভেদে দৈনিক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে তারা। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাঁকে নানা হুমকি-ধমকিসহ ব্যবসা করতে বাধা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবারও পাওয়া যায় অনুরূপ অভিযোগ। আট থেকে ১০ জন করে নেতাকর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দিতে সব দোকানির কাছে টাকা তোলে। তবে নেতাদের দাবি, তারা ওই সব হকারের কাছে গিয়েছিলেন তাদের কাউকে অর্থ দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করতে।
হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা ছিল। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ একাডেমিক ভবন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবন, পুরোনো শেখ রাসেল স্কুলমাঠ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন এলাকায় বিরিয়ানি, ডাব, শরবত, চটপটির দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছিল। এসব দোকান থেকে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়েছে। এদিন বিকেলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেউ কেউ বাইকে করে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিলেও এর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানদারদের থেকে টাকা তুলেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন– বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাদিক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান লাবণ, নবাব আবদুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাশফিক আল তৌহিদ এবং মাদার বখ্শ হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তামিম খান। তাদের মধ্যে লাবণ ও তৌহিদ রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে সাদিক ও তামিম শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডাব বিক্রেতা অভিযোগ করেন, চার-পাঁচজন লোক এসে তাঁর কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, এখানে ব্যবসা করতে হলে টাকা দিতে হবে। পরে তিনি বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকা দেন।
এক ফুচকা বিক্রেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে আমার কাছে টাকা দাবি করেন। তাদের সবাই আমার পরিচিত। তাদের মধ্যে ছিলেন লাবণ ভাই, সাদিক ভাই, তৌহিদ ও তামিম। আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছে। গতকাল এসেছে আজকেও মনে হয় আসবে। ব্যবসা করতে হলে তাদের টাকা দিতে হবে। খুব চাপ।’
এক শরবত বিক্রেতা জানান, পাঁচ-ছয়টা বাইক নিয়ে ৭-৮ জন লোক এসে তার কাছে চাঁদা দাবি করে। আশপাশের আরও অনেক দোকান থেকেও টাকা নিয়েছে তারা। যাদের কাছে টাকা নিতে পারেনি, তাদের থেকে খাবার নিয়ে গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা সাদিক বলেন, ‘এই রকম কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। বরং আমি আর লাবণ দোকানে দোকানে গিয়ে বলে এসেছি, আমার নামে কেউ চাঁদাবাজি করতে এলে যেন আমাকে কল দেন।’
আরেক নেতা তামিম বলেন, ‘গতকাল সারাদিন আমি জয় বাংলা বাইক সার্ভিস (ভর্তিচ্ছুদের আনা-নেওয়ার কাজ) নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার নাম করে অন্য কেউ এ কাজ করতে পারে। এ জন্য আমি দোকানিদের সতর্ক করে এসেছিলাম। কেউ আমার নাম করে টাকা চাইতে এলে তাকে বেঁধে রেখে আমাকে কল দেবেন।’
লাবণ বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে সারাদিন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ছিলাম। এর আগেও শুনেছি, আমার নাম করে কেউ কেউ টাকা আদায় করেছে। তাই কয়েকজন দোকানিকে বলেছি, যারা আমার নাম করে চাঁদা নিতে আসে, তাদের আটকে রেখে আমাকে কল দিতে।’
আরেক ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমি গতকাল সারাদিন সভাপতির সঙ্গে ছিলাম। জীবনেও আমি চাঁদাবাজি করি নাই। কিয়ামতের দিন হলেও প্রমাণ হবে আমি এক পয়সাও কোথাও থেকে চাঁদা নিইনি।’
রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘সাদিক, লাবণ ও তৌহিদের মধ্যে কেউ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নন। তবে তামিম গেছে কিনা আমি জানি না। যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে কালকের মধ্যে তাদের বহিষ্কার করা হবে।’
তবে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।