'Warning' about Moliner, Aviation Minister orders to talk to Boeing

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ড্রিমলাইনার-৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ নিয়ে নির্মাতা কোম্পানিটির সাবেক প্রকৌশলীর উত্থাপিত কারিগরি ত্রুটির বিষয়ে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে দ্রুত কথা বলতে বিমান বাংলাদেশকে নির্দেশ দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।
শনিবার রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়।
তবে বিমান বাংলাদেশের বহরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় উত্থাপিত কারিগরি সমস্যা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেন ফারুক খান।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সালেহপৌর ‘৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে সেগুলো না উড়িয়ে আবার নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ দেন। তার ব্ক্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজে খবর প্রকাশ হলে তা বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করে।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বোয়িং বলেছে, তারা নতুন করে ড্রিমলাইন পরীক্ষা করে উড়োজাহাজ ভেঙ্গে পড়ার মতো কোনো ক্রুটি পাননি।
বিমান বাংলাদেশের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ছয়টি প্রশস্ত বডির ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ রয়েছে।
শনিবার এ বিষয়ে বিমানের এমডিকে দেওয়া বিমানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করা হয়।
এতে বলা হয়, “আলাপকালে মন্ত্রী বলেছেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় আপাতত উত্থাপিত কারিগরি সমস্যা নিয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে উড়োজাহাজ তৈরিকারি কোম্পানি বোয়িং এর সাথে দ্রুত কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশ সরকার এবং বিমানের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তাই মুখ্য বিষয়।’
”এসময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কারিগরি ও মেইনটেনেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে বোয়িং এর সাথে বিমানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বিদ্যমান। দ্রুতই এ বিষয়ে অধিকতর তথ্য জেনে মন্ত্রীকে অবহিত করবেন।”
বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রসঙ্গে ওই প্রকৌশলীর সতর্কবার্তা বিশ্বজেুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফ বোয়িংয়ের সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সালেপোরের বরাতে বলেছে, উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিযোগিতা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে মারাত্মক কিছু সমস্যা তৈরি করেছে, যেটি হচ্ছে ফিউজিল্যাজের সেকশনগুলোর মধ্যে ছোট ছোট ফাঁক রয়ে গেছে। বিশ্বব্যপী চলাচলকারী এক হাজারের বেশি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজকে নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য উড্ডয়ন থেকে বিরত রাখার পরামর্শও দেন ওই প্রকৌশলী।
মার্কিন সিনেটে গত ১৭ এপ্রিল এক শুনানিতে প্রকৌশলী সালেপোর তার বিস্তারিত শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, ফিউজিল্যাজের সেকশনগুলোতে ছোট ফাঁকগুলো বন্ধে পাতলা ধাতব পাত (শিম) লাগানোর আগে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বোয়িং। ৭৮৭ উড়োজাহাজগুলো যে মিশ্র উপাদান (কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল) দিয়ে তৈরি, সেগুলো এ ধরনের বল প্রয়োগের ফলে দুর্বল হয়ে যায় এবং এগুলো দেখে শনাক্ত করা যায় না।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বোয়িং বলেছে, ৭৮৭ উড়োজাহাজের কাঠামোগত ক্রুটি নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। বোয়িংয়ের একজন নির্বাহী বলেছেন, এর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের বেশি সময় ধরে মডেলটি এক লাখ ৬৫ হাজার ফ্লাইট সাইকেল স্ট্রেস টে
কথা বলার নির্দেশ মন্ত্রীর
বিমানের বহরে থাকা ছয়টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার হল-আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাংচিল, রাজহংস, সোনরতরী ও অচিনপাখি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নতুন কেনা এসব উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হয়। এগুলো দিয়ে ইউরোপ ও কানাডায় দূরপাল্লার ফ্লাইটগুলো চালাচ্ছে বিমান।
ফোর্বসের ২০২৩ সালের ১৯ মার্চের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী এক হাজার ছয়শটির বেশি ড্রিমলাইনার সরবরাহ অথবা তৈরির প্রক্রিয়ায় (অন অর্ডার) রয়েছে। একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজের মূল্য ২৩৯ মিলিয়ন ডলার।
ড্রিমলাইনারের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে শঙ্কা তৈরির পর বিমানমন্ত্রী ফারুক খান অসুস্থ অবস্থাতেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এ নিয়ে যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে দ্রুত কথা বলার নির্দেশ দেন।
বিমানের একজন কর্মকর্তা বলছেন, বহরে থাকা ড্রিমলাইনারগুলোতে এখন পর্যন্ত জটিল কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা যায়নি। তবে গত ২০ জানুয়ারি সৌদি আরবের পথে রওনা হওয়ার পর একটি ড্রিমলাইনারের ককপিটের কাচে (উইন্ডশিল্ড) ফাটল দেখা দেওয়ায় ২ ঘণ্টা বাদে ২৯৭ আরোহী নিয়ে তা শাহজালাল বিমানবন্দরে ফিরে আসে।
বিষয়টি নিয়ে পরদিন বিমানের প্রকৌশল ও উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এয়ারক্রাফটটি ওড়ার পর আকাশে উইনশিল্ডে ক্র্যাক দেখা দেয়। চার বছরের মাথায় সাধারণত এমন ঘটনা হওয়ার কথা না। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, এটা ম্যানুফাকচারিং ফল্ট, না অন্য কোনো কারণে হয়েছে- সেটাও আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা চলছে।”
উইন্ডশিল্ডে ফাটল কি এভিয়েশন খাতের সাধারণ ঘটনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “খুব যে কমন তা বলব না। এর আগেও আমাদের একটি বোয়িং ৭৮৭ এর উইন্ডশিল্ডে ক্র্যাক হয়েছিল। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।”








