ইসলাম ধর্মে তালাককে অপছন্দনীয় বলা হলেও তাকে ধর্মীয়ভাবে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যখন স্বামী-স্ত্রীর পক্ষে আর কোনোভাবেই একত্রে থাকা সম্ভব নয় তখন তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্বামী বা স্ত্রী উভয়ে তালাক দিতে পারেন। যদিও স্ত্রীর তালাক দেওয়ার ক্ষমতাকে শর্তযুক্ত রাখা হয়েছে। এই তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের ফলে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় ওই দম্পতির ঘরে কোনো সন্তান থাকলে সে। বিশেষ করে সন্তানের হেফাজত বা রক্ষণাবেক্ষণ, খরপোষ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এসব জটিলতা নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতে দ্বারস্থ হতে হয় অনেককে।
অভিভাবকত্ব কার:
অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ অনুযায়ী বাবা হচ্ছে সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। তবে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে শিশুর লালন-পালনের স্বার্থে মা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিশু সন্তানকে জিম্মায় রাখার আইনগত অধিকারী। যদিও ওই সময়েও ভরণপোষণ বাবাকেই দিতে হবে।
সন্তানের স্বাভাবিক জিম্মাদার কে:
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে স্বাভাবিকভাবে ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে সাত বছর এবং মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত সন্তান মায়ের জিম্মায় বা রক্ষণাবেক্ষণে থাকবে। এক্ষেত্রে বাবা আইনগত অভিভাবক হলেও মা হচ্ছে সন্তানের হেফাজতকারী বা জিম্মাদার। তবে এ সময়েও সন্তানের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের অধিকার বাবার থাকবে। এই সময়ের পর সন্তানদের তার বাবা চাইলে নিয়ে যেতে পারে। নির্দিষ্ট এই সময়ের পরও যদি মা সন্তানকে নিজের জিম্মায় রাখতে চান, তখন আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
কোনো আদালতে যাবেন:
পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ৫ ধারার বিধান মোতাবেক শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান সম্পর্কিত যেকোনো মোকদ্দমা গ্রহণ, বিচার এবং নিষ্পত্তির এখতিয়ার পারিবারিক আদালতের। এ ধরনের মামলায় আদালত সন্তানের কল্যাণের জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, সেই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এক্ষত্রে আর্থিক স্বচ্ছলতা, সন্তান লালন-পালনের জন্য বাবার পরিবারে কেউ আছে কি না, মাদকাসক্ত কি না এসব বিষয়ও বিবেচনা করে থাকেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় সম্মত হলে দুইজনের মধ্যে ভাগ করে হেফাজত দেওয়া হয়ে থাকে। হয়তো সপ্তাহে দুইদিন বাবার কাছে এবং বাকি পাঁচদিন মায়ের কাছে থাকলো, এভাবেও দেওয়া হয়। তবে যার হেফাজতেই থাকুক না কেন অপরপক্ষের সন্তানকে দেখার সময় কাটানোর সুযোগ আদালত দিয়ে থাকে। সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হলেও আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়।
সন্তানের মতামত কি গ্রহণ করা হয়:
হেফাজত বা জিম্মাদারি দেওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের মতামতের গুরুত্ব সবসময়ই থাকে। এক্ষেত্রে আদালত শিশুর মতামতও গ্রহণ করে থাকে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, যার হেফাজতে আছে সে সন্তানকে প্রভাবিত করে বা ভয় দেখিয়ে মতামত নিতে পারে। তাই সন্তানের মতামত নেওয়ার পরও আদালত সেটি পর্যবেক্ষণ করেন। তাই মতামত বিবেচনার বিষয় হলেও শুধু শিশু সন্তানের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই জিম্মাদারি দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে শিশু কার হেফাজতে থাকলে প্রকৃতপক্ষে তার অধিক কল্যাণ হবে আদালত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেন। যেমন ভরণপোষণ বা লালন-পালনের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলোও এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়।