মহান বিজয় দিবস আজ

১৯৭১ সালের এদিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম হানাদার মুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।
বাঙালি জাতি তার অধিকার আদায়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় জাতি। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তানের এই শোষণ বঞ্চনা আর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি সোচ্চার হতে থাকে এবং ধাপে ধাপে পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। বাঙালির এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির এই আন্দোলনকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামে বাঙালিদের হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠে। এরপর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার ঘোষণায় সারা দিয়ে সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মী, পেশাজীবী মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নামে এবং জীবন দেয়। জীবনের নিশ্চিত ঝুঁকি নিয়ে বাংলার দামাল ছেলে, মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির সাহসিকতার কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালির বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস উদযাপন করেন।