দেশের আইসিটি খাতের যাত্রা শুরু গত শতকের আশির দশকের শেষ ভাগে। পরে নব্বইয়ের দশকে আমরা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করি। বেসিসের শুরুটাও তখনই, ২৭ বছর আগে। এই সময়ে আমরা অনেক কিছুতে এগিয়েছি। আবার হওয়ার মতো এমন অনেক কিছু ছিল, যা হয়নি। আমরা এখন দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো রফতানি করছি। স্থানীয় বাজারও প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো, যদিও অনেক বিদেশি সফটওয়্যার আসছে। রফতানি বা দেশীয় বাজার আরও বড় হওয়ার কথা ছিল। কয়েকটি কারণে হয়নি। এর প্রধান কারণ, দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি। আমাদের প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ লোকজন হয়তো নেতৃত্বে নেই। সত্যিকার অর্থে প্রযুক্তি জেনেবুঝে কাজ করেন, এমন মানুষ হয়তো নেতৃত্বে আসছে না। ফলে আমরা যে গতিতে এগুতে চাইছি, সেটি পারছি না।
এর আরেকটি কারণ, আমাদের দক্ষ জনবল নেই। এটি তৈরির জন্য যে আমরা পদক্ষেপ নেব, সেটিও কিন্তু আমরা করিনি। শুধু আইসিটির ক্ষেত্রে যে এমন, তা নয়। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। জাতীয় পর্যায়েও দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে আমরা পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিইনি। এটি আরও ২০ বছর আগে করা উচিত ছিল। ২০ বছর আগে যদি আমরা করতাম, তার সুফল এখন আমরা নিতে পারতাম। ভারত সেটা করেছে। ষাটের দশকে তারা আইআইটি করেছে। তার সুফল তারা ২০০০ সালে নিয়েছে। এই কাজগুলো আমরা করতে পারিনি। কোনো সময় নষ্ট না করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেই পদক্ষেপ যদি এখনো নিতে না পারি, তাহলে কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারব না।
ফটোশুট ও ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে, নানা রকম প্রমোশনাল ভিডিও হচ্ছে। যেহেতু প্রযুক্তি এখন খুব সুলভ, এগুলো করাটা সহজ হয়ে গেছে। ১০/১৫ বছর আগে আমরা যখন নির্বাচন করেছি, তখন আমরা ফটোশুট করেছি। কিন্তু এত ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারিনি। প্রযুক্তি এত হাতে হাতে ছিল না। এখন প্রযুক্তি সুলভ বলেই সেগুলো হচ্ছে।
তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্যানেল। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্যানেল পদ্ধতির বিপক্ষে। আমি এটা পছন্দ করি না। তার প্রধান কারণ, যখনই প্যানেল হয়ে যায়, দেখা যায় দুটি বা তিনটি প্যানেল— যে ভেদাভেদ বা রেষারেষি হয়, সেটা নির্বাচনের পরেও রয়ে যায়। মুখে যতই বলি না কেন নির্বাচনের পরে সবাই এক, প্রকৃতপক্ষে সেটি হয় না। মনের মধ্যে দলাদলির ব্যাপারটা রয়ে যায়। এ কারণে প্যানেল পদ্ধতির বিপক্ষে আমি।
এমন যদি হতো, সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদে আলাদা আলাদা নির্বাচন, তাহলে হয়তো প্যানেল হতো না। আবার প্যানেলের পক্ষেও কিন্তু যুক্তি আছে। আমি যদি একই রকম মানুষদের সঙ্গে বোর্ড গঠন করতে না পারি, তাহলে সেই বোর্ড রান করবে না। কারণ আমার চিন্তাধারা একরকম, আরেকজনের চিন্তাধারা আরেকরকম। তারপরও আমার মনে হয়, এই যে দলাদলি-রেষারেষি, প্যানেল পদ্ধতিতে এটি আরও বেড়ে যায়।
যে বা যারা নেতৃত্বে থাকবে, তাদের কিন্তু এই খাতের লোক হতে হবে। এই শিল্পে প্রত্যক্ষ সংযোগ থঅকতে হবে। না হলে কিন্তু তিনি সমস্যাগুলো বুঝতে পারবেন না, অনুভব করতে পারবেন না। সমস্যা যাদের হচ্ছে, তাদের যে কষ্ট হচ্ছে, কষ্টটা অনুভব করতে পারবেন না। তাই সেই নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে নেতৃত্ব এই খাতকে ভেতর থেকে জানে। আমাদের প্রযুক্তি জানা মানুষ যেমন প্রয়োজন, তেমনি ভালো ব্যবস্থাপনা বুঝে নেতৃত্ব দিতে পারে, তেমন মানুষও প্রয়োজন। বেসিসে সামনে যারা আসবে, ভবিষ্যতে যারা আসবে তারা এভাবেই চিন্তাভাবনা করবে, এটাই প্রত্যাশা। ভোটাররাও যাদের ভোট দেবেন, তারা নেতৃত্বের গুণাবলি চিন্তাভাবনা করে যেন ভোট দেন।