নির্বাচনকালে নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইল যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশঃ

Spread the love

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সরকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করবে এবং কীভাবে নিরাপত্তা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে– তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের ভূমিকাও জানতে চায় তারা। ঢাকা-ওয়াশিংটন নবম নিরাপত্তা সংলাপে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ওই সংলাপ হয়। ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিকবিষয়ক আঞ্চলিক নিরাপত্তার ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা কে রেসনিক সংলাপে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। সংলাপ শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মিরা কে রেসনিক।

একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় যেন কোনো সহিংসতা না হয়। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার কী পরিকল্পনা নিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে ওয়াশিংটন।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। তবে কীভাবে তা করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

সংলাপ শেষে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবাধিকার বিষয়ে যেসব বাধ্যবাধকতা রয়েছে, বাংলাদেশ সেগুলো পূরণ করছে। সংলাপে বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তারা নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশ অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী এ কথা অনেকবার বলেছেন। তিনি বিদেশিদেরও বলেছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এটি নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি ইসি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানেও যদি সাহায্য লাগে, যুক্তরাষ্ট্র করতে চেয়েছে। তবে রাজনৈতিক দল কে কী ভাবছে তা তো আমরা বলতে পারব না।’ তবে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাদে, মানবাধিকার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরাসরি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, যেহেতু এটি প্রতিরক্ষা সংলাপের আলোচনার বিষয় ছিল। তবে আমরা বলেছি, বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশ থেকে এ বিষয়ে আমরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি।’

র্যা বের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘র্যা বের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু আলোচনা করেছে। আমরা জানিয়েছি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে সেগুলোর উত্তর আমরা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিই। আমাদের দেশে বিচারহীনতার কোনো সুযোগ রাখি না। র‌্যাব-পুলিশ প্রত্যেকেরই আচরণবিধি রয়েছে। একটা গুলি খরচ করলেও জবাবদিহি করতে হয়। সব অভিযোগ বা দুর্ঘটনায় যে সরকার জড়িত থাকে এমন নয়। যেমন, গাজীপুরে এক শ্রমিক নেতা মারা গেছেন। সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই। শেষ পর্যন্ত আমাদেরই জবাবদিহি করতে হয়।’ র্যা বের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিকে অনেক মিল রয়েছে। সেখানে যাতে মুক্তভাবে জাহাজ চলাচল করতে পারে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার যাতে পূর্ণ ব্যবহার হয়– এগুলোর বিষয়ে দুই দেশ একমত। তারাও চান না, কোনো সুনির্দিষ্ট দেশ আধিপত্য বিস্তার করুক বা মুক্ত চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক।’ যুক্তরাষ্ট্র একক আধিপত্য বলতে চীনের কথা বলেছে কিনা– জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি পররাষ্ট্র সচিব।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘র্যা বের ওপরে আপাতত তাদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আমাদের পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ অন্য বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে তাদের সহায়তা যেন অব্যাহত থাকে। আর্মি টু আর্মি জয়েন্ট এক্সারসাইজ আছে, সেগুলো অব্যাহত থাকবে এবং আগামীতে আরও জোরদার হবে।’

সংলাপে রোহিঙ্গা ইস্যুতে হালনাগাদ তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা হয়। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই সংকটের সমাধান চাই। মানবিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে কীভাবে ফেরত পাঠানো যায় সে বিষয়েও আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। তবে, রাখাইনে এই মুহূর্তে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আলাদা কোনো মনোভাব নেই, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হলে এবং স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে প্রত্যাবাসনে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই বৈঠক হবে। বৈঠকে তিস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু রয়েছে। সবগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। কানেকটিভিটি ও তিস্তার পানির বিষয়ে কথা হবে। জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যু নিয়েই আলাপ হবে। দুই দেশের মধ্যে অনেক প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি আলোচনা হবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। খাদ্য নিরাপত্তা, নিষেধাজ্ঞা, কাউন্টার স্যাংশন নিয়েও আলোচনা হবে।

image_pdfimage_print

সর্বশেষ

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংলাপ শুরু

0
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদারে ১২তম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সংলাপ শুরু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া সংলাপ আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার...

একটি অর্থবহ নির্বাচন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: রিজওয়ানা

0
রাজনৈতিক সহিংসতার শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘একটি...

হজ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি করলে আইনের আওতায় নিয়ে আসব: ধর্ম উপদেষ্টা

0
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আমরা হজকে এবাদত হিসেবে গ্রহণ করেছি। এখানে কেউ দুর্নীতি করলে আমরা তাকে আইনের...

ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী?

0
ইতালি থেকে ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ইতালির প্রতিষ্ঠান লিওনার্দো এসপিএর সঙ্গে একটি সম্মতিপত্র সই করেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)...

১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর চালুর সিদ্ধান্তে অনড় সরকার

0
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ব্যবহার রোধ করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা রয়েছে।...