দিপালীদের সংসারে জনম আঁধার

প্রকাশঃ

Spread the love

রোজগারের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘোরেন তাঁরা। শিঙা লাগানো, দাঁতের পোকা বের করা, শিশুদের নানান রোগের ‘চিকিৎসা’সহ তাবিজ দেন। শরীরে বিষব্যথা থাকলে মহিষের কাটা শিঙের মোটা অংশ দিয়ে সারিয়ে তোলেন। এভাবে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার নামে সামান্য আয় হয় তাঁদের। তবে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা আয়ে ঠিকমতো ঘোরে না সংসারের চাকা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকায় বেদেপল্লিতে পাঁচ বছর আগে গড়ে ওঠে ১১ পরিবারের অস্থায়ী বেদেপল্লি। আদি বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে। পেটের টানে এভাবে ঘুরে ঘুরে রোজগার করেন পল্লির সদস্যরা। সেখানে শিশু রয়েছে ২৫ জনের মতো। এর মধ্যে স্কুলে যাওয়ার উপযোগী অন্তত ১৫ জন থাকলেও চারজন যায় স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে। অন্যদের সারাদিন ঘুরেফিরে কিংবা খেলা ও পাতা কুড়িয়ে দিন কেটে যায়।

খিলপাড়া এলাকায় সৈয়দ মিয়া নামে এক ব্যক্তির পতিত জায়গায় বিনা ভাড়ায় ১১টি ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে পরিবারগুলো। শনিবার সেখানে গিয়ে জানা যায়, অনেকে রোজগারের সন্ধানে গ্রামে গেছেন। নারীদের কেউ রান্না করছেন, কেউবা সন্তানকে গোসল করিয়ে দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ রোদ পোহাচ্ছিলেন।
কথা হয় বেদেপল্লির সর্দার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী দিপালীর সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবারগুলো সর্বশেষ সিলেট থেকে এসেছে। একেকটি পরিবারে সদস্য ৫ থেকে ১০ জন। চার শিশু ব্র্যাকের স্কুলে গেলেও অন্যরা শিক্ষা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সমন্বয়ক মো. শফিকুল ইসলাম। অচিরেই চালু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দিপালী বলছিলেন, তাঁর স্বামী দুটি বিয়ে করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রী। আছে চার ছেলে। শিশুদের লেখাপড়া করানোর ক্ষমতা নেই। তারাও বড় হয়ে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখবে। দ্বিতীয় স্ত্রী শেফালী জানান, তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে। সব মিলিয়ে সর্দার জসিমের পরিবারের সদস্য ১১ জন। তাঁরা জানান, তাঁরা সাপ খেলা দেখান না। তার পরও তাঁদের সবাই বেদে বলে ডাকেন।
পল্লির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের কোনো সম্পদ নেই। এ কারণে ঘুরে ঘুরে জীবন ধারণ করতে হয়। সরকার নজর দিলে তাঁরা কষ্ট থেকে রক্ষা পেতেন। কয়েক দিন আগে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি প্রতিটি পরিবারকে একটি করে কম্বল দিয়ে গেছেন। ৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন সবার জন্য।
পল্লির সর্দার জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি একজন বাউলশিল্পী। মাসে এক বা দুটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে পারেন। একটি অনুষ্ঠানে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ভাগে থাকে। ভাসমান জীবনের কারণে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় ভোটার হয়েছেন। আবার দু’জন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাঁটাবাড়িয়া এলাকার ভোটার। কেউ কেউ নিজ এলাকা শেরপুরের ঝিনাইগাতির ভোটার হয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, ঝরে পড়া ও বেদেপল্লির মতো ভাসমান পরিবারের শিশুদের জন্য সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিশুকল্যাণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বইসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। বেদেপল্লির শিশুরা এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিতে পারে।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বলেন, বেদেপল্লিতে বিভিন্ন সময় খাদ্য ও বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হয়। ঈদের আগে ভিজিএফের চাল পায়। সেমাই, চিনি ও দুধ দেওয়া হয়। কম্বলও পাচ্ছেন তাঁরা।

image_pdfimage_print

সর্বশেষ

ইসরায়েলি অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চায় ৫২ দেশ

0
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৫২টি দেশ ও দুটি সংস্থা। জাতিসংঘে চিঠিটি জমা দিয়েছে তুরস্ক। জিবুতিতে তুরস্ক-আফ্রিকা পার্টনারশিপ শীর্ষ...

ভালোবাসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে জাপানের কিশোর-কিশোরীরা

0
ভালোবাসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে জাপানের কিশোর-কিশোরীরা। এতে জন্মহার কমে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি জাপান সোসাইটি ১২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি...

নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে রাশিয়া, অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের

0
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়াসহ ‘প্রতিপক্ষ’ দেশগুলো হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার তারা বলেছে, ওই দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা...

আমি খুব আত্মবিশ্বাসী, ভোট দিয়ে বললেন ট্রাম্প

0
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট দিয়ে তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের...

ট্রাম্প ১৬২ ও কমলা পেয়েছেন ৬২ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট

0
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর ধীরে ধীরে ফলাফল আসতে শুরু করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো অঙ্গরাজ্য-ভিত্তিক ফলাফল ঘোষণা করছে। ফলাফলের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড...