শীতে রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন

প্রকাশঃ

Spread the love

শীতকালে রোগ বালাই বেড়ে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর জড়োশড়ো হয়ে থাকে। রক্ত চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া শীতে সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপও বাড়ে। এ ব্যাধির সঙ্গে সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পুরোনো কিছু শ্বাসযন্ত্রের রোগও।

শীতকালীন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন গ্রীনলাইফ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক।

সাধারণ সর্দি-কাশি প্রায় সারা বছরই কম-বেশি হলেও এ সময় এর প্রকোপ একটু বেশিই থাকে। বিভিন্ন রকম ভাইরাস (প্রায় ২০০ রকম) দিয়ে এ রোগ হয়। আক্রান্ত রোগীদের নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, শরীর ব্যথা এবং হাঁচি-কাশি ও অল্প জ্বর থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ওষুধের সাহায্য ছাড়াই ২-৪ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পরিমিত পরিমাণে তরল খাবার, কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া, মধু খাওয়া এবং ঠান্ডা পানি ও খাবার পরিহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে শিশু, বৃদ্ধ এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিরোধের জন্য বারবার হাত ধোয়া, নাকে-মুখে হাত না দেওয়া, আক্রান্ত পরিবার সদস্যের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করা উচিত।

ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা

সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে তীব্রতর উপসর্গ নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে। সাধারণ সর্দি-কাশির অতিরিক্ত উপসর্গ হিসাবে বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে নিঃসরিত লালার মাধ্যমে ছড়ায় বলে বদ্ধ জায়গায় এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এ ভাইরাস বছরে বছরে তার ধরন বদলায় দেখে এর বিরুদ্ধে প্রচলিত টিকা প্রতি বছরই নিতে হয়। শিশু, বয়স্ক এবং বিভিন্ন জটিল রোগাক্রান্ত ব্যক্তির এ টিকা নেওয়া উচিত। সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ উপসর্গের উপশম হলেও কাশি ভালো হতে অনেক সময় দুসপ্তাহের বেশিও লেগে যেতে পারে। উপসর্গের তীব্রতা বেশি হলে অথবা আগে থেকেই জটিল রোগ আছে এমন ব্যক্তি, শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সব চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এক্ষেত্রে অনেক সময় এন্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।

ব্রংকাইটিস

সাধারণ সর্দি-কাশির মতো শুরু হয়। পরে শুকনো কাশির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ কফ তৈরি হয়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ ও চিঁ চিঁ আওয়াজ, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। ধূমপায়ীদের এ রোগ বেশি হতে পারে। এ ছাড়াও যাদের অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস, টনসিল বা এডেনয়েডের সমস্যা থাকে তারাও আক্রান্ত হতে পারে।

দুই সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে গেলেও কাশি কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ নিউমোনিয়ার উপসর্গ হিসাবে প্রকাশ করে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া উচিত।

নিউমোনিয়া

এক তৃতীয়াংশ নিউমোনিয়া ভাইরাস দিয়ে হলেও বেশিরভাগ নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে। এ রোগ হলে ঠান্ডা ও কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বরের সঙ্গে কফযুক্ত কাশি, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তি, দ্রুত পালস, প্রেসার কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা হতে পারে।

অনেক সময় নিউমোনিয়াতে জীবন সংশয়ও হতে পারে। নিউমোনিয়া সন্দেহ করলে অতি সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক নিউমোনিয়ার ধরন বুঝে বাসায় রেখে অথবা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করবেন। এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু টিকা আছে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখলে এর আক্রমণ থেকে কিছুটা নিস্তার পাওয়া যেতে পারে।

রাইনাইটিস ও সাইনোসাইটিস

এক্ষেত্রে নাক বন্ধ থাকা, অল্পবিস্তর শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো এন্টিবায়োটিক লাগে না। কিছু অ্যালার্জির ওষুধ, ন্যাজাল স্প্রে এবং গরম পানির ভাপেই আরাম পাওয়া যায়।

কানের ইনফেকশন

কান ব্যথা, নাক বন্ধ, মাথা ঘোরানো, কান দিয়ে পুঁজ পড়া ইত্যাদি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণযন্ত্রের স্থায়ী সমস্যা হয়ে যেতে পারে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা

এটা যদিও সারা বছরেরই রোগ, তবে শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া এবং ঠান্ডা বাতাস ও বিভিন্ন অ্যালার্জির জন্য এ সময় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যাদের আগে থেকেই অ্যাজমা আছে, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার ব্যবহার করা। মনে রাখতে হবে অ্যাজমায় ইনহেলার সবচেয়ে আধুনিক এবং শুরুর দিকের চিকিৎসা যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই বললেই চলে। যাদের শুধু ইনহেলারে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ হয় না, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মুখে খাবার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ এখানে অত্যাবশ্যক। সেই সঙ্গে পরিষ্কার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।

বাত ও ব্যথা

শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের বাত ও ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই যাদের আগে থেকেই সমস্যা আছে, তারা নিয়ম মেনে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ব্যায়াম করবেন। ব্যথার ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। চিকিৎসক আপনার ব্যথার প্রকৃতি, হার্ট, কিডনি, লিভার ও স্টোমাকের অবস্থা বুঝে ব্যথার ওষুধ দেবেন।

image_pdfimage_print

সর্বশেষ

মৌরতা‌নিয়ার ২১০ হজযাত্রীসহ বিমান বিধ্বস্তের বিষয়ে যা জানা গেল

0
মৌরতা‌নিয়ার ২১০ হজযাত্রীকে বহনকারী একটি বিমান লোহিত সাগরের উপকূলে বিধ্বস্ত হওয়ার খবরটি গুজব বলে দাবি করেছে মৌরতা‌নিয়ান এয়ারলাইন্স। মঙ্গলবার (২৭ মে) হঠাৎ বিমান বিধ্বস্তের খবর...

আসছে ৪৮তম বিশেষ বিসিএস, পরীক্ষা হবে ৩০০ নম্বরের

0
৪৮তম বিশেষ বিসিএসে মোট ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। আর মৌখিক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। মঙ্গলবার বিসিএস...

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে স্কুল ভ্যানচালক আটক

0
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে রায়হান (৪২) নামে স্কুলের ভ্যানচালককে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয়রা অভিযুক্তকে আটক করে খবর দিলে...

‘নকল ঐশ্বরিয়া’ বলে কটাক্ষ, চটেছেন উর্বশী

0
এবার ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হয়েছে সেই ২৪ মে। কিন্তু সমালোচনা যেন ছাড়ছে না বলিউডের জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী উর্বশী রাউতেলার। বছর দুয়েক ধরে কান...

ব্লাসফেমা ব্লগের প্রতিবাদে গ্রেফতারের ঘোষণা

0
সম্প্রতি ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা ইসলামবিরোধী সিলেটি ব্লগার মোসাম্মত আফসানা আহমেদ বুসরা এবং তার উস্কানিমূলক ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীরা...